যশোরে মজুরি বৈষম্যের শিকার দর্জি শ্রমিকরা
সংসার চালাতে হিমশিম
ইন্দ্রজিৎ রায়, যশোর
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে যশোরে টেইলার্সগুলোতে নতুন পোশাক তৈরির ধুম পড়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর টেইলার্স মালিকদের কাছে জিম্মি মজুরি বৈষম্যের শিকার পোশাক কারিগররা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্বল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন এসব দর্জি শ্রমিক। ঈদ সমাগত হলেও আনন্দ নেই তাদের মনে। আর তাই ন্যায্য মজুরির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন তারা।
জানা যায়, যশোরে টেইলার্সগুলোতে কর্মরত কারিগররা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না দীর্ঘদিন ধরে। তাদের কোনো সংগঠন না থাকায় দাবি আদায় করাও কঠিন। অপরদিকে, মালিকদের সংগঠন থাকায় তারা কারিগরদের কম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কাজ করাচ্ছেন বলেও অভিযোগ আছে। কারিগররা একটি শার্টে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, প্যান্টে ১৮৫ থেকে ১৯৫ টাকা, পাঞ্জাবিতে ১১৫ থেকে ১৩৫ টাকা, পায়জামায় ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, ফতুয়ায় ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, ব্লাউজে ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও সালোয়ার কামিজ তৈরিতে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান। তবে বাজার ভেদে মজুরির তারতম্য আছে। ন্যায্য মজুরির দাবিতে সম্প্রতি শহরের ৬২ টেইলার্সের চার শতাধিক শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করেছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে আয়ের সমন্বয় হচ্ছে না। এছাড়া উৎসব পার্বণে নেই কোনো বোনাস।
শহরের এইচএম রোডের একটি টেইলার্সের কারিগর আলমগীর হোসেন বলেন, পোশাক সেক্টরের দুটি খাত রয়েছে। এরমধ্যে একটি গার্মেন্টস, অপরটি টেইলার্স। সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু টেইলার্স শ্রমিকদের কোনো মজুরি নির্ধারণ করেনি। মালিকরা ইচ্ছামতো মজুরি নির্ধারণ করে দেন। আমরা অবহেলিত। মালিকদের অ্যাসোসিয়েশন আছে। তাদের কাছে আমরা জিম্মি। আমরা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।
তাবারক হোসেন নামে আরেক দর্জিশ্রমিক বলেন, সব ধরনের পোশাক তৈরিতে মালিকরা আমাদের মজুরি কম দেন। কিন্তু তারা নিচ্ছেন তিনগুণের বেশি। আমাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে ৫০০ টাকা আয় করতে পারি না।
এদিকে, শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্যের অভিযোগ মানতে নারাজ টেইলার্স মালিকরা। জেলা পোশাক প্রস্তুত মালিক সমিতির সভাপতি আক্তারুজ্জামান খোকন বলেন, বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করেই মজুরি বৃদ্ধি করা হয়। এ বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে সমস্যায় পড়েছেন শ্রমিকরা। মজুরিতে কোনো বৈষম্য নেই। তারপরও তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনার মাধ্যমে মজুরি বৃদ্ধি করা হচ্ছে।