মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ায় মত্ত তরুণরা
দুই মাসে ৩৩ জন আটক
তোজাম্মেল আযম, মেহেরপুর
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অনলাইন জুয়ায় মেতেছে মেহেরপুর জেলার তরুণরা। সম্প্রতি অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সদর দপ্তর ও মেহেরপুর সাইবার অপরাধ বিভাগ ৩৩ জনকে আটকের পর এমনই তথ্য মিলেছে। এ ঘটনার পর এলাকায় অনলাইন জুয়া নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা যায়, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর, যতারপুর, গোপালপুর, সদর উপজেলার ইসলামপুর, বারাদি, দরবেশপুর, গাংনী উপজেলা সদর, ভোমরদহসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অনলাইন জুয়ায় ঝুঁকে পড়েছে তরুণরা। দুই মাসে এই জুয়ায় জড়িত ৩৩ জনকে গ্রেফতার করলেও আটক হয়নি যাদের ছত্রছায়াতে অনলাইন জুয়া পরিচালিত হচ্ছে তারা। অনলাইন জুয়ায় অনেকে একদিকে নিঃস্ব থেকে কোটিপতি হয়েছে আবার অনেকে হয়েছে সর্বস্বান্ত। জেলার গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, রাশিয়াভিত্তিক অনলাইনে ২৩১টি সাইটে হাজারখানেক যুবক জড়িত।
প্রতি মাসে ৪শ কোটি টাকা সেদেশে পাচার করছে এসব জুয়ার সঙ্গে জড়িতরা। এই হিসাবে গত এক বছরে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে। আটকদের মধ্যে রয়েছে মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর গ্রামের নিমাই হালদার, গোপালপুর দক্ষিণপাড়ার বদরুদ্দোজা ওরফে রয়েল, কোমরপুর গ্রামের প্রসেনজিৎ হালদার, শামীম রেজা, সুমন আলী, মাহফুজুর রহমান ওরফে নবাব, সাদ্দাম হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, নিমাই হালদার, নুরুজ্জামান ওরফে জামান মাস্টার, মুকুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম ওরফে লালন মাস্টার, মাদার আলী ওরফে মাদার মাস্টার, গোপালপুর গ্রামের পলাশ, গাংনী উপজেলা শহরের উত্তরপাড়ার মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি শাহিদুজ্জামান শিপু, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের গাংনী উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা জুবায়ের হোসেন উজ্জ্বল, বিপুল হোসেন চঞ্চল হোসেন, জিয়াউর রহমান এবং গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের অফিস সহকারী রবিউল ইসলাম। স্থানীয়ভাবে ও গোয়েন্দা সংস্থার মতে সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যান, সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতা, সরকারি কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল ও কলেজ শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোক এই জুয়ার সঙ্গে জড়িত। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন মহল জুয়ার সঙ্গে জড়িতদের কাছ থেকে সপ্তাহ আদায় করেন বলে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে স্বীকার করেছে। মেহেরপুর জেলা ডিবি পুলিশের ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, জোর তৎপরতা চলছে জুয়ার সঙ্গে জড়িতদের আটকের জন্য। আটকরা ‘ওয়ান এক্সবেটের’ জুয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ার টাকা লেনদেন হতো বলে সিআইডির কাছে স্বীকার করেছেন। মেহেরপুরের পুলিশ সুপার রাফিউল আলম বলেন, আটকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে সাইবার অপরাধ বিভাগ নামে একটি বিভাগ করেছি। এই বিভাগের মাধ্যমে তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া মেহেরপুরে যেন এই ধরনের অপরাধে আর কেউ না জড়ায় সে জন্যও কঠোর নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ।
