Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

অদম্য মেধাবীদের গল্প

আঁধার পেরিয়ে আলোকিত স্বপ্ন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আঁধার পেরিয়ে আলোকিত স্বপ্ন

জিপিএ-৫ পেয়েও উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় যারা

দরিদ্রতা কিংবা দুর্গম এলাকায় বসবাস কোনো প্রতিবন্ধকতাই থামিয়ে রাখতে পারেনি ওদের। মেধা, পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি এই তিন মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তারা জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। তবে অর্থাভাবে মাধ্যমিকে ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে তারা এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছে। স্বপ্ন পূরণে তারা প্রশাসন কিংবা বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন। এমন অদম্য মেধাবীদের যুগান্তরের নাটোরের বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি অহিদুল হক, বান্দরবান (দক্ষিণ) প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া প্রতিনিধি আবুল হাশেমের পাঠানো খবর :

সংসারের ঘানি টেনেও জিপিএ-৫ পেয়েছে মুহিব : বাবা থেকেও নেই। কারণ, তিনি কোনো খরচপাতি দেন না, এমনকি খোঁজও নেন না। তাই বাধ্য হয়ে মুজাহিদ হাসান মুহিবকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। এমন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মুহিব বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। মুহিব বড়াইগ্রামের লক্ষ্মীকোল গ্রামের কামরুল হাসানের ছেলে। জানা যায়, বছর দেড়েক আগে তার বাবা তাদের ফেলে চলে যান। এতে মা ও ছেলে চরম বিপাকে পড়েন। পরে সংসারের ব্যয় মিটাতে লক্ষ্মীকোল বাজারে ভুষিমালের ব্যবসা শুরু করে মুহিব। ছুটির দিনে সারা দিন আর অন্য সময়ে সকাল-বিকাল দোকান চালিয়ে রাতে পড়াশোনা করত সে। তার স্বপ্ন বড় হয়ে সেনা কর্মকর্তা হওয়ার। তার মা মাসুদা খাতুন বলেন, মুহিবকে নিরবচ্ছিন্ন পড়ার সুযোগ দিতে পারলে সে আরও ভালো কিছু করতে পারত। কিন্তু আমার তো সে সুযোগ নেই।

জিপিএ-৫ পেয়েও মাধ্যমিকে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আলেয়া : ‘বাবা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স ৬ বছর। এরপর ক্লাস নাইনে ভর্তি হওয়ার সময় আম্মুও খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায়। তবে, আল্লাহর অশেষ রহমতে এবার চাম্বি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এসএসসিতে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছি। এই অভাব অনটনের সংসারে জানি না ভবিষ্যতে কতটুকু সামনে যেতে পারব।’ অশ্রুভেজা চোখে অনিশ্চিত জীবনের কথাগুলো বলছিল বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের আলেয়া বেগম। সে সন্দীপপাড়া এলাকার মো. আলাউদ্দিনের মেয়ে। আলেয়া ও তার ছোট বোন নানির একই এলাকার দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় যেখান থেকে পড়াশোনা করছে। আলেয়ার মা চট্টগ্রাম শহরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। নানির কাছ থেকে কোনমতে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হলেও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আলেয়া।

আঁধার ঘরে খায়রুল যেন আলোর প্রদ্বীপ : ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার রায়কান্দুলিয়া গ্রামের বর্গাচাষী ইদ্রিস আলী। অন্যের জমি চাষ করে আবার কখনও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান তিনি। এবার তার ঘরে যেন আলোর প্রদ্বীপ জ্বলেছে। তার ছেলে খায়রুল ইসলাম পোড়াকান্দুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। অন্যের সহযোগিতায় এসএসসির ফরম পূরণ করলেও এবার এইচএসসিতে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় খায়রুল। খায়রুল ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে অসহায় মানুষের সেবা করতে চায়।

দারিদ্র্য জয় করে শিক্ষক হতে চায় কুলসুমা : দরিদ্র পরিবার থেকে বেড়ে উঠা কুলসুমা খাতুন। ধোবাউড়ার পোড়াকান্দুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে মানবিক বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া এই অদম্য মেধাবীর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শংকা। কুলসুমার বাবা ইয়াকুব আলী ছোট একজন পান ব্যবসায়ী। তিন মেয়েকে পড়াশোনা করাতে গিয়ে আর্থিক টানাপোড়েনে পড়েন তিনি। এ পরিস্থিতিতে কুলসুমাকে এইচএসসিতে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। কুলসুমা খাতুন পড়াশোনা করে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হতে চায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম