সাইনবোর্ড আছে, নেই গণকবরস্থান
রামগতিতে কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ
শাহরিয়ার কামাল ,কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নদীর ওই পারে কোনো বাড়িঘর নেই। রাস্তাঘাটও নেই। নদীর উপর ব্রিজও নেই। কিন্তু হঠাৎ দেখি গণকবরস্থানের একটি সাইনবোর্ড। মানুষ মারা গেলে কবর দিতে ওই পারে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। সরকারি টাকা লুটপাট করে খাওয়ার আয়োজন ছাড়া আর কিছুই নয়! যুগান্তরের এ প্রতিবেদককে ঠিক এমনটিই বলছিলেন স্থানীয় ফয়সাল আহমেদ নামের এক যুবক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উন্নয়ন সহায়তা তহবিল থেকে অতিদরিদ্র কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় গণকবরস্থানের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা (রূপরেখা) তৈরি করে রামগতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জহিরুল ইসলাম। ওই প্রস্তাবনা গ্রহণ করে ৬০ জন শ্রমিক দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে ৩৩ দিন কাজ করার বিপরীতে ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকার একটি বাজেট বরাদ্দ অনুমোদন করেন নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন।
গণকবর নির্মাণ বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তারহীদ রাব্বানী তুহিনকে।
চরবাদাম ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রোকসানা বেগমকে করা হয় প্রকল্পের সভাপতি। পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া সই-স্বাক্ষর দিয়ে সমুদয় টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তুহিনের নেতৃত্বে লোকদেখানো কয়েকজন শ্রমিক ও ভেকু মেশিন ব্যবহার করে ভুলুয়া নদী থেকে মাটি কেটে নদীর পাড়েই যৎসামান্য অংশ ভরাট করেছেন। সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মাটি ভরাট করে রাতের আঁধারে গণকবরস্থানের সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন খরচ হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, নামকাওয়াস্তে কাজ দেখিয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পুরো বরাদ্দটাই আত্মসাৎ করেছেন। এখানে পুকুর নয় সাগর চুরি হয়েছে বলে জানান তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তারহীদ রাব্বানী তুহিন জানান, গণকবরস্থান নির্মাণের কাজটি আমি করিয়েছি ঠিকই; কিন্তু সব বিষয়ে ইউএনও নিজেই দেখভাল করেছেন। এখন আবার মাটি ভরাট করতে নির্দেশ দিয়েছেন পিআইও। আপনারা ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেন। আমি এর বেশি কিছু বলতে পারব না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি রোকসানা বেগমের সঙ্গে কথা বলতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
প্রকল্পের সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে সিডিএসপি কলোনিতে স্থান নির্ধারণ করা হয়। পরে সেটা পরিবর্তন করে খালপাড়ে নেওয়া হয়। আবার ইউএনও’র নির্দেশে ভুলুয়া নদীর পাড়ে নেওয়া হয়। সেখানে সাইনবোর্ডও রয়েছে।