ভাড়া বইয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি
মানিকগঞ্জে ভুয়া কাজিদের দৌরাত্ম্য
মো. নুরুজ্জামান, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নেই কাজির সনদ। ভাড়া বই দিয়ে চলছে নিকাহ রেজিস্ট্রি। একাধিকবার হয়েছেন কারাবাসী। তবুও থেমে নেই ভুয়া কাজী মামুনের কার্যক্রম। ভাড়ায় বই নিয়ে নিকাহ ও তালাক রেজিস্টারে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চললেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ভুয়া কাজি মামুন বেপারি সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাজী শফিকুল ইসলামের বই ভাড়া এনে জজকোর্ট এলাকায় এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায় নিকাহ ও তালাকের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কাজি মামুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেছেন। কারাগার থেকে বের হয়েই দেদার চালিয়ে যাচ্ছেন নিকাহ রেজিস্ট্রার কার্যক্রম। নিকাহ রেজিস্ট্রার বিধি অনুযায়ী, সহকারী নিয়োগ, নিজ এলাকার বাইরে নিকাহ রেজিস্ট্রি, রেজিস্টার বই ভাড়া দেওয়ার বিধান না থাকলেও কাজি শফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে ভুয়া কাজি মামুনের কাছে বই ভাড়া দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশি টাকা আয়ের লোভে জেলার একাধিক নিকাহ রেজিস্ট্রার আইন অমান্য করে মানিকগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণ ঘিরে কিছু সংখ্যক অসাধু আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে ভুয়া নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রি কার্যক্রমের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। কেউ কেউ আবার নিকাহ রেজিস্ট্রারের সহকারী হিসাবে কিছুদিন কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর নিজেই নিকাহ এবং তালাক রেজিস্ট্রির কার্যক্রম চালাচ্ছেন। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের আব্দুস সালাম, কৃষ্ণপুরের নুরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মো. মনিরুজ্জামান, পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের মোশারফ হোসেনসহ আরও অনেক কাজি নিজ নিজ এলাকায় নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ এ পেশাকে পুঁজি করে কিছু লোক অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এদের মধ্যে বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের আব্দুস সালাম নিজ ইউনিয়ন ছেড়ে পৌর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে কিছু আইনজীবীর সহকারীদের মাধ্যমে নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রি করছেন। কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আংশিক কাজী নুরুল ইসলামের বই নিয়ে কাজ করছেন লিটন।
এদের মধ্যে কাজি মো. মনিরুজ্জামান, ভুয়া কাজি মামুন বেপারি বাল্যবিয়ে পড়ানোর অপরাধে একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও থেমে নেই তাদের অবৈধ কার্যক্রম।
নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার আইন অনুযায়ী-নিকাহ রেজিস্ট্রির পূর্বে বর ও কনের বিয়ের জন্য আইনগত বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জম্ম নিবন্ধন সনদ বা অন্যান্য সনদ যাচাই না করেই বিয়ে নিবন্ধন করেন তারা। এছাড়া নিকাহ রেজিস্ট্রি করে ফি গ্রহণ বাবদ রেভিনিউ স্ট্যাম্পে সইযুক্ত রসিদ প্রদান করার নিয়ম থাকলেও মানা হচ্ছে না এসব বিধিবিধান। কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাজি শফিকুল ইসলাম বলেন, মামুন কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বারাহিরচর এলাকায় আমার অফিসে থাকে। সে এখানে কাজ করতে পারবে। মামুন জজকোর্ট এরিয়ায় কাজ করতে যাবে কেন? কাজির আইনে সহকারী বা বই ভাড়া দেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি উত্তেজিত হয়ে ফোন কেটে দেন।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাজি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমি আইন মেনেই নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাজ করি। জজকোর্ট এলাকার কাজি না থাকায় আমি কিছু কাজ করি। বেশি কাজ করে মামুন। অথচ মামুন অনিবন্ধিত কাজি। তিনি কোথায় থেকে বই এনে কাজ করেন আমরা জানি না।
অভিযুক্ত অনিবন্ধিত কাজী মামুন বেপারি বলেন, আমি শফিকুল ইসলামের সবকয়টি ওয়ার্ডের দায়িত্বে। আপনাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি নিয়োগ দেয় কেমনে বলে ফোন কেটে দেন। মানিকগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মো. নাহিদ হোসেন বলেন, এরকম অভিযোগ আমিও পেয়েছি। অনিবন্ধিত কাজিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি না। ইতোমধ্যে আমি কাজী শফিকুল ইসলামকে নোটিশ করেছিলাম। কাজিদের নিজ এলাকার বাইরে কোনো নিকাহ রেজিস্ট্রি করার ক্ষমতা নেই। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।