শাহ আমানত বিমানবন্দর
জিয়া উদ্দিন যেন জলজ্যান্ত স্বর্ণমানব!

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পঁচিশ বছরের মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন যেন জলজ্যান্ত এক স্বর্ণমানব। প্রায় পুরো শরীর সোনার বারে মোড়ানো। জুতার তলা, কোমরের বেল্ট, প্যান্টের বিভিন্ন স্থান-যেখানেই হাত দেওয়া হলো, সেখান থেকেই আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো একে একে বের হতে থাকল চকচকে সব সোনার বার। বাদ যায়নি পেটের ভেতরটাও। সেখানেও বিশেষ কায়দায় লুকানো ছিল বিস্কুট আকৃতির সোনার বার। পায়ুপথ দিয়ে বের করে আনা হলো সেগুলোও। দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই যাত্রী এভাবেই নিজের শরীরে বহন করছিল ৩২টি সোনার বার এবং ৯৯ গ্রাম স্বর্ণালংকার, যার ওজন প্রায় পৌনে চার কেজি। বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের হাতে আটক হন জিয়া উদ্দিন। পরে তল্লাশি চালিয়ে বের করে আনা হয় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা স্বর্ণের বারগুলো।
তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন কাস্টমস গোয়েন্দারা। গত ১৩ মাসে তিনি ১৯ বার দুবাই থেকে চট্টগ্রাম এসেছেন। আর প্রতিবারই পায়ুপথে করে নিয়ে এসেছেন সোনার চালান।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. সাইফুর রহমান জানান, দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৪৮ নম্বর ফ্লাইটের যাত্রী মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিনকে গোপন সংবাদের সূত্র ধরে আটক করা হয়। এরপর বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দেহ তল্লাশি করা হয়। এ সময় তার পরিহিত প্যান্টের ভেতর থেকে ১৫ পিস, জুতার ভেতর থেকে ৮ পিস সোনার বার উদ্ধার করা হয়। তার পায়ুপথে আরও সোনা আছে বলে এক্সরেতে ধরা পড়ে। এরপর টয়লেটে নিয়ে পায়ুপথ থেকে আরও ৯টি বার বের করে আনা হয়।
মো. সাইফুর রহমান জানান, আটক জিয়া উদ্দিন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার এনায়েতপুর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আমজাদ মিস্ত্রিবাড়ির আবুল বাশারের ছেলে। ফৌজদারি মামলা করে তাকে পতেঙ্গা থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। পাসপোর্ট থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, তিনি ২০২২ সালে ১০ বার এবং চলতি বছর এ পর্যন্ত ৯ বার দুবাই থেকে দেশে এসেছে। গোয়েন্দাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক জিয়া উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রতিবারই তিনি পায়ুপথে করে সোনার বার নিয়ে এসেছেন। দুবাইয়ে অবস্থানরত রাকিব নামে এক ব্যক্তি তাকে স্বর্ণের বারগুলো দিত। দেশে এনে তিনি বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষারত বাবু নামে এক ব্যক্তির কাছে এগুলো হস্তান্তর করতেন। প্রতিটি চালানের জন্য তাকে দেওয়া হতো ৭০ হাজার টাকা করে।