অনিশ্চয়তা কাটছে না ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের
ইকবাল হাসান ফরিদ
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বঙ্গবাজার ট্র্যাজেডির এক মাস পূর্তি আজ। পোড়া ক্ষত নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে খোলা আকাশের নিচে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে আগুনে নিঃশেষ হওয়া মার্কেটে বহুতল ভবন নির্মাণে উদ্যোগও নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। তারা বলছেন, বহুতল ভবন নির্মাণ হলে দোকান পাবে মালিকরা। আমাদের তাহলে কী হবে? আমরা কীভাবে ঋণের বোঝা ঠেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচব।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২ হাজার ৯৬১টি দোকানের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৮০০ ব্যবসায়ী দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। ৪ এপ্রিল ভোরের সেই ভয়াবহ আগুনে তারা একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। পুড়ে গেছে একেক জনের লাখ লাখ টাকার মালামাল। কারও গেছে কোটি টাকার পণ্য। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ীদের।
বুধবার কথা হয়, বঙ্গবাজারের মহানগরী ইউনিটের ৮৫২ নম্বর দোকানের ব্যবসায়ী মতিউর রহমানের সঙ্গে। এই দোকানের মালিক ছিলেন লুৎফুর রহমান। তিনি ১৬ লাখ টাকায় দোকানটি বিক্রি করে দেন নাজমুন্নাহার নামে এক নারীর কাছে। দোকানটি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, তার এই দোকান ছাড়াও আদর্শ ইউনিটে একটি দোকান ও একটি গোডাউন ছিল। প্রায় ৮০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একটি চৌকির পজিশন পেলেও রোদের কারণে বসা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের নিচে বসে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। ঈদের আগে বাকিতে ২০ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলাম। মহাজন এখন টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। লোনের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ লোনও দিচ্ছে না। তিনি বলেন, স্থায়ী ভবন নির্মাণ শুরু হলে তো এখানেও বসা যাবে না। আর আমরা তো ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী। স্থায়ী ভবনে পজিশন পাবেন দোকান মালিকরা। আমরা যারা ভাড়াটিয়া আছি, মালিক ভাড়া না দিলে আমরা তো বসতে পারব না। তাহলে কি আমরা সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকিরই থেকে যাব-প্রশ্ন মতিউর রহমানের।
মহানগরী ইউনিটের ৮৯৬ নম্বর দোকানের ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী মুক্তার গাজী যুগান্তরকে বলেন, এই আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা। অথচ এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অনুদান পাইনি। সরকার যদি আমাদের একটা ক্ষতিপূরণ দিত, তবে তা দিয়ে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর আরও চেষ্টা করতাম। মতিউর রহমান কিংবা মুক্তার হোসেনের মতোই ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা যুগান্তরের কাছে বলেন গুলিস্তান ইউনিটের ব্যবসায়ী রাসেল, শাহাদাত, শাহ আলম, আদর্শ ইউনিটের ওয়াসিম, মোজাব্বর, নুর ইসলাম ও বঙ্গ ইউনিটের আলম পাটোয়ারি। তাদের প্রত্যেকের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের ৫ থেকে ৬ জন। তারা স্থায়ী ভবনে দোকানের পজিশন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনে জমা দেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা পর্যালোচনা করে আরও জানা যায়, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটের ২ হাজার ৯৫১টির মধ্যে ২ হাজার ৭৯৩টি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে আসছিলেন। গুলিস্তান ইউনিটের ৮২৮টি দোকানের মধ্যে ৮০৫টিই ভাড়ায় পরিচালিত হতো। আদর্শ ইউনিটে ৬৬১টি দোকানের মধ্যে ৫৮৩টি, বঙ্গ ইউনিটে ৮৬৩টির মধ্যে ৮০৬টি দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বঙ্গবাজারের মহানগরী ইউনিটের সভাপতি লোকমান হোসেন সিটি করপোরেশনে দেওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় উল্লেখ করেছেন মার্কেটে ৫৯৯টি দোকান ছিল। যার মধ্যে ৫৯৯ জনই ভাড়ায় দোকান নিয়ে ব্যবসা করতেন।
এদিকে বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীদের চৌকি পেতে অস্থায়ীভাবে বসার ব্যবস্থা করে দিলেও খোলা আকাশের নিচে তপ্ত রোদে ব্যবসা করতে পারছেন না ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পোড়া বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মঙ্গলবারও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেছেন, বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা চাইলে আমরা নতুন ভবন নির্মাণের দিকে এগিয়ে যাব। আর মার্কেট নির্মাণ শুরু হলে তা দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্মতি দিয়েছি। তিনি বলেছেন, নির্মাণকাজ শুরু হলে দুই বছরের মধ্যেই শেষ করা হবে।