Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

রংপুরে বিএনপির উপজেলা ও পৌর কমিটি ঘোষণা

ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন বিক্ষোভ প্রত্যাখ্যান

Icon

মাহবুব রহমান, রংপুর

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন বিক্ষোভ প্রত্যাখ্যান

রংপুর জেলার আট উপজেলা ও তিন পৌর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এসব কমিটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। পদবঞ্চিতরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার মিঠাপুকুর, পীরগাছা, বদরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ করেছেন দলের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটি গঠনের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিএনপির কার্যক্রমকে গতিশীল করতে মঙ্গলবার রাতে রংপুর জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আটটি উপজেলা ও তিনটি পৌর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। রংপুর সদর উপজেলা, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা এবং কাউনিয়ার হারাগাছ পৌর, বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জ পৌর কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটি ঘোষণার পরপর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ-দুর্দিনের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অযোগ্য, নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এবং রাজনীতিতে সক্রিয় নন-এমন ব্যক্তিদের পদ দেওয়া হয়েছে। অনেক সিনিয়র ও নির্যাতিত-ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। বদরগঞ্জ, পীরগাছা ও পীরগঞ্জ উপজেলায় একই ব্যক্তি বারবার শীর্ষপদ আঁকড়ে ধরে আছেন বলে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বদরগঞ্জ পৌরসভার কমিটি নিয়ে দুই পক্ষ পালটাপালটি অবস্থান নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রংপুর সদর উপজেলা, বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়ায় পদবঞ্চিতরা সভা করেছেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ-দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করেছেন এমন ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে ও স্বজনপ্রীতি করে অদক্ষ ও অসাংগঠনিক ব্যক্তিদের কমিটির শীর্ষপদ দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের স্থান দেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় উপজেলা ও পৌরসভায় জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে কর্মিসভা করা হয়। কর্মিসভার কয়েক মাস পর হঠাৎ মঙ্গলবার রাতে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর বিভিন্ন উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মূল্যায়ন না পেয়ে অনেকে নিষ্ক্রিয় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সূত্র জানায়, পীরগাছা উপজেলায় সদস্যসচিব পদপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্মসম্পাদক শরিফুল ইসলাম ডালেস। তাকে ৫নং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ডালেস দীর্ঘদিন দলের জন্য নিরলস কাজ করছেন। একইভাবে মিঠাপুকুর উপজেলায় সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ খাজানুর রহমান খাজা, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান রানা, ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ তালুকদার, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি সাদেকুল ইসলাম, শিল্পপতি ডা. মমতাজ হোসেন, সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি একেএম রুহুল উল্লাহ জুয়েলকে পদে রাখা হয়নি। পীরগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম সেবু মন্ডলকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলায় মিজানুর রহমান রন্টু, আজহার আলী, আব্দুল আজিজ খোকা, আব্দুল কাইয়ুম যাদুসহ ত্যাগী নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখেরুজ্জামান মিলনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। প্রতারণার মামলায় কারাবন্দি বাস্তুহারা দলের সাবেক নেতা নাজমুল হুদা যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেয়েছেন।

কাউনিয়া উপজেলায় ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম বাবলুকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে দলকে সংগঠিত করে আসছেন কাউনিয়া উপজেলার বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি। তারাগঞ্জ উপজেলায় সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানকে সদস্য করা হলেও কমিটিতে স্থান পাননি সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। একই অবস্থা রংপুর সদর, পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায়। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ-তিনি মনগড়া ও নিজের অনুগতদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন।

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর তৃণমূলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এসব কমিটিকে কেউ কেউ পকেট কমিটি হিসাবেও আখ্যায়িত করেছেন। অনেকে প্যাডসর্বস্ব কমিটি বলেও অখ্যায়িত করেছেন। তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মী নিয়ে পুনরায় কমিটি গঠনের জন্য তারা দলের হাইকমান্ডের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল ইসলাম মুন্না ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, যোগ্যতানুসারে পদবঞ্চিত, অযোগ্যদের পদায়ন, ত্যাগীদের মাইনাস করে কমিটি দেওয়া হয়েছে।’ অনতিবিলম্বে কমিটি ভেঙে দিয়ে ত্যাগীদের মূল্যায়নসহ রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিকদের দিয়ে সংশোধিত কমিটি প্রকাশ করার দাবি করেন তিনি। গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঘোষিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আখেরুজ্জমান মিলন বলেন, তেলবাজির কাছে হেরে গেলাম।

মিঠাপুকুর উপজেলায় পদবঞ্চিত স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি একেএম রুহুল্লাহ জুয়েলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ হয়েছে। এতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বদরগঞ্জ উপজেলা ও পৌর উপজেলা যুবদল সদস্যসচিব মনিরুজ্জামান, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি নাজমুল ইসলাম, শ্রমিক দল সভাপতি আবুজার গাফারি সংবাদ সম্মেলন করে কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। রংপুর সদর উপজেলায় সভা ডেকে কমিটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতি কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও তারাগঞ্জ উপজেলায় বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম জানান, সবার মতামতের ভিত্তিতে যোগ্য ও দলের নিবেদিত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম