Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

পানি বিশুদ্ধকরণে অগ্রগতি কম

রাজশাহী ওয়াসার পানিতে ময়লা দুর্গন্ধ

মাত্র ৪০ ভাগ মানুষ ওয়াসার পানি পায়, বাকিরা অন্য উৎস থেকে সংগ্রহ করে

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী ওয়াসার পানিতে ময়লা দুর্গন্ধ

রাজশাহীতে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগের অন্ত নেই। পাইপলাইনে সরবরাহ করা পানির ৬০ ভাগই বিশুদ্ধ নয়। ঘোলা ও নোংরা পানি যাচ্ছে বাসাবাড়িতে।

এক বছর আগে রাজশাহী মহানগরীতে সরবরাহ করা ওয়াসার পানিতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শনাক্তের পরও পানি বিশুদ্ধকরণে তেমন অগ্রগতি নেই। অভিযোগ রয়েছে, পানি বিশুদ্ধকরণে রাজশাহী ওয়াসার যেসব প্ল্যান্ট রয়েছে সেগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না।

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে গৃহীত রাজশাহী ওয়াসার প্রকল্পগুলোর তেমন অগ্রগতি নেই। চার হাজার কোটি টাকার পানি সরবরাহ মেগা প্রকল্পটি চীনের ঋণ জটিলতায় মাঝপথে আটকে আছে।

জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনের পানি বিভাগকে পৃথক করে রাজশাহী ওয়াসা যাত্রা শুরু করে। কিন্তু এক দশকেও পানি ‘বিশুদ্ধ’ করার ক্ষেত্রে ওয়াসা কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি।

রুয়েটের একদল গবেষক ২০১৮ সালে করা এক গবেষণায় দেখতে পান রাজশাহী ওয়াসার পানি পানে অনেক মানুষ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গবেষণায় আরও বলা হয়, রাজশাহী ওয়াসার পানির বিশেষ পরিমাপযোগ্য মানদণ্ড নেই। রাজশাহীর পানি খারাপ ও জনস্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।

রুয়েটের গবেষক দল নগরীর ১০টি ওয়ার্ডের ৪০টি স্পটের পানির নমুনা সংগ্রহ করেন। গবেষণায় ওঠে আসে রাজশাহীর পানিতে বেশি মাত্রার আয়রনের উপস্থিতি। ক্ষারতার মাত্রা এতটাই বেশি যে, রাজশাহীর পানি

বাংলাদেশ পানি মানের (বিডিএস) অনেক নিচে অবস্থান করছে। প্রাপ্যতার ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে রাজশাহী ওয়াসার পানি। রাজশাহী ওয়াসা এখন পর্যন্ত মাত্র ৪০ ভাগ মানুষকে পানি দিতে পারে। বাকি ৬০ ভাগই বিভিন্ন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করেন। সেই সঙ্গে সরবরাহ করা ৭০ ভাগ পানি কালো ও ঘোলাটে এবং ৯৫ ভাগ দুর্গন্ধযুক্ত।

অন্যদিকে রাজশাহী ওয়াসা থেকে সরবরাহ করা পানি বাইরের তুলনায় খারাপ। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, লোহা তথা আয়রনের মাত্রা খুব বেশি হওয়ায় গুরুতর স্বাস্থ্যহানির শিকার হচ্ছেন মানুষ। খারাপ পানির কারণে ডায়রিয়া, বমি ও খিঁচুনি হয়। দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে মাথাব্যথা, মাথাঘোরা বা বমি বমি ভাব হয়।

রাজশাহী মহানগরীর জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৩০ জন ধরেই পানি সরবরাহের হিসাব করা হয়ে থাকে। সে মোতাবেক নগরীতে পানির চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক ১ কোটি ১৩ লাখ ঘনমিটার বা সাড়ে ১১ কোটি লিটার। বর্তমানে ওয়াসার অধীনে পানির গ্রাহক সংখ্যা ৪৭ হাজার ১২৭ জন।

আর পানির দৈনিক উৎপাদনের পরিমাণ ৯৫ হাজার ঘনমিটার বা সাড়ে ৯ কোটি লিটার। রাজশাহী মহানগরী এলাকায় বর্তমানে ২ কোটি লিটার পানির ঘাটতি রয়েছে।

অন্যদিকে রাজশাহী ওয়াসা নগরীতে পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ১০৬টি উৎপাদক নলকূপ ব্যবহার করে। প্রায় ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৭১৩ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে নগরীর বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। ওয়াসার হিসাবে নির্ধারিত গ্রাহকের জন্য তারা দৈনিক ২০৫ লিটার পানি সরবরাহ করেন।

কিন্তু ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের ফলে ইতোমধ্যে রাজশাহী মহানগরীর জনসংখ্যা ১০ লাখ অতিক্রম করেছে। পানির চাহিদা বাড়লেও পানির উৎপাদন ও সরবরাহ অবকাঠামো বাড়েনি।

এদিকে রাজশাহীতে ভূউপরিস্থিত পানি সরবরাহ প্রকল্প নামে ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ১ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা সরকার ও বাকি ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা দেওয়ার কথা চীনের এক্সিম ব্যাংকের।

এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও রাজশাহী ওয়াসার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০২১ সালের ২১ মার্চ। কিন্তু এক্সিম ব্যাংক টাকা ছাড় না করায় প্রকল্পটির বিশেষ অগ্রগতি নেই। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।

প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ নামক স্থানে একটি বৃহৎ পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হবে। পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে তা শোধন করে ২৮ কিলোমিটার দূরে পাইপলাইনের মাধ্যমে নগরীতে সরবরাহ করা হবে।

জানা গেছে, ২০১১ সালে ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শহিদ কামারুজ্জামান পানি শোধনাগারটি বছরের অর্ধেক সময় চালু থাকে। বর্তমানে দুটি ইউনিটের একটি চালু আছে। এই শোধনাগার থেকে সরবরাহক করা পানি দুর্গন্ধযুক্ত বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

রাজশাহী সাহেব বাজারের বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, ওয়াসার পানি প্রায়ই ঘোলা ও ময়লা আসে। পদ্মা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নোবেল হোসেন বলেন, কিছুদিন ধরে লাইনে খুব খারাপ মানের পানি আসছে।

রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অনুপম চৌধুরী বলেন, শোধনাগারের ফিল্টারিং সিস্টেমে দুর্বলতার কারণে দূষিত পানি আসছে।

রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকির হোসেন বলেন, রাজশাহী ওয়াসার সরবরাহ করা পানির মান খারাপ নয়। শোধনাগারে শ্যাওলা জমলেও তাতে পানি দূষিত হচ্ছে না। সুপেয় পানি সরবরাহে ওয়াসা কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম