Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

স্পিচ অ্যাসোসিয়েশনের ১৪ সুপারিশ

শব্দদূষণে ঢাকাবাসীর আয়ু কমছে ৭ বছর

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শব্দদূষণে ঢাকাবাসীর আয়ু কমছে ৭ বছর

শব্দদূষণের কারণে ঢাকায় মানুষের গড় আয়ু সাত বছর কমে যাচ্ছে, ঢাকার বাইরের মানুষের পাঁচ বছর দুই মাস। বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য উঠে আসে। সম্মেলনে দেশে শব্দদূষণ রোধ ও মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণক্ষমতা রক্ষায় ১৪টি সুপারিশ করে সংগঠনটি। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। 
শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সারা বিশ্বের মতো আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শ্রবণ দিবস-২০২৩। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সকলের জন্য কান ও শুনানির যত্ন।’ দিসবটি উপলক্ষ্যে আগামীকাল শনিবার সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় শোভাযাত্রা হবে। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিলন হলে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে বাছাইকৃত রোগীদের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রদান করা হবে। এছাড়াও জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিটিউটে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা হবে। 
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্মেলনে জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাকারিয়া সরকার বলেন, শব্দদূষণ প্রতিরোধ আইনে জেল ও জরিমানার বিধান থাকলেও সেটা প্রয়োগ করা হয় না। শব্দদূষণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, শ্রবণজনিত সমস্যায় সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শব্দদূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, শব্দদূষণের কারণে ঢাকায় মানুষের গড় আয়ু সাত বছর কমে যাচ্ছে এবং ঢাকার বাইরে পাঁচ বছর দুই মাস কমে যাচ্ছে। তাই শব্দদূষণ রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত সুপারিশগুলো হলো-হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধ করা; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে আবাসিক এলাকার জন্য শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবেল বাস্তবায়ন করা; উচ্চ শব্দে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা; পেশাগত কারণে কাউকে উচ্চ শব্দে থাকতে হলেও তা যেন দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টার বেশি না হয়; সব পাঠ্যসূচিতে শব্দদূষণ রোধের সচেতনতা আওতাভুক্ত করা; পাবলিক প্লেসে মাইক কিংবা স্পিকার ব্যবহারে শব্দের মাত্রা ৫৩ ডেসিবেলের মধ্যে রাখার জন্য আইন প্রণয়ন করা; শব্দদূষণ রোধে ট্রাফিক পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া; আবাসিক এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া।
এ ছাড়াও আবাসিক এলাকায় কনস্ট্রাকশন কাজের শব্দদূষণ বন্ধে আইন পাশ করা; স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, উপাসনালয়ের আশপাশে শব্দদূষণ রোধ বাস্তবায়ন করা; শিল্প কারখানায় তীব্র শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতির প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটিয়ে শব্দদূষণ উৎসস্থলেই নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন করা; বিভিন্ন উৎসবে আতশবাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা এবং আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা; দেশের বিভিন্ন প্রান্তিকে অবস্থানকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে শব্দ সচেতনামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা; সরকারিভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে শব্দদূষণের কারণ ও ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে গণ-বিজ্ঞপ্তি দেওয়া; দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রত্যেক মানুষের শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া। সংবাদ সম্মেলনে শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) জরিপ অনুসারে, রাজধানী ঢাকার ১০টি স্থানের নীরব এলাকায় ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ সময় শব্দের আদর্শ মান (৫০ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে। আবাসিক এলাকায় ৯১ দশমিক ২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৫৫ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে। মিশ্র এলাকায় আদর্শ মান (৬০ ডেসিবল) অতিক্রম করেছে ৮৩ দশমিক ২ শতাংশ সময়। বাণিজ্যিক এলাকায় আদর্শ মান (৭০ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে ৬১ শতাংশ সময় এবং শিল্প এলাকায় ১৮ দশমিক ২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৭৫ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে। এছাড়া সমগ্র ঢাকার ১০টি স্থানে ৮২ শতাংশ সময় ৬০ ডেসিবেলের উপর শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায় বলে জানান মীর মোশারফ হোসেন। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকায় শব্দের সর্বোচ্চ তীব্রতা ১১৯ ডেসিবেল, যা জরিপ চালানো বিশ্বের ৬১টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক বলেন, কান বাদ দিয়ে যেমন শ্রবণ হয় না, তেমনি কানে না শুনলে মানুষ কথাও বলতে পারে না। তাই শব্দদূষণ রোধে আমাদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। শুধু আইন প্রয়োগ করে এটি রোধ করা সম্ভব নয়। 
স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দেশে শব্দদূষণ রোধে ও মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতা রক্ষায় ১৪টি সুপারিশ করা হয়েছে। তবে শব্দদূষণ প্রতিরোধ আইনে জেল ও জরিমানার বিধান থাকলেও সেটা প্রয়োগ করা হয় না। শব্দদূষণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, শ্রবণজনিত সমস্যায় সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শব্দ দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম