Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

লুট হচ্ছে লালমাই পাহাড়ের মাটি

বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য * রহস্যজনক কারণে নীরব প্রশাসন

Icon

আবুল খায়ের, কুমিল্লা ব্যুরো

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

লুট হচ্ছে লালমাই পাহাড়ের মাটি

লুট হয়ে যাচ্ছে কুমিল্লায় লালমাই পাহাড়ের মাটি। স্থানীয় প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঐতিহ্য আর কালের সাক্ষী এই পাহাড়ের ২০টি পয়েন্ট থেকে মাটি কেটে আশপাশের বিভিন্ন ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার এ পাহাড় আজ ধ্বংসের মুখে। এই কাজে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না কেউ। পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা সংগঠনগুলোও ভয়ে চুপ। পাহাড়ি জনপদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তথা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও প্রভাবশালীদের ভয়ে তটস্থ। স্থানীয় কয়েকজন জানান, মোস্তফা জামান লিটন নামে এক ব্যক্তি পাহাড়ের মাটি লুটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

জানা যায়, জেলার একমাত্র পাহাড় লালমাই। জেলার আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, লালমাই, বরুড়া ও বুড়িচং উপজেলার অংশজুড়ে বিস্তৃত এ পাহাড়। পাহাড়টির দৈর্ঘ্য আট কিলোমিটার, অংশভেদে গড় প্রস্থ প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ৪৬ মিটার। পাহাড়কে দ্বিখণ্ডিত করে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণাংশ লালমাই এবং উত্তরাংশ ময়নামতি পাহাড় নামে পরিচিত। এ পাহাড়ের পাদদেশে ময়নামতি প্রত্নতত্ত্ব কেন্দ্র, লালমাই লেকল্যান্ড, ব্লু-ওয়াটার পার্ক, ডাইনোসর পার্ক, ম্যাজিক প্যারাডাইসসহ বেশ কিছু পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তাছাড়া কালের সাক্ষী অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তো রয়েছেই। তাই এ পাহাড়কে ঘিরে জেলার বাসিন্দা তথা সারা দেশের পর্যটকদের আগ্রহের কমতি নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মোস্তফা জামান লিটনের ছত্রছায়ায় থাকা কয়েকটি সিন্ডিকেট ভেকু আর ড্রাম দিয়ে দিনে রাতে পাহাড়ের লাল মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এই মাটি লিটনের নিজস্ব পাঁচটি ইটভাটাসহ বিভিন্ন ইটভাটা এবং জলাশয় ভরাটে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক ভেকু মেশিন। এর মাধ্যমে দ্রুত পাহাড়ের মাটি কেটে ফেলা যায়।

সরেজমিন দেখা যায়, লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের লীলামুড়া, বড় ধর্মপুর, চন্ডিপুর, রতনপুর, হরষপুর, রাজারখল, সালমানপুর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকা, সানন্দা, জামমুড়া, রাঙ্গামুড়া, ষাইট কলোনি, খলা, ধনমুড়া বিশাল পাহাড়ের অংশ থেকে বছরের পর বছর মাটি কেটে নেওয়ায় পাহাড়ের বহুস্থান সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকার ২০টি পয়েন্ট থেকে এখনো মাটি কাটা অব্যাহত রয়েছে।

মাটি কাটার কাজে জড়িত ভেকু মেশিন চালক এবং মাটি বহনকারী ড্রামট্রাক চালকরা জানান, লিটন সাহেবের লোকজন মাটি কেটে নিচ্ছে। লালমাই লেকল্যান্ড এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কয়েক দিন পরপর টিনের বেড়া দিয়ে দিনে-রাতে দেদার উঁচু পাহাড় কাটা হয়। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকার উঁচু পাহাড়ের রাস্তার পাশের অংশ কৌশলে ঠিক রেখে পেছনের অংশের মাটি কেটে সমতল করা হয়েছে। এতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

আবার কোথাও কোথাও পাহাড় কেটে গভীর পুকুর বানিয়ে অনেকেই মৎস্য চাষ করছে। এ ছাড়া পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে বাড়ি, মোটেল, বিনোদনকেন্দ্রসহ নানা স্থাপনা। অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটায় প্রতিদিনই কমছে পাহাড়ের আয়তন। এতে ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়ে থাকা মূল্যবান অনেক ফলদ ও বনজ বৃক্ষ। হারিয়ে যাচ্ছে পশু-পাখি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা জামান লিটন বলেন, ‘আমি লালমাই পাহাড়ের মাটি কাটায় নেতৃত্ব দেই না। এলাকার একটি চক্র আমার নাম ব্যবহার করে মাটি কাটছে। পাহাড়ের এক ইঞ্চি মাটিও আমি কাটিনি। তাছাড়া পাহাড়ের মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা যায় না। তিনি বলেন, আমার পাঁচটি ইটভাটা রয়েছে এ কথাটি ঠিক নয়। আমাদের পরিবারের তিনটি ইটভাটা আছে। আমরা মাটি সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে মাটি কিনে ইট তৈরি করছি।’

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মাদ রাজীব বলেন, আমরা পাহাড় কাটায় জড়িতদের তালিকা করছি। এতে স্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিবিদের নামও আসছে। তিনি বলেন, বিগত দিনে লালমাই পাহাড়ের মাটি কাটায় বাধা দিয়ে আমাদের সহকর্মীরা বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন যা গণমাধ্যম কর্মীরা অবগত আছেন। তার পরও দায়িত্ব পালনে আমি পিছপা হব না। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা লাগবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শামীম আলম বলেন, লালমাই পাহাড় আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। এ পাহাড় রক্ষায় অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তাছাড়া যখনই পাহাড় কাটার তথ্য পাই সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল কোর্ট পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম