Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

আটকে আছে অনুদানের সিনেমা

নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে তথ্য মন্ত্রণালয়

Icon

রিয়েল তন্ময়

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চলচ্চিত্র শিল্পকে প্রসারিত করতে এবং মেধা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারি অনুদান দেওয়া হলেও, এটি নিয়েও হয় নয়-ছয়। অনেকেই অনুদানের টাকা নিয়ে সিনেমা নির্মাণে করছেন গাফিলতি। অনেকেই আবার অনুদানের পুরো টাকাই আত্মসাৎ করে নিয়েছেন, এমন খবরও পাওয়া গিয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কও কম নয়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরাদ্দ করা অর্থ নেওয়ার পর সময়মতো সিনেমার কাজ শেষ না করায় বেশ কয়েকজন প্রযোজক ও নির্মাতার বিরুদ্ধে মামলাও করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। অনেকে আবার নামমাত্র সিনেমা বানিয়ে দায়িত্ব শেষ করছেন। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়ার খবর থাকে না সেগুলোর।

ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক ও প্রযোজক শাকিব খানও অনুদান নিয়ে সিনেমা নির্মাণ না করার তালিকায় রয়েছেন। ‘মায়া’ নামের একটি সিনেমার জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৫ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে। সিনেমাটি পরিচালনা করার কথা ছিল হিমেল আশরাফের। অনুদানের প্রথম কিস্তির চেক সরকারের কাছ থেকে তুলে নিলেও এখন পর্যন্ত শুটিং শুরু করেননি এ নায়ক। নিয়ম অনুযায়ী চেক পাওয়ার নয় মাসের মধ্যে সিনেমা নির্মাণ করে তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার কথা। তবে নির্মাণে দেরি হলে যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে আবেদন করে সময় বাড়িয়ে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে এতদিন হয়ে গেলেও শাকিব খান সিনেমাটি নির্মাণ করেননি এবং সময় বাড়ানোর জন্যও সে রকম কোনো আবেদন করেছেন বলেও জানা যায়নি। সরকারি টাকা ঘরে তুলে নীরবে বসে আছেন তিনি।

এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া আটকে থাকা একাধিক সিনেমার মধ্যে আরও একটি রয়েছে ‘ডোডোর গল্প’। এটিও এখন পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। এ ছাড়া আটকে আছে আফজাল হোসেন ও আশনা হাবিব ভাবনা অভিনীত সিনেমা ‘যাপিত জীবন’, এটি পরিচালনা করছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তালিকায় রয়েছে, মাসুমা রহমান নাবিলা অভিনীত ও মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত ‘বনলতা সেন’। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একাধিক সিনেমার কাজ এখনো শুরু হয়নি।

এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অনুদানের জন্য সরকার চিত্রনাট্য জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ বছর ৩২টি সিনেমার জন্য অনুদান দেবে সরকার। আগ্রহী আবেদনকারীদের ৭ এপ্রিলের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ গল্প, চিত্রনাট্য ও কলাকুশলীদের বিস্তারিত তথ্যসহ আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। প্রতিবছর তথ্য মন্ত্রণালয় অনুদান প্রদান করলেও, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেকেই নির্মাণ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নির্মাতাদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময় পর্যাপ্ত নয়, যার ফলে দেরি হয়। তবে অভিযোগ আমলে নিয়ে এবার নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর জন্য সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি অর্থ প্রদানের পদ্ধতি এবং সিনেমা মুক্তিসংক্রান্ত নীতিমালায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নতুন নীতিমালা ও পরিবর্তনগুলো

নতুন নীতিমালায় রয়েছে, প্রতি অর্থবছরে ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা অনুদান পাবে, যা আগে ছিল ১০টি। স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার সংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার গুরুত্ব কিছুটা কমানো হয়েছে। এখন থেকে একটি প্রামাণ্যচিত্র, একটি শিশুতোষ সিনেমা এবং বাংলা অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাস, আন্দোলন ও বিপ্লব নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুদান নির্ধারিত থাকবে। নীতিমালায় কাহিনিকার ও চিত্রনাট্যকারদের সম্মানি বাড়ানো হয়েছে। কাহিনিকাররা এখন ২ লাখ টাকা এবং চিত্রনাট্যকাররা ৩ লাখ টাকা প্রণোদনা পাবেন, যেখানে আগে দুজনই ৫০ হাজার টাকা করে পেতেন। প্রস্তাবিত পরিচালকের অন্তত একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, অথবা সিনেমা নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একইসঙ্গে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণে সময়সীমা ১৮ মাস করা হয়েছে।

অর্থ প্রদান পদ্ধতির পরিবর্তন

অনুদানপ্রাপ্তরা মোট অনুদানের ২০ শতাংশ প্রথম কিস্তিতে পাবেন। এ অর্থ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্মাতাকে শুটিং শিডিউল, নির্মাণ পরিকল্পনা, লোকেশন পারমিট ও শিল্পীদের চুক্তিপত্র জমা দিতে হবে। সিনেমা নির্বাচন ও তত্ত্বাবধান কমিটির অনুমোদনের পর দ্বিতীয় কিস্তিতে মোট অনুদানের ৫০ শতাংশ প্রদান করা হবে। তৃতীয় কিস্তির জন্য নির্মাতাকে সিনেমার কমপক্ষে ৫০ শতাংশের রাফ কাট ফুটেজ ও শিল্পীদের পারিশ্রমিকের প্রমাণ জমা দিতে হবে, এরপর অনুদানের আরও ২০ শতাংশ প্রদান করা হবে। সর্বশেষ সিনেমা মুক্তির পর বাকি ১০ শতাংশ অর্থ চূড়ান্ত কিস্তি হিসাবে প্রদান করা হবে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন

নতুন নীতিমালায় নির্মাতা, পরিচালক বা আবেদনকারীদের কোনো নির্দিষ্ট সংগঠনের সদস্য হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমাকে অন্তত পাঁচটি প্রেক্ষগৃহে বা ১০টি জেলা পর্যায়ের ভেন্যুতে প্রদর্শন করতে হবে। অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমা যদি মৌলিক না হয় বা নির্মাতা চুক্তিভঙ্গ করেন, তবে অনুদানের অর্থ সুদসহ ফেরত দিতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম