Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

দাউদকান্দি ট্রমা সেন্টার

দুর্ঘটনায় আহতদের পরিবর্তে চিকিৎসা হয় সর্দি-কাশির

Icon

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা দিতে দাউদকান্দির শহীদনগরে নির্মাণ করা হয় ট্রমা সেন্টার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ২০০৬ সালে বিশেষায়িত হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। উদ্বোধনের কয়েক মাস পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে বন্ধ হয়ে যায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি। ২০১০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রমা সেন্টারটি উদ্বোধন করা হয়। তবে পুরোপুরি চালু হয়নি এটি। বহির্বিভাগে সীমিত আকারে চলছে চিকিৎসাসেবা। স্থানীয়রা জানান, ব্যবহার না থাকায় ট্রমা সেন্টারের অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে। ১৮ বছর পার হয়ে গেলেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দিতে স্থাপিত বিশেষায়িত হাসপাতালটি কার্যত বন্ধ রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। দুর্ঘটনায় আহতদের পরিবর্তে মাথাব্যথা, জ্বর ও সর্দি-কাশির চিকিৎসা হয় এখানে। জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে হাসপাতালটি নির্মাণে ব্যয় হয় ছয় কোটি ৮৮ লাখ টাকা। উদ্বোধনের পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে কয়েক মাস পরই সেন্টারটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী আনম রুহুল হক দ্বিতীয়বারের মতো ট্রমা সেন্টারটি উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে বহির্বিভাগে সীমিত পরিসরে চলছে চিকিৎসাসেবা। সেন্টারটির চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, ট্রমা সেন্টারের সীমানা প্রাচীর নেই। স্টাফদের আবাসিক ব্যবস্থা থাকলেও দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় তা জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। খাবার পানির সংকটও রয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও রোগী ভর্তির ব্যবস্থাও নেই এখানে। সরজমিনে দেখা গেছে, ট্রমা সেন্টারটির তিনতলা ভবনের নিচতলায় জরুরি বিভাগ ও চিকিৎসক-নার্সদের কক্ষেই চলছে সেবা কার্যক্রম। দোতলা ও তিনতলায় তৎকালীন সময়ের আধুনিক কাঠামোয় কক্ষগুলো নির্মাণ হলেও এখন দেওয়ালের প্লাস্টার ধসে পড়ছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও মরিচা ধরেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা জানান, শুধু রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘ ১৮ বছর আলোর মুখ দেখেনি প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালটি। অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, সিসিইউ, রোগী থাকার মতো সব ব্যবস্থাসহ তিনতলা ভবন থাকলেও সবই পড়ে রয়েছে। ব্যবহার না থাকায় ট্রমা সেন্টারের অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে। বিএনপি আমলে নির্মিত হওয়ায় আ.লীগ আমলে হাসপাতালটি কারো সুনজরে পড়েনি। মানবিক দাউদকান্দি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক রুবেল বলেন, রাজনীতি থাকবে রাজনীতির জায়গায় কিন্তু জনগণের অর্থে নির্মিত সেবাপ্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ থাকবে। এটা হতে পারে না। আমরা চাই দ্রুত হাসপাতালটি চালু করা হোক। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষেও সম্ভব হাসপাতালটি চালু করা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে এমন ২১টি ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ১০টি ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ও ১১টি ২০১০ সালে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মহাসড়কের পাশে ট্রমা সেন্টার নির্মাণের উদ্দেশ ছিল দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত সেখানে নিয়ে যাওয়া এবং চিকিৎসা দেওয়া, যাতে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়। প্রতিটি ট্রমা সেন্টারে সাতজন পরামর্শক চিকিৎসক (কনসালট্যান্ট), তিনজন অর্থোপেডিকস সার্জন, দুজন অ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিদ), দুজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ ১৪ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স এবং ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, টেকনিশিয়ানসহ ৩৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সেন্টারেই পদ অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরঞ্জামও দেওয়া হয়নি। সার্বিক বিষয়ে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জনবল, অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, সিসিইউ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় ট্রমা সেন্টারটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তালিকা দেওয়া হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম