স্থাপনা-যন্ত্রপাতি সবই আছে নেই চিকিৎসাসেবা
জাফর আহমেদ, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম-যন্ত্রপাতি সবই আছে। কিন্তু স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না মানুষ। এছাড়া অযত্নে-অবহেলায় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা ও কেনা যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতালে পুরোপুরি চিকিৎসা সেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন টাঙ্গাইলবাসী। হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, জনবলের অভাবে হাসপাতালটি পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। চাহিদা অনুযায়ী জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পাশে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৫ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। ২০২২ সালের ২২ মার্চে হাসপাতাল ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেয় গণপূর্ত বিভাগ। এছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জামও কেনা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বছরের ২১ জুন বহির্বিভাগে মেডিসিন, শিশু, গাইনি, সার্জারি, চক্ষু, ডেন্টাল, বক্ষব্যাধি, নিউরোলজি, ইউরোলজি, মানসিক, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, ফিজিকাল মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি, নেফরোলজি, অর্থোপেডিক, অনকোলজি (ক্যানসার) সেবা চালু হয়। এছাড়া আলট্রাসনো, ইসিজি, সিটিস্ক্যান, এক্সরেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। এছাড়া গত বছর সেপ্টেম্বরে আন্তঃবিভাগে মেডিসিন বিভাগ চালু হয়। চক্ষু, নাক-কান-গলা, গাইনি, কার্ডিওলজি, অবস (গর্ভবতী), অর্থোপেডিক, পোস্ট অপারেটিভ, আইসিইউ, সিসিইউ, সার্জারি ওয়ার্ড চালু প্রক্রিয়াধীন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, জনবল সংকটে পুরোপুরি স্বাস্থ্য সেবা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন বিভাগে ১৬৫ জন নার্সের মধ্যে আছেন মাত্র ৩৯ জন। ৩৭৭ জন আউটসোর্সিং জনবলের মধ্যে ৯০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আয়া, সুইপার ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাব রয়েছে। এ কারণে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনের টাইলস খসে পড়ছে। দরজার হাতলও ভেঙে গেছে। দরজার কাঠের জোড়া ফাঁক হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ-নিুমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় দেওয়ালের টাইলস খুলে পড়ছে। তদারকির অভাবে লিফট ও আশপাশে দেওয়ালে পানের পিক ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রিলে মরিচা পড়ছে। বিছানার পাশে এবং শৌচাগারসহ বিভিন্ন কক্ষের সামনে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দুর্গন্ধে শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাসাইল উপজেলার কাউলজানি গ্রামের হালিম মিয়া বলেন, আমি চার দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। এ সময় কাউকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখিনি। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতাল নির্মাণ করছে। কিন্তু অযত্নে-অবহেলায় সব নষ্ট হচ্ছে। নারী ওয়ার্ডেও বিছানার পাশে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এখানকার শৌচাগারও ব্যবহারের অযোগ্য। সদর উপজেলার বাজিতপুর এলাকার সজল হোসেন বলেন, বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও আমরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুরোপুরি সেবা চালুর দাবি জানান তিনি।
শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, স্বাস্থ্য সেবা পুরোপুরি চালু করতে পর্যাপ্ত জনবলের প্রয়োজন। জনবলের জন্য বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। জনবল পেলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সহসভাপতি ও সংসদ-সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি সবই আছে। কিন্তু জনবলের কারণে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা কেউ দায়িত্ব পালন করেননি। এ কারণে সেবা পুরোপুরি চালু হয়নি।