
প্রিন্ট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০২ এএম
গানে গানে বৈশাখ
বাংলা নববর্ষে বৈশাখী মেলাই থাকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির সেরা আকর্ষণ। বাঙালি সংস্কৃতিকে ধারণ করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা উপভোগ করেন নানা অনুষ্ঠান। সেসব অনুষ্ঠানে থাকে নাচ আর শ্রোতাপ্রিয় গানের সমাহার। কোন গানগুলো আজ শুনবেন শ্রোতারা। সেসব গানকে স্মরণ করিয়ে দিতেই এ প্রতিবেদন।

সেলিম কামাল
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন। প্রতি বছরের মতো এবারো বাংলাদেশের মানুষ মেতে উঠবে বর্ষবরণ উৎসবে। বাঙালিরা সপরিবরে শামিল হবেন দেশীয় ঐতিহ্যময় অন্যতম কৃষ্টির সর্বজনীন এ উৎসবে। তারা সম্পৃক্ত হবেন নানা আয়োজনে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনুষ্ঠানগুলোতে হাজির হয়ে শুনবেন চিরাচরিত বৈশাখী গান-‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। যুগের পর পর যুগ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গান যেন বোশেখের অপরিহার্য দলীয় সংগীত। এ গানের পরই একে একে স্থানীয় শিল্পীরা গাইতে থাকেন বাঙালি সংস্কৃতিকে ধারণ করার যত গান। শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে বোশেখের গানের বাইরে শিল্পীরা গেয়ে থাকেন ঢোল, খোল আর মন্দিরার বাজনাসমৃদ্ধ বিবিধ জনপ্রিয় চিরাচরিত লোকজ সংগীতগুলো। অনুষ্ঠানগুলোতে থাকে জারি-সারি আর বাউল গানের উদ্দাম পরিবেশনা।
পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের আর যেসব গান শোনা যায়-সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নব আনন্দে জাগো, আজি নব রবি কিরণে’, ‘জাগো নতুন প্রভাত জাগো’, ‘নতুন সূর্য আলো দাও’, ‘আলোকের এ ঝর্ণাধারায়’, ‘হে নূতন দেখা দিক’, ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’, ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ প্রভৃতি। পাশাপাশি নজরুলের গানও এ দিনে প্রচুর গাওয়া হয়। বিশেষ করে ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর, ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়’ গানটি কোনো অনুষ্ঠানেই বাদ যায় না। তবে বোশেখের গান হিসাবে নজরুলের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ গান-‘এলো এলো রে বৈশাখী ঝড় এলো রে/ ওই বৈশাখী ঝড় এলো এলো মহীয়ান সুন্দর/ পাংশু মলিন ভীত কাঁপে অম্বর চরাচর থরথর’। কবি এই গানে কালবৈশাখী ঝড়ের রূপকে দেখছেন ভয়ংকর সুন্দরের প্রতীক হিসাবে। বৈশাখী ঝড়ের ভয়ংকর রূপের ভেতরে যে সৌন্দর্য বিরাজ করে, কবি তাকে বলেছেন মহীয়ান সুন্দর।
রবীন্দ্র-নজরুলের গানের বাইরেও পহেলা বৈশাখ নিয়ে বহু মৌলিক গান বাংলাদেশে এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে এমন কিছু গান আছে, যেগুলো দেশের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই গাইতে শোনা যায়। ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে ফিডব্যাকের মাকসুদ গেয়েছেন ‘মেলায় যাইরে’ গানটি। পরের বছর থেকেই গানটি বিটিভির ফিলার সঙ হওয়ায় তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। গানটির প্রথম লাইন ‘জেগেছে বাঙালির ঘরে ঘরে একি মাতম দোলা’ হলেও এটি ‘মেলায় যাইরে’ হিসাবেই পরিচিতি লাভ করে। ২০০৬ সালে আসিফের গাওয়া ‘রমনার বটমূলে দেখা হবে প্রাণ খুলে’ গানটি শ্রোতাদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। এরপর মেহরীন গেয়েছিলেন, ‘ঢোল বাজে ঢোল বাজে বাংলাদেশের ঢোল’ গানটি। তবে নতুন শতাব্দীতে সোনিয়ার গাওয়া ‘বাজেরে বাজে ঢোল আর ঢাক, এলো রে এলো পহেলা বৈশাখ’ গানটিও দারুণভাবে জনপ্রিয়তা পায়। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, ‘ঢোল’ বা ‘ঢাক’ শব্দগুলো জুড়ে দিলেই যেন বাঙালি শ্রোতা যেন সে গান গোগ্রাসে ‘গিলতে’ থাকে। কিরণ চন্দ্র রায়ের গাওয়া ‘আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই, বাংলাদেশের ঢোল/ আমি সব ভুলে যাই, তাও ভুলি না বাংলা মায়ের বোল’ গানটিও বৈশাখী অনুষ্ঠানের গান হিসাবে শ্রোতার কাছে কদর পেয়েছে। কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘মনের টানে আইসো কন্যা’ বোশেখের গান হিসাবেই বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু তার গাওয়া ‘একদিন বাঙালি ছিলাম রে’ গানটিও বৈশাখী অনুষ্ঠানের গান হিসাবে শ্রোতার কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এন্ড্রু কিশোরের ‘বৈশাখে তোমার সাথে হইল আমার পরিচয়’, মনির খানের গাওয়া ‘বৈশাখেরই প্রথম দিনে অঞ্জনা’, ‘আরে ও বাঙালি’, ‘বৈশাখে কান্দি আমি’, আকাশের গাওয়া ‘বৈশাখের বিকেল বেলায়, তোমায় নিয়ে বকুলতলায়, প্রেমের একখান গান শোনাব’, বালাম ও জুলির ‘এলো বৈশাখ বৈশাখ’, এস.ডি রুবেলের ‘রঙে রঙে রঙিন বৈশাখ’, ‘লাল পাড় শাড়ির আঁচল’, ‘কাঁচা মরিচ কাঁচা পেঁয়াজ’, কর্নিয়ার ‘শুভ নববর্ষ’, ইশতিয়াকের ‘আইলো রে আইলো রে, রঙে ভরা বৈশাখ’, সন্দীপনের ‘ও ঢাকি বাজারে ঢাক, বছর ঘুরে এলো রে বৈশাখ’, হাবিবের ‘জমবে মেলা’, কণা ও আকাশের ‘লাল শাড়ি পইরো’, আঁখি আলমগীরের ‘দোলে রে দোলে অঙ্গ দোলে’, কনার গাওয়া ‘আইছে পয়লা বৈশাখ আগামী লইয়া’, ঐশীর ‘সব প্রাণে একই সুর ছড়ানো’, মমতাজ ও মিজানের গাওয়া ‘চল চল গান তুলি বৈশাখী’, আশিকুর রহমান মেহরাবের গাওয়া ‘এলো রে বৈশাখ’, সোহাগের ‘লাল শাড়ি পইরা লাল টিপ পইরা’ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বোশেখের অনুষ্ঠানগুলোতে।
এগুলোর বাইরেও কিছু গান আছে- যেগুলো বোশেখের অনুষ্ঠানগুলোতে শিল্পীরা গেয়ে থাকেন।
এসব গানের মধ্যে রয়েছে-‘গ্যারামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’, ‘আগের বাহাদুরি এখন গেল কই’, ‘হেই সামালো ধান হো, কাস্তেটা দাও শান হো’, ‘আবার জমবে মেলা বটতলা হাটখোলা’ ইত্যাদি।