Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি

ঠাকুরগাঁওয়ে সার সংকট বেশি দামে বীজ বিক্রি

Icon

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বেশিরভাগ কৃষক। চলতি রবি মৌসুমে শীতকালীন শাকসবজি, ভুট্টা, আলু, গম, সরিষা ও বোরো আবাদে সার সংকটে রয়েছেন চাষিরা। অন্যদিকে দ্বিগুণ দাম দিয়ে আলু বীজ কিনতে হচ্ছে তাদের। গত বছর প্রতি কেজি আলু বীজ ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার দ্বিগুণ দামে তা বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কোনো কোনো দোকানে পটাশ সার মিললেও তা সরকারি দামের চেয়ে বস্তায় ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে চাষিদের। কৃষকদের অভিযোগ, অনেক ডিলারের কাছে পটাশ (এমওপি) সার পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের কাছে পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, এর জন্য সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা দায়ী। একপর্যায়ে তিনি বলেন, হাসিনা পালালেও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা তো পালায়নি। রফিকুলের কথা কেড়ে নিয়ে পাশের গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, আমাদের যে দুর্ভোগ, সে দুর্ভোগ রয়েই গেছে। সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, কৃষি ছাড়া আমাদের কোনো জীবিকার পথ নেই। মাটি কামড়িয়ে আদিম পেশা এখনো ধরে আছি আমরা। তবে আর কতদিন। উৎপাদন খরচ যেভাবে বাড়ে, হিসাবের খাতায় আসলের চেয়ে ঘাটতি বেশি আমাদের। কাঁঠালডাঙ্গী বাজারের বিএডিসির সার ও বীজ ডিলার আব্দুর রশিদ বলেন, চাহিদার তুলনায় পটাশ সরবরাহ কম। এলাকায় আগাম আলু ও ভুট্টা চাষ শুরু হয়েছে, কিন্তু আমরা কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী পটাশ দিতে পারছি না। সদর উপজেলার শিবগঞ্জ বাজারের খুচরা সার ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক একই অভিযোগ তোলেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সার ও বীজ ডিলার বিশ্বনাথ রায় অভিযোগ করে বলেন, ডিলাররা এবার ভোগান্তিতে পড়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের মাদারগঞ্জ থেকে এর আগে আমরা সার উত্তোলন করতাম। এবার রবি মৌসুমে দিনাজপুরের বিরামপুর ও নসিবপুর থেকে সার উত্তোলন করতে হচ্ছে। এতে সময় ও পরিবহণ খরচ বেশি লাগছে। সময় বেশি লাগায় ঠাকুরগাঁওয়ে সার পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় কৃষকদের ঘরে সার যেতে সময় লাগছে।

এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও বিএডিসি (সার) অতিরিক্ত পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, নতুন গুদামঘর ও অফিস ভবন নির্মাণের কারণে দিনাজপুর থেকে সার উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এটি সাময়িক সমস্যা। দ্রুত তা কেটে যাবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় বিসিআইসি ও বিএডিসির পরিবেশক (ডিলার) রয়েছেন ২০৯ জন। তাদের মধ্যে চলতি মাসে সার চাহিদা দেওয়া হয়েছে ইউরিয়া ১২ হাজার ৮২৮ টন। এর বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে পাঁচ হাজার ৫৫৮ টন। পটাশ এক হাজার ৪২৬ টন, মিলেছে পাঁচ হাজার ৩২৯ টন। টিএসপি ৯ হাজার ৭৩৮ টন, মিলেছে দুই হাজার ৪৭৭ টন। ডিএপি সাত হাজার ২৫২ টন, সরবরাহ মিলেছে পাঁচ হাজার ৯৩৬ টন। বিআইসির পরিবেশকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের ঠাকুরগাঁয়ের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুলাল বলেন, সরবরাহ বাড়লে কৃষকের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। এবার জেলায় ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর আলু, ২০ হাজার হেক্টর সরিষা, ৪০ হাজার হেক্টরে ভুট্টা, ৩১ হাজার ৫০০ হেক্টরে গম ও শাকসবজিসহ অন্য ফসলের ৭৫৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম সার সংকটের কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা, দাম বেশি নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম