Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

শেবাচিম হাসপাতালে রোগীদের আহাজারি

Icon

অনিকেত মাসুদ, বরিশাল

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শেবাচিম হাসপাতালে রোগীদের আহাজারি

বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের ১৪ লিফটের অর্ধেকই অচল থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। অচল লিফটের দরজাতেই আহাজারি করছেন জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা মুমূর্ষু রোগী। অনেক মুমূর্ষু রোগীকে কোলে নিয়ে লিফটের দরজায় দীর্ঘ অপেক্ষায় দেখা গেছে একাধিক স্বজনকে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হাসপাতালের লিফটগুলো বিকল হয়ে আছে। তবে গণপূর্ত অধিদপ্তর জানিয়েছে, লিফটম্যান সংকটের কারণে লিফটগুলো নিয়মিত চালানো যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাতে হাসপাতালের ১৪ লিফটের অর্ধেক অচল রয়েছে। যে লিফটগুলো সচল রয়েছে তাতেও রোগীদের খাবার ও জরুরি ওষুধ বহন করায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ফলে স্ট্রোকসহ গুরুতর অসুস্থরা দ্রুত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তাদের স্বজনরাও। সম্প্রতি চালু হওয়া মেডিসিন ভবনের দুটো লিফটের একটিও অচল। ফলে লিফটের দরজায় মুমূর্ষূ রোগীদের ট্রলিতে শুয়ে দীর্ঘ অপেক্ষায় দেখা গেছে। অন্যদিকে হাসপাতালের পুরোনো ভবনের জরুরি বিভাগের গেটে রোগীদের জন্য দুটো বড় লিফটের একটা চললেও অন্যটি অচল। একটি চলমান থাকলেও প্রায়ই মাঝপথে আটকে যায়।

এছাড়া ওষুধ বিতরণ কক্ষের পাশে রোগীদের ব্যবহৃত দুটো লিফটের একটি বিকল। যে লিফটটি সচল রয়েছে তাতে রোগীদের ওষুধ ও খাবারের ট্রলি বহনের পাশাপাশি অসুস্থদের নেওয়া হয়। এই লিফট রোগীদের জন্য বরাদ্দ হলেও হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে তাতে এক প্রকার যুদ্ধ করে উঠতে হয়। একই স্থানে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্টাফদের ব্যবহৃত দুটো ছোট লিফটের একটি অচল রয়েছে। ফলে একটি মাত্র সংকীর্ণ লিফটে ওয়ার্ডে যেতে চিকিৎসকদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় করতে হচ্ছে। এছাড়া পাশের আরও ছোট দুটি লিফট পুরোপুরি অচল। হাসপাতালের আউটডোরের কাউন্টারের সামনে একটি বড় লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় প্রায়ই দুর্ভোগে পরেন সেবা প্রত্যাশীরা।

নতুন মেডিসিন ভবনে স্ট্রোকের রোগী নিয়ে আসা নগরীর বাসিন্দা আলতাফ হোসেন জানান, ঈদের আগে থেকে দুটি লিফটের একটি বিকল রয়েছে। জরুরি মুহূর্তেও এই লিফট চালানো হয় না। পুরো হাসপাতালজুড়ে অব্যবস্থাপনা। কেউ কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। একজন রোগীকে নিচ তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় তুলতে আধঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে হাসপাতালে এসে সেবার পরিবর্তে আরও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

বরগুনা থেকে আসা রোগীর স্বজন মিজানুর রহমান জানান, একটি লিফটে মাত্র দুটো ট্রলিতে দুজন রোগী ওপরে উঠতে পারে। ফলে দীর্ঘ সময় রোগীকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েও লিফটে তুলতে পারিনি। রোগীর কান্নায় সব কিছু এলোমেলো লাগছে। এই পরিবেশে রোগী সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে দুর্ভোগে পড়েছে। এত দূর থেকে হাসপাতালে পৌঁছেও লিফটের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা খুবই কষ্টের।

পুরোনো ভবনের লিফটের দরজায় অপেক্ষমাণ রোগীর স্বজন মোজাম্মেল হক জানান, নির্ধারিত ওয়ার্ডে যাওয়ার জন্য লিফটের দরজায় এসে আটকে আছি। দুপুর বেলা হওয়ায় রোগীদের খাবার ও ওষুধ ওঠানো-নামানো হচ্ছে। পাশের একটি লিফটও অচল। হাসপাতালে প্রবেশের পরপরই চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছি।

শেবাচিম হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এসএম মনিরুজ্জামান জানান, ‘পুরাতন ভবনের লিফট ৫৫ বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নতুন স্থাপন করা হয়েছে। লিফটের বিষয়টি পুরোপুরি দেখভাল করে গণপূর্ত বিভাগ। আমাদের এই সমস্যার কথা অনেকবার তাদের জানিয়েছি। তারা বলে, মেরামত করতেছি। এই সমস্যা সমাধানে ধীরগতি দেখা দেখা যাচ্ছে।’

বরিশাল গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী আবু জিহাদ বলেন, ‘লিফটে ত্রুটির কথা কেউ আমাদের জানায়নি। ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করব। হাসপাতালে পুরোনো লিফট আছে মাত্র ৫টি। নতুন-পুরোনো মিলে ১৪টি লিফট রয়েছে এই হাসপাতালে। তবে জনবল সংকটের কারণে ১৭-১৮ জন লিফটম্যান দিয়ে তিন শিফটে রোস্টার করে চালানো হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম