অটোরিকশার ধাক্কায় জাবি ছাত্রী নিহত
‘জাহাঙ্গীরনগর ব্লকেড’ কর্মসূচি
ডেপুটি রেজিস্ট্রারসহ বরখাস্ত ৪ * ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ * নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ ৮ দফা দাবি শিক্ষার্থীদের
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফসানা করিম রাচি নিহত হওয়ার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে বুধবার ‘জাহাঙ্গীরনগর ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। এ সময় প্রধান ফটকে ছাড়াও জয় বাংলা গেট (প্রান্তিক গেট) তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকগুলো দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। কর্মসূচি থেকে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানানো হয়। অবস্থা কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীদের ‘আমার বোন মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘আমরা সবাই রাচির ভাই, রাচি হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাহিরে?’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বোন রাচির মৃত্যুর প্রতিবাদে এই ব্লকেড কর্মসূচি। মঙ্গলবার প্রশাসন থেকে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করে শোক ঘোষণার আগেই আমরা ৫৩তম ব্যাচ সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছি। পাশাপাশি নিহতের ঘটনায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ আট দফা দাবি জানিয়েছি। এসব দাবি পূরণে প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নিলে টানা সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করব। তারা আরও বলেন, যে চাকায় আমার বন্ধু লাশ হয়েছে, তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোনো চাকা ঘুরবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটে দায়িত্বরত গার্ড পারভেজ জানায়, শিক্ষার্থীরা সকালে গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ফলে সকাল থেকে কোনো যানবাহন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারেনি।
এদিকে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট) আব্দুর রহমান বাবুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তার স্থলে পরিবহণ অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল কাশেমকে সাময়িকভাবে এস্টেট অফিসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া, সহকারী সুপারভাইজার মো. আবদুস সালাম ও ডিউটি গার্ড মনসুর রহমান প্রামাণিককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এছাড়া বুধবার সকাল থেকে এক দিনের শোক দিবস পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত ও সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। পরিবহণ অফিসের সব বাস-গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। দুপুর ২টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আফসানা করিম রাচির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জাবি শাখা। অন্যদিকে সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যানবাহনের জন্য সচেতনতামূলক ব্যানার সাটিয়ে দিয়েছে শাখা ছাত্রদল। শাখা শিবিরের সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি বলেন, কিছুদিন আগে ক্যাম্পাসে আসা একটি নতুন প্রাণ তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই ঝরে গেল, যা সবাইকে মর্মাহত করেছে। মৃত্যু সত্য হলেও সব মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টকর। রাচির আত্মার মাগফিরাতের জন্য আমরা নামাজ শেষে দোয়া করেছি। আর কোনো প্রাণ যাতে এভাবে ঝরে না যায়, সে কামনা করেন তিনি। উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার শোকাহত। ইতোমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রিকশাচালককে শনাক্ত করা হয়েছে। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের সামনে অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কায় আফসানা করিম রাচি আহত হন। পরে তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে নেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।