Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

বাংলার বাসমতি নতুন জাত বিনাধান-২৫ উদ্ভাবন

সবচেয়ে ভালো মানের লম্বা ও চিকন চাল হয়

Icon

আতাউল করিম খোকন, ময়মনসিংহ

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ময়মনসিংহের বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এবার বোরো মৌসুমে আবাদের জন্য বিনাধান-২৫ উদ্ভাবন করেছে। দেশে উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলোর মধ্যে বিনাধান-২৫ সর্বাধিক লম্বা ও চিকন। বৈশ্বিক উষ্ণতা সহিষ্ণু উচ্চফলনশীল ধানের এ জাতটি আবাদ করে হেক্টরপ্রতি গড়ে ৮ টন ফলন পাওয়া যায়। যা দেশের অর্থনৈতিক ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমাবে বলে আশাবাদ বিজ্ঞানীদের। উচ্চফলনশীল এ ধানের চাল অনেকটাই বাসমতি ধানের চালের মতো। অনেকেই বলে থাকেন এ জাতের ধান ‘বাংলার বাসমতি’। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত বিনা-২৬ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এ জাতটির বৈশিষ্ট্য হলো এটি সবচেয়ে ভালো মানের সরু ও চিকন এবং বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। এটি পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতির মতো। এর বাজারমূল্য বেশি। এ চাল বাজারে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কৃষিকে বাণিজিক ও রপ্তানিমুখী করার উদ্দেশ্যে বিনাধান-২৫ উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে এ ধান বড় ভূমিকা পালন করবে। ৪২-৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কোনো ধান টিকতে পারে না। কিন্তু বিনাধান-২৫ সেই উষ্ণতা সহ্য করতে পারে। সহজেই হেলে পড়ে না। জমিতে পানি জমে গেলে, ঝড়বৃষ্টির কবলে ধানগাছ হেলে পড়লেও পানি সরে যাওয়ার পর রৌদ্রোজ্জ্বল অবস্থায় দুই-তিন দিনের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে এবং স্বাভাবিক ফলন দেয়। এজন্য কৃষকদের কাছে সমাদৃত হবে। এ ধান আবাদ করলে কৃষকরা দ্বিগুণ লাভবান হবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই।

বেসরকারি সংগঠন উবিনীগ ‘নয়াকৃষি আন্দোলন’র মতে, দেশে একসময় বিভিন্ন মৌসুমে প্রায় ১৫ হাজার জাতের ধান চাষ হতো। হাজারো জাতের ধানের আবাদ বাংলাদেশে হলেও লম্বা ও চিকন চালের ধান নেই বললেই চলে। যে কারণে ভোজন রসিকদের জন্য বিরিয়ানি ও পোলাও রান্না করতে বাসমতি চালের ব্যবহার হয়। এ চাল আমদানিতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। দেশে চাহিদা অনুসারে লম্বা ও চিকন চাল অপ্রতুল থাকায় এবং রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিনাধান-২৫ উদ্ভাবন করা হয়েছে।

বিনার উদ্ভিদ প্রজজন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাকিনা খানম জানান, দেশে লম্বা ও চিকন চালের ধানের চাহিদা মেটানোর জন্য ৭-৮ বছর আগে গবেষণা শুরু করা হয়। গেল বছর বিনাধান-২৫ উদ্ভাবনে সফলতা অর্জন করায় চলতি বোরো মৌসুমে সাতক্ষীরায় পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেশের ২১ জেলার ৩৯৬ উপজেলায় চাষি পর্যায়ে ৮ টন বিনাধান-২৫ এর বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আবাদকৃত বিনাধান-২৫ এর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ আগাম জাতের এ ধানে সার ও বালাইনাশক কম লাগে। ইউরিয়া ও পানি সাশ্রয়ী। স্বল্প খরচে কম সময়ই অধিক ফলন পাওয়া যায়। হেক্টরপ্রতি ফলন সাড়ে সাত টন থেকে সাড়ে আট টন। পাকতে সময় লাগে ১৪৫ দিনের মতো। এ ধানের চাল রান্না করলে চালের আকৃতি দ্বিগুণ আকার ধারণ করে। যা অনেকটাই বাসমতির মতো। খেতে খুবই সুস্বাদু। রান্না করা ভাত ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। সকালে রান্না করে স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে দিলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত খাওয়া যাবে। নষ্ট হবে না। দীর্ঘ সময় পরও ভাত ঝরঝরে থাকবে। বিনাধান-২৫ আবাদে কৃষকরা দুই ফসলি জমিতে তিন ফসল করতে পারবেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম