
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৬ এএম
ঘাটাইল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড
প্রকৌশলীর ঘুস-বাণিজ্য
যোগদান করেই শাহাদত হোসেন বহিরাগতদের নিয়ে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট

খান ফজলুর রহমান, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেড় মাস আগে যোগদান করেই ঘাটাইল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্রয় ও বিতরণ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন জড়িয়ে পড়েছেন ঘুস-বাণিজ্যে। গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি ও মামলার ভয় দেখিয়ে এ বাণিজ্য শুরু করেছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় যুগান্তর অনুসন্ধান করলে ঘুস-বাণিজ্যের এ ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে (সব প্রমাণ যুগান্তরের হাতে রয়েছে)। ভুক্তভোগী নলমা পূর্বপাড়া গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক লুৎফর রহমানের স্ত্রী বলেন, ‘হায়-হায়গো আমার কাছ থেকে কীভাবে টাকা নিল!’ কত টাকা নিয়েছেন তার উত্তরে বলেন, ‘পাঁচ হাজার টাকা নিছে। আরও ১৫শ টাকা পাঠাইতে বলেছে। তারা বিকাশ নম্বর দিয়ে গেছে। টাকার জন্য ওই নম্বর থেকে একদিন ফোনও দিয়েছিল। আমরা গরিব মানুষ বৈধভাবে মিটার এনে বিদ্যুৎ লাইন নিয়েছি। আমাগো একটি ব্যাটারিচালিত অটো আছে। ওইটা চার্জ দেই বলে আমাগো বাড়ি আইসা ধোঁকা দিয়া টাকাগুলো নিয়া গেল।’ কথাগুলো বলতে বলতেই পাশের বাড়ির ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা এগিয়ে এলেন। তিনিও অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাগো কাছ থেকেও চার হাজার টাকা নিছে। এক হাজার টাকার ৪টি নোট দিছি।’ কথা বলতে বলতেই ওই বৃদ্ধার ছেলে হাসেন আলীও এলেন। তিনিও ওই টাকা নেওয়ার কথা দাবি করে বলেন, ‘টাকা না নিয়ে কোনোভাবেই সে গেল না।’ হাসেন আলী তার বাড়ির সামনে বিদ্যুতের একটি ট্রান্সফরমার আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন, ‘লাইন টানানোর সময় এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে ওই ট্রান্সফরমারটি এনেছি।’ পাড়া কুশারিয়া গ্রামের এক নারী বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকেও সাড়ে চার হাজার টাকা নিয়েছে।’ কী কারণে টাকা দিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তা না হলে মামলা দেবে বলে ভয় দেখায়।’ এমন সময় আলমগীর নামে এক ব্যক্তি এলেন। তিনিও টাকা নেওয়ার কথা দাবি করে বলেন, ‘আমরা বৈধভাবে মিটারের মাধ্যমে বিল দেই। তারপরও ধোঁকা দিয়ে আমাদের দুই ঘর থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা নেয়। এছাড়াও ওই গ্রামের সহিদ খানের কাছ থেকে দুই হাজার, সোহেল মিয়ার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছে।’ এভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বলেও জানান তারা। সত্তুর বাড়ি গ্রামের মধু খাঁর ছেলে ইয়াছিন জানান, ‘আমার ছোট একটি খামার আছে। সেখানে প্রতি মাসে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করি সেই ইউনিটের বিল নেওয়ার কথা। কিন্তু অফিস থেকে বিল করে ৩০০ ইউনিটের। মিটার থাকার পরও আমি বেশি বিল দিচ্ছি। গত দুই বছর ধরে এভাবে বিল দিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ সেদিন বিদ্যুৎ অফিসের নতুন এক ইঞ্জিনিয়ার আইসা লাইন কাটার হুমকি দেয়। আমার কাছে সাড়ে সাত হাজার টাকা চায়। পরে আমি তাকে ১৫শ টাকা দেই।’ বগুড়া থেকে এসে ঘাটাইলের বেলুয়াটিকি নামক স্থানে একটি বড় পোলট্রি খামার করেছেন রাশেদ নামে এক ব্যক্তি। সরজমিনে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ওই খামারে কাজ করেন সুজন নামের যুবকের কাছে জানতে চাওয়া হয় কয়েক দিন আগে ঘাটাইল বিদ্যুৎ অফিস থেকে যে লোক এসেছিলেন তারা কোনো টাকা পয়সা নিয়েছেন কিনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টাকা ছাড়াই কি গেছে। তবে কত টাকা নিছে এটা আমার জানা নেই।’ খামারের মালিক রাশেদ মিয়া বলতে পারবেন বলে জানান। পরে বুধবার তার মোবাইলে ফোন করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বেলুয়াটেকী গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এছাড়া নলমা বাজারের একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শাহাদত হোসেনের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘাটাইল বিদ্যুৎ ক্রয় ও বিতরণ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন যোগদান করেছেন দেড় মাস আগে। তিনি যোগদান করার পরই বহিরাগতদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। অভিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে লাইন কেটে দেন। পরে বারবার চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি। অবশেষে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ২টায় বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে সামনাসামনি প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে ‘আমার সময় নেই’ এ কথা বলে চেয়ার থেকে উঠে দ্রুত কেটে পড়েন তিনি।