ঐতিহ্য রক্ষায় অ্যাস্টন মার্টিনের সাহসী পরিকল্পনা

অটোটেক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্ব যখন দ্রুত বৈদ্যুতিক যানবাহনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন গাড়ি নির্মাতা বিখ্যাত কোম্পানি অ্যাস্টন মার্টিন তাদের গর্বের প্রতীক V12 ইঞ্জিনকে রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রতিষ্ঠানটির নতুন সিইও, অ্যাড্রিয়ান হলমার্ক, দায়িত্ব নেওয়ার পরই ঘোষণা দিয়েছেন, তারা ২০৩০ সালের পরও এ ঐতিহ্যবাহী ইঞ্জিন চালু রাখার পরিকল্পনা করছেন। ছোট পরিসরে উৎপাদনের কৌশল এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে অ্যাস্টন মার্টিন তাদের ক্লাসিক ইঞ্জিন সংরক্ষণের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইলেকট্রিক গাড়ির যুগেও V12-এর টিকে থাকার লড়াই : এক সময় অ্যাস্টন মার্টিন ঘোষণা করেছিল যে, তারা ২০২৬ সালের মধ্যেই তাদের প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আনবে। কিন্তু নতুন সিইওর অধীনে কোম্পানির কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। এখন তাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে প্রথম ইভি (EV) উন্মোচন করা, তবে দ্রুত পুরোপুরি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে ধাপে ধাপে ইলেকট্রিফিকেশনকে গ্রহণ করা।
হলমার্কের মতে, ‘একটি ছোট কোম্পানি হিসাবে হঠাৎ করেই সম্পূর্ণ ইভিতে চলে যাওয়া আমাদের জন্য বড় ঝুঁকি। কারণ অ্যাস্টন মার্টিনের পরিচয় গড়ে উঠেছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন V12 এবং V8 ইঞ্জিনের ওপর।’
বিশেষ সংস্করণে বেঁচে থাকবে V12 : বিশ্বজুড়ে কঠোর পরিবেশগত বিধিনিষেধ কার্যকর হলেও, অ্যাস্টন মার্টিন স্মার্ট উৎপাদন কৌশলের মাধ্যমে তাদের প্রিয় V12 ইঞ্জিন সংরক্ষণ করতে চায়। তারা স্বল্প পরিসরের উৎপাদনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিশেষ সংস্করণের গাড়ি তৈরি করবে, যা কম সংখ্যায় উৎপাদিত হলেও ব্র্যান্ডটির গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখবে। হলমার্ক বলেন, ‘২০৩৫ সালের পরও আমরা V8 এবং অন্যান্য শক্তিশালী ইঞ্জিন চালু রাখতে পারব। তবে ২০৩০-এর পর থেকে V12 ইঞ্জিনের সংখ্যা কমিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিশেষ সংস্করণ চালু করা হবে, যার সংখ্যা হয়তো ১০০-১৫০-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।’
ভবিষ্যতের বিকল্প জ্বালানি-ই-ফুয়েল : অ্যাস্টন মার্টিন প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসাবে ই-ফুয়েল (E-Fuel) নিয়ে কাজ করছে। ই-ফুয়েল এমন একটি প্রযুক্তি, যা বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনকে আরও পরিবেশবান্ধব করে তুলতে পারে। ইতোমধ্যে পোরশে এবং ফর্মুলা ১ এই প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। হলমার্ক বলেন, ‘ই-ফুয়েল চমৎকার একটি প্রযুক্তি, কিন্তু এটি এখনো ব্যাপক উৎপাদনের পর্যায়ে পৌঁছেনি। যদি অন্যান্য সেক্টরগুলো, যেমন এভিয়েশন ও পরিবহন, এ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে ই-ফুয়েল আরও কার্যকর সমাধান হতে পারে।’
ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংযোগ : অ্যাস্টন মার্টিনের বর্তমান কৌশল স্পষ্ট : তারা বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে এগোচ্ছে, তবে তাদের ঐতিহ্যবাহী V12 ইঞ্জিনকেও ধরে রাখতে চায়। এটি শুধু ব্র্যান্ডের পরিচয়ের অংশ নয়, বরং এটি তাদের বিশ্বস্ত গ্রাহক ও ভক্তদের আবেগের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। হলমার্ক বলেন, ‘আমাদের V12 ইঞ্জিনের অনুরণন প্রযুক্তিগত ও আবেগগতভাবে অসাধারণ। এটি আমাদের ব্র্যান্ডের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং আমরা যতদিন সম্ভব এটি চালু রাখবো।’
যদিও ইভি প্রযুক্তির দিকে বিশ্বের গাড়ি নির্মাতারা ঝুঁকছে, অ্যাস্টন মার্টিন তাদের গৌরবময় অভিজাত ইঞ্জিনগুলোর সম্মান রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্থাটি হাইব্রিড প্রযুক্তি, স্বল্প উৎপাদনের কৌশল এবং ই-ফুয়েলের মতো উদ্ভাবনী সমাধান ব্যবহার করে V12 ইঞ্জিনকে আরও বহু বছর ধরে টিকিয়ে রাখতে চায়।