Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

হজ মেডিকেল টিম গঠন নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ

Icon

হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হজ মেডিকেল টিম গঠন নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ

চলতি মৌসুমে হজ চিকিৎসক দলের তালিকা তৈরি নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একাধিকবার হজ টিমের সঙ্গে সৌদি আরব গিয়েছেন এমন অনেকে রয়েছেন তালিকায়। শুধু তাই নয়, এই টিমে এমন ব্যক্তিরা রয়েছেন যাদের পদ অনুযায়ী কোনো কাজ নেই। টিমের তালিকায় স্থান পেতে আর্থিক লেনদেনও হয়েছে। ফলে নতুন অনেকে আবেদন করে বাদ পড়েছেন। এই অনিয়ম তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ)। এতে বলা হয়ছে-মিথ্যা তথ্য, দুর্নীতি ও উৎকোচের বিনিময়ে হজযাত্রী স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা-২০১৮ অনুসরণ না করে একই ব্যক্তিকে দুই থেকে তিনবার হজ মেডিকেল টিমের সদস্য হিসাবে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুসারে হজ টিমে চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হবে ১ঃ৩। কিন্তু নিয়ম না মেনে প্রতি ১০ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৬ জন নার্স পাঠানো হচ্ছে। ১৬ মে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর হজযাত্রী স্বাস্থ্যসেবা দল গঠনের ক্ষেত্রে ইতঃপূর্বে হজযাত্রী স্বাস্থ্যসেবা দলের সঙ্গে সৌদি যাননি এমন ব্যক্তিদের আবেদনের নির্দেশনা দিয়েছে। ১৩ এপ্রিল নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২০২৩ সালে হজ স্বাস্থ্যসেবা দল গঠনের লক্ষ্যে যোগ্য নার্সিং কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে হজযাত্রী স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দরখাস্ত আহ্বান করা হচ্ছে। আবেদনের সঙ্গে ইতঃপূর্বে হজ মিশনে গমন করেননি মর্মে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। ইতঃপূর্বে হজ মিশনে এক বা একাধিকবার গমন করেছেন, তাদের আবেদন করার প্রয়োজন নেই।’

একাধিক নার্স জানান, সুস্পষ্ট এই নির্দেশনা না মেনে একাধিকবার হজ মেডিকেল টিমের সঙ্গে যাওয়ার জন্য কীভাবে আবেদন করলেন? হজযাত্রী স্বাস্থ্যসেবা দলের নামে কিছু মানুষ বারবার বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ নিচ্ছেন। এক ব্যক্তি একাধিকবার সুযোগ পাওয়ার কারণে অন্যরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া দিন দিন হজ মেডিকেল টিমের সঙ্গে সৌদি যাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। কারণ সরকারি খরচে ভ্রমণ করে মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়া যায়। সেখানে অনেকেই যান কিন্তু দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেন না।

জানা যায়, চিকিৎসক দল গঠন নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে অভিজ্ঞদের (পূর্বে যারা গিয়েছিলেন) দলে অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এখন থেকে পূর্ব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে হজযাত্রী স্বাস্থ্যসেবা দল গঠন করা হবে।’

১৪ মে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত অন্য বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এবার হাজিদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য দুটি দলে বিভিক্ত করে ১০২ জন চিকিৎসক, ৬৩ জন নার্স ও ব্রাদার্স, ২১ জন ফার্মাসিস্ট এবং ১৪ জন অপারেশন থিয়েটার ও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের সমন্বয়ে ২০০ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বিত হজ চিকিৎসক দল গঠন করে সৌদি আরব প্রেরণে সরকার সম্মতি দিয়েছে। দুটি দলে এবার চিকিৎসক টিম হজযাত্রীদের সেবা দেবে। চিকিৎসক দলের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে তাদের নামের বিপরীতে উল্লিখিত তারিখ অনুযায়ী বিমানের ফ্লাইট প্রাপ্তি সাপেক্ষে সৌদি আরব গমন করবেন এবং দায়িত্ব পালন শেষে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করবেন।’ স্বাস্থ্যসেবা দল গঠন নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের দুই নীতি বিষয়ে চিকিৎসক, নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) সভাপতি খাঁন মো. গোলাম মোরশেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘হজযাত্রীদের চিকিৎসা সেবায় দল গঠনে কোনো নিয়ম মানা হয় না। অনেকে এ টিমের সঙ্গে গেলেও পদের সঙ্গে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। এই টিমের সঙ্গে ২১ জন ফার্মাসিস্ট যাচ্ছেন তাদেরও কোনো কার্যক্রম নেই। ডাক্তার রোগী দেখে ট্রিটমেন্ট দেবেন। নার্সরা অসুস্থ হজযাত্রীদের সেবা দেবেন। কিন্তু ফার্মাসিস্টদের কাজ কি? তারা মূলত ঘুরেফিরে সময় পার করেন। অন্যদিকে ১৪ জন ওটি ও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পাঠানো হচ্ছে। সেখানে কোনো ওটি থিয়েটার বা ল্যাব নেই। তারা কি কাজ করবেন সেটা বোধগম্য নয়। একাধিকবার যারা এই মেডিকেল টিমের সঙ্গে সৌদি আরব গিয়েছেন এবারও তারা মোটা অঙ্কের টাকা ঘুস দিয়ে এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। এছাড়া আর্থিক লেনদেন ও তদবির ছাড়া কেউই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জানা যায়, এবার হজ মেডিকেল টিমের তালিকার ১৩০ নম্বরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইয়াসমিনের নাম রয়েছে। তিনি ২০১৫ সালেও এই টিমের সঙ্গে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। এমনকি তার নামে একটি মামলাও রয়েছে। ১৩২ নম্বরে রয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের শামীমা আক্তার ও ১৫৯ নম্বরে ঢাকা সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে নাজমা খাতুন। তারা এর আগে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন।

জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার উপসচিব মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘অসুস্থ হজযাত্রীদের চিকিৎসা সেবা দিতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে একটা টিম চলে গেছে। বাকিরা ধাপে ধাপে সৌদি আরব যাবেন।’

একাধিকবার গিয়েছেন এমন অনেকেই এবারও যাচ্ছেন-এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে ভিন্ন পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে দল গঠন প্রয়োজন। এতে তারা ভালো সেবা দিতে পারবেন।’ তবে দুই মন্ত্রণালয়ের আলাদা বিজ্ঞপ্তি নিয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। ফার্মাসিস্ট ও ল্যাব এবং ওটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, হজযাত্রী কোনো আঘাত পেলে তাদের ছোটখাটো সেলাই দরকার হয়। তারা সেই সেবা দিয়ে থাকেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম