বেড়েছে কিউলেক্স মশার উপদ্রব
মতিন আব্দুল্লাহ
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেড়েছে। এই কারণে কিছুদিন ধরে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রাজধানীবাসী। শীতের প্রকোপ কমার সঙ্গে সঙ্গে কিউলেক্স মশার প্রজননও বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে কিউলেক্সের পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কিউলেক্স মশার প্রজনন বাড়তে শুরু করে। এটা মার্চে ভয়াবহরূপ ধারণ করে। এপ্রিল মাস পর্যন্ত কিউলেক্সের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ থাকতে হয় নগরবাসীকে। এ বছর ইতোমধ্যে কিউলেক্সের ধকল শুরু হয়েছে। সামনের দিনগুলোয় আরও খারাপ সময় অপেক্ষা করছে নগরবাসীর।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার নর্দমা ও বক্সকালভার্ট রয়েছে।
যেগুলোতে দুই সিটি মশার ওষুধ ছিটাতে পারে না। পাশাপাশি প্লাস্টিক দ্রব্য সামগ্রী, পলিথিন, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনায় ওই ড্রেনগুলো ভরাট থাকে। দুই ভবনের মাঝখানের জায়গাগুলো আবর্জনার ভাড়াড়ে পরিণত হয়েছে। এজন্য এসব নর্দমা দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না। জমাটবদ্ধ এসব পানিতে কিউলেক্স ভয়াবহরূপে বংশ বিস্তার করছে। এসব স্থানে মশার প্রজনন ধ্বংস করতে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। আর জলাশয়, খাল, নর্দমা ও যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক দ্রব্যসামগ্রী ও ডাবের খোসার পানিতে ভয়াবহরূপে মশার বংশ বিস্তার ঘটাচ্ছে। এসব কারণে মশক নিধনে দুই সিটির পর্যাপ্ত অর্থ খরচ করলেও নগরবাসীকে মশার ধকল সইতে হচ্ছে।
ঢাকার দুই সিটি সূত্রে আরও জানা যায়, মশার লার্ভা নিধনে লার্বিসাইডিং এবং উড়ন্ত মশক নিধনে ফগিং কার্যক্রম জোরালোভাবে শুরু হয়েছে ২০০০ সাল থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে রাজধানীর জলাশয়ে হাঁস, ব্যাঙ ও গাপ্পি মাছ ছেড়ে লার্ভা নিধনের চেষ্টা চালাতে দেখা গেছে। আর কদমফুল গাছ রোপণ করে সেখানে ফিঙেরাজা পাখির আগমন ঘটিয়ে উড়ন্ত মশক নিধনের প্রচেষ্টা চলেছে। এছাড়া ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্গম জলাশয়ে ওষুধ ছিড়িয়ে মশার উপদ্রব কমানোর তৎপরতাও চোখে পড়েছে নগরবাসীর। এতকিছুর পরও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো সুফল মেলেনি। মশক নিধন নিয়ে বলা চলে সিটি করপোরেশন ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। সরকারি অর্থের অপচয় ঘটাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আমলে নিচ্ছে না এমন অন্তহীন অভিযোগ দুই সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে।
কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, তাপমাত্রা বাড়লে কিউলেক্স মশার কামড়ানোর প্রবণতা বাড়ে। এখন সেই অবস্থা বিরাজ করছে। আর এই সময়ে শীত কমে যাওয়ায় মানুষ এখন খোলামেলা পোশাক পরিধান করছে। এই ধরনের পোশাক কিউলেক্স মশার কামড়ানোর জন্য বড় সুযোগ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, এই মৌসুমে কিউলেক্স মশা বৃদ্ধির মৌসুম। ইতোমধ্যে কিউলেক্সের প্রজনন ঘটে গেছে। সামনের দিনগুলোতে মশার উপদ্রব বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে ঝড়ো বৃষ্টি হলে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি মেম্বর ড. জি.এম সাইফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আবহাওয়াগত কারণে কিউলেক্স মশার প্রজনন বাড়ছে। এই সময়ে মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের যে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার সিটি করপোরেশন তা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা, সিটি করপোরেশন গতানুগতিক কাজের কারণে বুঝতে পারেন, কোন সময় তাদের কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করার ঘোষণা দিলেও এখনো সেভাবে কাজ শুরু করেনি। সিটি করপোরেশন যদি সত্যিকারার্থে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে চায়, তাহলে তাদেরকে বিদ্যমান কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার যুগান্তরকে বলেন, চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যে প্রচুর পরিমাণ কিউলেক্স মশার প্রজনন ঘটেছে। চলতি মাসজুড়ে এই মশার ধকল সইতে হবে নগরবাসীকে। এপ্রিল মাসের প্রথম দিক থেকে ধাপে ধাপে কিউলেক্স মশার উপদ্রব কমতে শুরু করবে।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আবহাওয়াগত কারণে এই সময়ে কিউলেক্স মশার প্রজনন ঘটে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি নানাবিধ তৎপরতা পরিচালনা করছে। একই বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামছুল কবির যুগান্তরকে বলেন, এখনকার সময়ে কিউলেক্স মশার প্রজনন বাড়ে। সেটা মাথায় রেখে ডিএসসিসি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সে কারণে ডিএসসিসি এলাকায় কিউলেক্স মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে যেসব এলাকার জলাশয়গুলো এখন পরিষ্কার বাকি রয়েছে, সেসব এলাকায় কিছুটা বেশি। ওইসব এলাকায় তৎপরতা চালানো হচ্ছে।