Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

বেগমগঞ্জে চিরনিদ্রায় শায়িত 

‘প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি সিরাজুল আলম খানকে’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি সিরাজুল আলম খানকে’

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সিরাজুল আলম খানকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হচ্ছে -যুগান্তর

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান। শনিবার বিকাল ৫টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে সাহেব বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুনের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে রাজনীতির রহস্য পুরুষ সিরাজুল আলম খানের প্রথম জানাজা ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এই জানাজায় বিএনপি, জাসদ, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাউকে দেখা যায়নি। জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সিরাজুল আলম খানের শুভানুধ্যায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন। 
এ সময় তারা বলেন, জাতি ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে যোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া উচিত ছিল সেটা তাকে দেওয়া হয়নি। 
জানাজায় অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আসম রব, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ, সাবেক ছাত্রনেতা শফি আহমেদ, জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, সাবেক আটর্নী জেনারেল এম কে রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করিম সিকদার, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সিরাজুল আলম খানের শুভানুধ্যায়ীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। 
জানাজা শেষে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং দলের পক্ষ থেকে মরহুমের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় মরদেহ নিয়ে স্বজনরা তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হন।
বায়তুল মোকাররমে সিরাজুল আলম খানের জানাজার আগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, তার ইচ্ছা, পরিবার, তার গঠিত দল জেএসডির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আলোচনা করেই আজকের সিদ্ধান্ত, যাতে কোনো বিতর্ক না হয়, জানাজা শেষ করে এখনই আমরা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করব। সেখানে মা ও বাবার কবরের পাশে উনাকে দাফন করা হবে। ব্যক্তিগত জীবনে সিরাজুল আলম খান কোনো সম্পত্তির লোভ লালসা করেন নাই-এ কথা বলার সময় কেঁদে ওঠেন আ স ম রব। 
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নামে একটা দেশ হবে, এটা যখন কেউ চিন্তা করেননি তখন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নিউক্লিয়াস গঠন করেছেন। সিরাজুল আলম খান নীরবে-নিভৃতে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব। সিরাজুল আলম খান অমর হয়ে থাকবেন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যাদের কথা আমাদের কখনোই ভুলে গেলে চলবে না, আজকে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের ভুলে যাওয়া হয়েছে। আজকে দেখেন, স্বাধীনযুদ্ধের সঙ্গে যারাই জড়িত ছিলেন, অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের কেউই সেভাবে সামনে আসছেন না। তাদের সেই মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, সর্বাধিনায়ক ওসমানী (স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী), স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে কাউকেই সেই মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্যজনক।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, জাতি ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে যে যোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া উচিত সেটা করা হয়নি। 
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি দেখলাম, রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে একটা সম্মান জানিয়ে সমস্ত দায়িত্ব শেষ করে দিল। অথচ সত্যি কথা হচ্ছে সিরাজুল আলম খান না থাকলে এই স্বাধীনতা কীভাবে আসত, তা নিয়ে গবেষণার দরকার আছে। তবে আমি মনে করি, সিরাজুল আলম খান ছোট হননি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশের স্বার্থের বাইরে সিরাজুল আলম খানের কাছে অন্য কোনে স্বার্থই বড় ছিল না। সে কারণে বাস্তবে বাংলাদেশ ও সিরাজুল আলম খান ছিলেন একই সত্ত্বা। আমরা যা হারিয়েছি এখন না বুঝলেও আগামী দিনগুলোতে তার শূন্যতা খুব বেশি অনুভূত হবে। 
বেগমগঞ্জে জানাজা : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত তার জানাজায় দোয়া চেয়ে বক্তব্য দেনন আসম রব, নাজমুল হক প্রধান, ডা. এবিএম জাফর উল্লা ও তার ছোট ভাই পেয়ারুল আলম খান এবং পারিবারিক আত্মীয় কবি ফরহাদ মজহার। এরপর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের শাড়িতে মুড়িয়ে মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল আলমের দাফনের আগে নোয়াখালী পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
এর আগে দুপুরে পৈতৃক ভিটায় সিরাজুল আলমের লাশ আনা হয়। সেখানে এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জানাজায় হাজারও মানুষ অংশ নেন। এ সময় প্রিয় নেতার লাশ দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। 
তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মো.শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
গত শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সিরাজুল আলম খান। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম