Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচনের সাতকাহন

Icon

রিয়েল তন্ময়

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচনের সাতকাহন

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচনের প্রচারে ব্যবহৃত পোস্টার

আলোচনা-সমালোচনায় শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বি-বার্ষিক (২০২৪-২৬) নির্বাচন। দুই বছর পর বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়লাভ করেন মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক হন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তবে নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও এর রেশ এখনো কাটেনি। যে কোনো সময় অনুষ্ঠিত হবে শপথ অনুষ্ঠান। দায়িত্ব বুঝে নেবেন নতুন নির্বাচিতরা। সব কিছু মিলিয়ে কেমন ছিল নির্বাচন পরিস্থিতি, এ নির্বাচন কতটা সফল হয়েছে, কতটা প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে-সেটাই এক নজরে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। লিখেছেন রিয়েল তন্ময়

* কৃতজ্ঞতা

নির্বাচনে জয়লাভ করে শিল্পীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর। তিনি শিল্পীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা পাশে ছিলেন বিধায় এ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিনম্র শ্রদ্ধা সম্মান।’ ডিপজল বলেন, ‘নির্বাচনে হার-জিত বড় কথা নয়। আমরা সবাই মিলে এক থাকতে চাই। কোনো ভাগাভাগি চাই না। শিল্পী সমাজ ভালো থাক সুস্থ থাক এ দোয়া করি।’

* অভিনন্দন-আহ্বান

নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিদায়ী সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমান নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ মিশা সওদাগর ও ডিপজলের প্রতি আহ্বান জানাব, তাদের নেতৃত্বে নির্বাচিত এ কমিটি কে জিতেছে, কে হেরেছে সেই প্রশ্নে না গিয়ে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যাবেন এবং চলচ্চিত্রের বর্তমান সংকট কাটাতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবেন।

* কষ্ট

সিনেমার আতুড়ঘর খ্যাত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) আর কখনোই পা রাখতে চান না চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমান। চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্যদের কারণেই মনে কষ্ট পেয়েছেন। আর এ কারণেই অভিমানে এফডিসিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এবারের নির্বাচনে মাহমুদ কলি ও নিপুণ আক্তারের প্যানেল থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এ অভিনেত্রী। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের প্রার্থী তরুণ নায়ক জয় চৌধুরীর কাছে হেরে যান। এমন ফলাফলেই কষ্ট পেয়েছেন তিনি। এছাড়া কিছুদিন আগেই চেক ডিসঅনারের জন্য অঞ্জনাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ডিপজল। একটি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে এমন নোটিশ পাঠানো হয়। যেটাও দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অপমানজনক মনে হয়েছে তার কাছে। এসব কারণে কষ্ট পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন অঞ্জনা।

* বিস্ময়

ডিপজলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। হেরেছেন মাত্র ১৭ ভোটে। মুভিলর্ড ডিপজলের সঙ্গে পেরে উঠবেন না, তা আগেই ঠাহর করেছিলেন। কিন্তু এত কম ব্যবধানে হারবেন সেটাই বিস্ময় হয়ে ঠেকেছে তার কাছে। নিপুণ বলেন, ‘যার সঙ্গে নির্বাচন করেছি, আমি চিন্তাও করিনি মাত্র ১৭ ভোটে তার কাছে হারব। আমি ভেবেছিলাম ডিপজল সাহেবের বিপরীতে আমি যখন দাঁড়াব, খুব বেশি হলে ৫০ ভোট পাব।’

* প্রত্যাশা

নির্বাচনে ভোট দিতে আসেন কিংবদন্তি অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। এসময় তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট দেওয়া আমার কর্তব্য, ভোট দিতে এসেছি, আমার পছন্দ অনুযায়ী শক্তিশালী প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি। শিল্পীদের যেটা প্রত্যাশা, আমারও প্রত্যাশা সেটাই। গত বছরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়, আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’ চিত্রনায়িকা ববিতা বলেন, ‘যারা সত্যিকারের অর্থে কাজ করবে তাদেরকেই ভোট দিয়েছি।’ চিত্রনায়িকা সুচন্দা বলেন, ‘চলচ্চিত্রের মধ্যে আমাদের সমিতি গুরুত্বপূর্ণ সমিতি। শিল্পীদের ছাড়া চলচ্চিত্র হয় না, তাই শিল্পীদের বিকল্প নেই। বক্তব্যে নয়, যারা সততার সঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে তাদেরকেই আমরা ভোট দিয়েছি, যাতে আমাদের সংগঠন আরও সুন্দর হয়।’

চিত্রনায়িকা চম্পা বলেন, ‘শিল্পী শব্দটা ভীষণভাবে আমাদের পরিবারের মনে হয়। তাই আমি মনে করি আমরা সবাই মিলে এক। সবাই মিলে যদি এগিয়ে যেতে পারতাম তাহলে আমাদের শিল্পটাকে অনেক এগিয়ে নিতে পারতাম।’ আজিজুল হাকিম বলেন, ‘নির্বাচিত প্রত্যেকেই যেন চলচ্চিত্রের স্বার্থে, উন্নয়নে কাজ করবেন এ প্রত্যাশা থাকবে।’ শিল্পীদের বিপদে-আপদে একটু পাশে যেন থাকে সমিতির নেতৃবৃন্দ এটাই নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশা চিত্রনায়ক আমিন খানের। অপু বিশ্বাস বলেন, ‘নির্বাচনের পরে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। নির্বাচন শুধু একটা নিয়ম, এটা একটা উৎসব।’ অনন্ত জলিল বললেন, ‘জয়ীদের সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করব। আমি চাই সিনেমা কিভাবে উন্নয়ন করা যায়। সেই ব্যাপারে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই।’

* অভিযোগ

ডিপজলের বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার খোরশেদ আলম খসরুর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন মাহমুদ কলি-নিপুণ আক্তার পরিষদের সদস্য পদপ্রার্থী সাদিয়া মির্জা। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন ডিপজল। তিনি বলেন, ‘টাকা আমরা দিয়েছি নাকি উনারা দিয়েছেন সেটার ফুটেজও অনেকের কাছে আছে। এসব অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত, বানোয়াট।’

* অডিও ফাঁস

নির্বাচনের আগের রাতে ফাঁস হয়েছিল সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নিপুণ আক্তারের অর্থ দেওয়া সংক্রান্ত দুটি অডিও ক্লিপ। অডিওতে শিল্পী সমিতির সদস্য আঁখি ও নাহারকে বলতে শোনা যায়, ‘ড্যানি ভাই এফডিসিতে ডেকে আমাদের ঘোরাচ্ছে। হুট করে নিপুণ আপা আসে ৭ নম্বর ফ্লোরের সামনে। সে এসে আমাকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছে ২৭ জনের জন্য।’ আরেকটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, ‘নিপুণ বাসার নিচে এসে নামতে বলছে। আমি কিছু জানি না। গেলে ২ হাজার টাকা ধরিয়ে দেয়। আমি কিছুই জানি না।’

* নিরাপত্তা

নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে ও সুষ্ঠভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে পুরো এফডিসিজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এদিন এফডিসির মূল ফটক থেকে এফডিসির বিভিন্ন জায়গায় প্রায় আড়াইশ পুলিশ সদস্যসহ সাদা পোশাকে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

* ক্ষোভ

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্তি কড়াকড়ি কষ্ট দিয়েছে নায়ক রুবেলকে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ নায়ক বলেন, ‘আমার কাছে পুরোটাই একটা নোংরামি মনে হচ্ছে। এটা একটি শিল্পীদের নির্বাচন। এত নিরাপত্তা দেখে মনে হচ্ছে আমরা কোনো যুদ্ধ করতে এসেছি। এমনটা আসলে কাম্য নয়। মনে হচ্ছে ট্রাক স্ট্যান্ডের নির্বাচন হচ্ছে।’

* বিব্রত

নিরাপত্তা কড়াকড়ির কারণে অনেক সিনিয়র শিল্পীদের এফডিসিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। অনেকেই বলছেন নায়ক আলমগীর বা উজ্জ্বলের মতো লোককে যদি আইডি কার্ড দেখিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয়, তাহলে দুঃখজনক। এভাবে কার্ড চেক করে ঢুকানো মানে, ডেকে অপমান করার শামিল। এদিকে এফডিসিতে ঢুকতে বাধার মুখে পড়েন চিত্রনায়িকা শাবনূর। নিরাপত্তা রক্ষাকারীকে নিজের নাম পরিচয় দিয়েই প্রবেশ করতে হয়। তারপর আটকে রাখা হয় শাবনূরের ব্যক্তিগত ম্যাকআপ ম্যানকে। শাবনূর অনুরোধ করার পরও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। এতে বিব্রত হয়ে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে এ নায়িকা বলেন, ‘এফডিসিতে এত পুলিশ থাকতে হবে কেন?’

 

* হতাশা

মাহমুদ কলি-নিপুণ আক্তার পরিষদ থেকে সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন চিত্রনায়ক অমিত হাসান। নির্বাচনে ফলাফল নিজের অনুকূলে না আসায় অনেকটাই হতাশ হলেন এ নায়ক। ভোটারদের প্রতি তার যে প্রত্যাশা ছিল সেটা পূরণ না হওয়ায় বেশ আক্ষেপ হচ্ছে এ অভিনেতার। একটা বড় ধরনের বিশ্বাসঘাতকার শিকার হয়েছেন এ অভিনেতা এমনটাই বোঝা যায় অভিনেতার ফেসবুক পোস্ট থেকে। তিনি লিখেন, ‘অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি!’

* সাংবাদিকের আধিক্য!

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৫৭০। আর এ নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ ও খবর সংগ্রহের জন্য এফডিসিতে উপস্থিত ছিলেন ৩০০ সাংবাদিক। নির্বাচন কমিশন থেকে গণমাধ্যমের জন্য যে পাশ সরবরাহ করা হয়েছে, সেখান থেকেই এ তথ্য জানা গেছে। যেখানে মূলধারার কিছু গণমাধ্যমকে কোনো পাশই ইস্যু করা হয়নি। বিষয়টি অনেক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও বিষয়টি নিয়ে বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।

* আনন্দ

কিছু ছোটখাটো ভুলত্রুটি, ভুল বোঝাবুঝি, সমালোচনা, মান-অভিমান, অভিযোগ সবকিছুকে পিছনে রেখে বিশ্লেষণ করতে গেলে, একটি সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। গতবারের নির্বাচনের তুলনায় এবার নির্বাচন অনেক সুন্দর হয়েছে। নির্বাচন শেষে ফলাফল নিয়েও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে দুটি প্যানেল। পরাজিত হয়েও মালা দিয়ে বিজয়ীদের বরণ করে নিয়ে নতুন করে আলোচনায়ও এসে গেলেন নিপুণ। অতীতের নানা সমালোচনামূলক কর্মকাণ্ডের যেন ইতি টানলেন এ মালা পরিয়ে-এমনটাই বলছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে। তারা আশা করছেন এবার চলচ্চিত্রের স্বার্থে কিছু একটা হবে। নতুন কমিটি মিশা-ডিপজলকে পেয়ে বেশ আনন্দ প্রকাশ করছেন শিল্পীরা। সবার চোখে-মুখেই এ আনন্দের ছাপ লক্ষ করা গেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম