আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। দুই যুগেও শেষ হয়নি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ -যুগান্তর
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চির ভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে (১৭ এপ্রিল) কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। প্রিয় স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এদিন থেকে স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দিনটি পালনে সরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বানীতে বলেন, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল এক স্মরণীয় দিন। আমি এই মাহেন্দ্রক্ষণে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে যাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার পরিচালনার মাধ্যমে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার বানীতে বলেন, জাতির পিতা যে অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সকল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। ইনশাআল্লাহ, আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট সরকার ব্যবস্থার সমন্বয়ে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রীরূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া তাজউদ্দীন আহমদ অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী নিযুক্ত হন। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।
মুজিবনগর সরকারের শপথের দিন ১২ জন আনসার সদস্য ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতারে ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। এ ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। আর ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরদিন দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায় শপথগ্রহণের সংবাদ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়।
সরকারি কর্মসূচি : দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে সরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে সকাল ৯টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে। এরপর মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। মুজিবনগর আম্রকাননে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, বিএনসিসি, স্কাউটস, গার্লস গাইড ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদান এবং বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় মুজিবনগরে গীতিনাট্য জল মাটি ও মানুষ প্রদর্শিত হবে। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মুজিবনগরের শেখ হাসিনা মঞ্চে এ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আজ মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় সরকারি ছুটি থাকবে। ঢাকা ও মুজিবনগরে এ দিবস উপলক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভবনে আলোকসজ্জা এবং সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ও মোনাজাত বা প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কর্মসূচি পালন করা হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : ঐতিহাসিক দিনটিকে বরাবরের মতো স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সবার সঙ্গে একত্রিত হয়ে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ ও পালন করবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। এছাড়াও মুজিবনগরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে গার্ড অব অনার প্রদান এবং বেলা ১১টায় ‘শেখ হাসিনা মঞ্চে’ মুজিবনগর দিবসের জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষিত কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে দল, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।