বাম্পার ফলনেও হাসি নেই চাষিদের মুখে
এটিএম নিজাম, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কিশোরগঞ্জের হাওড়ে এবারও বাম্পার ফলন হয়েছে। ঝড়ঝঞ্ঝা, আগাম বন্যা প্রভৃতি দুর্যোগ-দুর্বিপাক স্পর্শ করার আগেই নিরাপদে ধান কাটা শেষ হয়েছে। এরপরও বোরো চাষিদের মুখে হাসি নেই। কারণ, খরচ ও ঋণ মেটাতে নতুন মাঠ ও খলা থেকেই অনেক চাষি ৮২০ থেকে ৮৫০ টাকা মন দরে একশ্রেণির ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের হাতে ধান তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও এক মন বোরো ধান উৎপাদনে খরচ হয় সাড়ে ৮শ থেকে ৯শ টাকা। বাজার একশ্রেণির মজুতদার ও ফড়িয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নানা কায়দায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারি খাদ্যগুদামগুলোয় সরাসরি প্রকৃত চাষিদের ধান সরবরাহেরও সুযোগ নেই। তাই কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে অনেক কৃষক ধান ছেড়ে নতুন লাভজনক ফসল উৎপাদনের দিকেও ঝুঁকছেন। বাজারে উপযুক্ত মূল্য থাকায় তারা ভুট্টা চাষ করতে শুরু করেছেন।
কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওড়াঞ্চলের মাঠ, প্রান্তর এবং গ্রামগুলো এখন বোরো ফসলের ম-ম গন্ধ। কিষান-কিষানিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মাঠ থেকে তোলা ফসল খলায় রেখে রোদে শুকিয়ে গোলায় তুলতে। ধান মাড়াইকে কেন্দ্র করে অনেকটা উৎসব উৎসব আমেজ চলছে। কিন্তু ফড়িয়া-মজুতদারদের কূটকৌশল ও অপতৎপরতা তাদের দুর্ভাবনায় ফেলেছে।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার দাস জানান, সিন্ডিকেটের কারণে ধানের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় তিনি তার ৪০ একর জমি বর্গাচাষিদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এবার প্রতি একর জমিতে ৭০ থেকে ৭৫ মন বোরো ফসল উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু তারাও খরচ ও ঋণ মেটাতে ধানের একটি বড় অংশ ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে পানির দরে আগাম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া সিন্ডিকেটের কারসাজিতে প্রকৃত চাষিরা সরকারি খাদ্যগুদামে তাদের ধান বিক্রি করতে পারেন না।
মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল জানান, সেচ, ডিজেল ও সারের দুর্মূল্যের মধ্যেও এবার কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি শ্রমিকের পাশাপাশি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা হচ্ছে।
হাওড়ের প্রবেশদ্ধার চামড়ার নৌবন্দর এলাকায় বেশ কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, এক মন ধান উৎপাদনে সাড়ে ৮শ থেকে ৯শ টাকা খরচ হয়েছে। আর সেই শ্রম-ঘামের কষ্টের ধান তারা ফড়িয়া ও মজুতদারদের হাতে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা দরে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তারা দাবি করেন, ‘ভেজা ধান কেনার পর সেই ধান শুকাতে হচ্ছে। তাই বর্তমানে বাজারে ধানের দামে এমন অসংগতি।’
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার জানান, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কৃষক সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। এ করণে কৃষক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হতাশ হয়ে তারা ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, এই জেলায় চলতি বছর ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ লাখ ১৬ হাজার ২১০ টন। আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হয়েছে। সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে চাষ করায় রেকর্ড আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে।