Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

এবার চাঁদাবাজি নেই পশুবাহী ট্রাকে

Icon

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এবার চাঁদাবাজি নেই পশুবাহী ট্রাকে

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কুরবানির পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত ঈদেও বেপরোয়া চাঁদাবাজি হয়েছে। ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়েছে গরু ব্যবসায়ীদের। কোথাও মোটরশ্রমিক, কোথাও ট্রাকশ্রমিক, আবার কোথাও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা চাঁদা উঠাত। হাট ইজারাদারের নামেও তোলা হতো টাকা। চাঁদাবাজি হতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নামেও। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। দু-এক জায়গা ছাড়া দেশের কোথাও থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ এখনো আসেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯-এর ভয়ে’ চাঁদাবাজরা রাস্তায় নামছে না। তবে এবার এক হাটের গরু জোর করে অন্য হাটে নামানোর অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার বিকালে যুগান্তরকে, এবার আমরা নির্দেশনা দিয়েছিলাম, কোনো অবস্থাতেই পশুবাহী গাড়ি রাস্তায় দাঁড় করানো যাবে না। যদি কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে জেলার এসপিকে জানাতে হবে। এসপিই যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সেই নির্দেশনাই ফলো করা হচ্ছে। এ কারণেই এবার কোথাও কোনো চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই।

ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোস্তম আলী খান যুগান্তরকে বলেন, এ বছর কোনো পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। তবে এক হাটের গরু রাস্তা দিয়ে নেওয়ার সময় জোর করে অন্য হাটে নামানোর একাধিক অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। যেসব স্থান থেকে অভিযোগ পেয়েছি সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর, বগুড়ার ধাপের হাট ও রংপুরের বদরগঞ্জের যমুনাশ্বরী হাট। আগের বছরের চাঁদাবাজির তথ্য তুলে ধরে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হাসানুল কবির বৃহস্পতিবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, রংপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে পশুবাহী ট্রাককে ১০-১৩ জায়গায় চাঁদা দিতে হতো। যারা চাঁদা নিত তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক লোক। ঢাকার প্রবেশ মুখ আমিনবাজারে বড় সমস্যা ছিল জ্যাকেট বাহিনী। তারা জোর করে হাটে গরুর গাড়ি ঢোকাতে বাধ্য করত।

এবার এখন পর্যন্ত এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে নড়াইলের দুটি জায়গা থেকে কিছু অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। সত্যতা পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাব।

জানা গেছে, এবার সারা দেশে কুরবানির পশুর হাট বসবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। এর মধ্যে হাইওয়ে পুলিশের অধীনস্থ মহাসড়ক এলাকায় হাটের সংখ্যা ২১৩টি। মহাসড়কের ১০ মিটারের মধ্যে এসব হাট অবস্থিত। এগুলোর মধ্যে অস্থায়ী হাট ১১২টি এবং স্থায়ী হাট ১০১টি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, অন্যবার আমাদের কাছে পশুবাহী ট্রাকে চাঁদবাজির বহু অভিযোগ আসত। কিন্তু এবার এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। যেহেতু অভিযোগ আসছে না, তাই মনে হচ্ছে চাঁদাবাজি হচ্ছে না। তিনি বলেন, রাস্তায় কোথাও কেউ চাঁদা দাবি করলে স্পট থেকে ৯৯৯-এ ফোন দেওয়ার নির্দেশনা আছে। ৯৯৯-এর ভয়েই চাঁদাবাজরা রাস্তায় নামছে না।

গাজীপুর জেলা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী আব্দুর রশিদ বলেন, কুরবানির ঈদকে ঘিরে অন্যান্য বছর ব্যাপক চাঁদাবাজি হলেও এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এখনও কোথাও থেকে চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ পাইনি।

গাবতলী পশুর হাট ব্যাপারী সমিতির সভাপতি মো. মাইদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এখনো কোথাও কোনো ধরনের চাঁদবাজির তথ্য পাইনি। তবে অভিযোগ পাচ্ছি, কোথাও কোথাও গরুবাহী ট্রাক নির্দষ্ট গন্তব্যে যেতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পরশুদিন (মঙ্গলবার) গাবতলীতে এক কসাইয়ের গরুর ট্রাক আটকানো হয়েছিল। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিলে ট্রাকটি ছেড়ে দেওয়া হয়।

হাইওয়ে (কুমিল্লা অঞ্চল) পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলের ২২টি থানা-ফাঁড়ি এলাকায় ৬৬টি প্যাট্রোল টিমের পাশাপাশি রয়েছে ৩০টি কুইক রেসপন্স টিম। কাজ করছে দুটি গোয়েন্দা টিম। বিশেষ ইউনিফর্মে দায়িত্ব পালন করছেন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের শতাধিক প্রশিক্ষিত সদস্য। একটি পূর্ণাঙ্গ কন্ট্রোলরুমের পাশাপাশি রয়েছে ৫টি সাব কন্ট্রোলরুম। যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ১৭টি রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনায় হতাহতের সেবার জন্য আছে পর্যাপ্ত সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স। তিনি বলেন, ৮২১ কিমি. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে কোথাও কোনো সংগঠন বা চক্রকে চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হচ্ছে না। নির্দিষ্ট গন্তব্য ছাড়া কুরবানির পশুবাহী গাড়ি ভিন্ন কোনো জায়গায় নামাতে দেওয়া হচ্ছে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম