Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

‘মিয়া ভাই’-এর চিরবিদায়

Icon

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘মিয়া ভাই’-এর চিরবিদায়

ঢাকাই সিনেমার ‘মিয়া ভাই’খ্যাত অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। একাত্তরের রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে লড়েছেন পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। সিনেমার মাঠেও ছিলেন লড়াকু সৈনিক। পরিবারের মতো এক সুতোয় বেঁধে রেখেছিলেন সবাইকে। অবশেষে সেই বন্ধন ছিন্ন করে চলে গেলেন তিনি। ১৫ মে সকাল ১০টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি এ অভিনেতা। তার মৃত্যুতে শোকাহত সংস্কৃতি অঙ্গন। স্মৃতিচারণ করেছেন কয়েকজন সহকর্মী।

সবাই তাকে ফারুক কিংবা আকবর হোসেন পাঠান নামে চেনেন। মিয়া ভাইও বলে। আমি দুলু বলে ডাকতাম। কারণ, তার ডাক নাম ছিল দুলু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে যখন ছিলাম তখন সে ছাত্রলীগে আমার আন্ডারেই ছিল। মোট কথা, ছোটবেলা থেকেই ওকে আমি চিনতাম, জানতাম। তুখোড় ছাত্রনেতা ছিল। খুব চঞ্চলও বলা চলে। সে এভাবে চলে যাবে কখনো ভাবিনি। তার এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন, খুব কষ্টের। আমি আর দুলু মিলে একসঙ্গে কোনো সিনেমায় কাজ করিনি। কিন্তু রাজনীতিতে অনেক কাজ হয়েছে আমাদের। আজ সে না ফেরার দেশে। দোয়া করি যেন তাকে আল্লাহ জান্নাত দান করেন। আর তার পরিবারের প্রতিও আমার দোয়া থাকবে সব সময়।

-মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা), বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা

ফারুক ভাই আমাদের কাছে মুরব্বির মতো ছিলেন। তবে তার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা একটু ব্যতিক্রম ছিল। অনেকে জানেন, অনেকে জানেন না। তার এভাবে চলে যাওয়া খুব কষ্টের তো বটে, ইন্ডাস্ট্রির জন্য অপূরণীয় ক্ষতিও। তার সঙ্গে অনেক গল্প, অনেক স্মৃতি। এখন শরীরে এনার্জি পাচ্ছি না তার চলে যাওয়া খবরটি শুনে। কী বলব। এভাবে চলে গেলে মানতে কষ্ট হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিছুদিন আগে শুনেছি দেশে ফিরবেন। ভেবেছি দেখা করে আড্ডা দেব। সেটা আর হলো না। তিনি চলেই গেলেন। তার এ চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। আল্লাহ ফারুক ভাইকে ভালো রাখুক। তার পরিবারকে শোক সহ্য করার শক্তি দিক, এটাই প্রার্থনা।

-আলমগীর, অভিনেতা

নায়ক ফারুক বাংলাদেশে একজনই। তার তুলনা তিনিই। জীবিত থেকেই প্রমাণ করেছেন তিনি আনপ্যারালাল। কেননা, তিনি যে সিনেমাগুলোতে কাজ করেছেন সে ধাঁচের সিনেমা অন্য কোনো নায়ক করতে পারেননি। তিনি মরে গেলেও আজীবন তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে অগণিত ভক্ত-দর্শকদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। তার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ফারুক ভাইয়ের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন। তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েগুলোকে আল্লাহ ভালো রাখুক এ দোয়া করি। একদিন তো আমাদের সবারই যেতে হবে। কেউ আগে কেউ পরে। ফারুক ভাই আগে চলে গেছেন। আমরাও যাব যখন ডাক আসবে। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক।

-কোহিনুর আক্তার সুচন্দা, অভিনেত্রী

আমার জীবনের একটা কষ্ট থেকেই গেল। এ কষ্ট আর মুছবে না। আমি সংগীত জীবনে অনেক গান করেছি। আমার গানে ওয়াসিম ভাই, রাজ্জাক ভাই, আলমগীর ভাইসহ অনেকেই ঠোঁট মিলিয়েছে। অনেক গান সুপারহিট হয়েছে। মানুষের মুখে মুখে এখনো বেজে ওঠে। কিন্তু আমার জীবনের বড় কষ্ট হচ্ছে, আমার গাওয়া কোনো গানে ফারুক ভাই ঠোঁট মিলায়নি। আজ তো চলেই গেলেন তিনি। আমার এ কষ্ট আর মুছবে না। আমার গাওয়া গানে ঠোঁট মিলানোর সে সুযোগ আর নেই। মানুষের সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। আমারও তাই হলো। ফারুক ভাইয়ের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত নসিব করেন। তার পরিবারের জন্যও দোয়া করি। আল্লাহ তাদের ভালো রাখুক।

-খুরশীদ আলম, সংগীতশিল্পী

আমার প্রথমে মনে হয়েছে এটিও আগের মতো গুজব। কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না ফারুক ভাই মারা গেছেন। অনেকবারই তো গুজব হয়েছে। মন বলছিল এবারও যেন তাই হয়। কিন্তু হলো না। মানতে পারছি না ফারুক ভাই নেই। তার সঙ্গে কিছুদিন আগেও কথা হয়েছে। ভাবির সঙ্গেও কথা হয়েছে। বলছে ভালো আছেন। দেশে ফিরবেন। দেশে তো ফিরছেনই, তবে না ফেরার দেশে গিয়ে। তার সঙ্গে অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছি। কত স্মৃতি, কত কথা এসব এখন খুব কষ্ট দিচ্ছে। সেই ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘আলোর মনি’সহ কত সিনেমাতে কত রকম স্মৃতি ছিল! এখন সব স্বপ্নের মতো লাগে। ফারুক ভাইয়ের জন্য এখন দোয়া ছাড়া আর কিছু নেই। সবারই একদিন যেতে হবে। ফারুক ভাই আগে চলে গেলেন। তাকে আল্লাহ জান্নাত দান করুক, এটাই দোয়া করি।

-ফরিদা আক্তার ববিতা, অভিনেত্রী

ফারুক এভাবে চলে যাবে কখনো ভাবিনি। তার মৃত্যু নিয়ে অনেক মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। অনেক গুজবই তো শুনি। আজকের খবরটা মিথ্যা হলে কিইবা হতো! কিন্তু না, এবার আর গুজব নয়, ফারুক সত্যি সত্যি চলে গেল! কিছুদিন আগে সংবাদ দেখলাম সে মার্চে বাংলাদেশে ফিরবে। তারপর কয়েকদিন আগে শুনেছি, সে ভালো আছে, বাংলাদেশে ফিরবে। সে ফিরছে, কিন্তু এভাবে না ফেরার দেশে চলে গিয়ে ফিরবে কখনো ভাবিনি। এখনো খুব কষ্ট হচ্ছে ফারুক নেই সংবাদটি বিশ্বাস করতে। আমি তার জন্য দোয়া করি যেন আল্লাহ তাকে ভালো রাখে, জান্নাত দান করে। তার পরিবারের জন্য দোয়া করি, যেন তার শোক সহ্য করতে পারে।

- আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, অভিনেতা

খবরটি আমাকে হতবাক করে দিয়েছে। এর আগেও এমন খবর কয়েকবার শুনেছি, কিন্তু সেটা মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সেগুলো ছিল গুজব। শুরুতে এটাও ভেবেছিলাম গুজব। কিন্তু এবার আর গুজব হলো না, সত্যি সত্যিই ফারুক ভাই চলে গেলেন। তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে নেই অনেক বছর ধরে। তার জায়গাটি খালিই ছিল, কেউ পূরণ করতে পারেনি। এবার তো তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। তার জায়গাটি খালিই থেকে যাবে। তিনি অনেক বড় গুণী শিল্পী ছিলেন। এটা তিনি জীবিত থাকা অবস্থায়ই প্রমাণিত হয়েছে। তিনি যে চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন তার পুনরাবৃত্তি কেউ করতে পারেনি। ফারুক ভাইয়ের এভাবে চলে যাওয়া মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক, যেখানে রাখুক। তিনি যেন জান্নাতবাসী হয় সে দোয়া করছি। একই সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যারা যেন তার শোক সহ্য করতে পারে সে প্রত্যাশাও করি।

গুলশান আরা চম্পা, অভিনেত্রী

মিয়া ভাই আমাদের লেজেন্ড। কিছুদিন ধরে শুনছিলাম তিনি দেশে ফিরবেন। তিনি ভালো আছেন। গুজব রটেছিল কয়েকবার। কিন্তু সেসব মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এবার হঠাৎ কী হলো বুঝতে পারলাম না। সকাল সকাল মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমাদের চলচ্চিত্রে মুরব্বি ফারুক ভাই আমাদের মাঝে নেই, এটি মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তার সঙ্গে কত স্মৃতি, কত কথা! সব আজ স্বপ্নের মতো হয়ে গেল। আর কখনো কথা হবে না ভাবতেই চোখে জল চলে আসে। ফারুক ভাইয়ের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত নসিব করেন। তার পরিবারের সবার জন্য আমার দোয়া, যেন ফারুক ভাইয়ের চলে যাওয়ার শোক সহ্য করতে পারে।

-ওমর সানী, অভিনেতা

ফারুক ভাই ছিলেন আমাদের চলচ্চিত্রের অভিভাবক। সকালে যখন তার মৃত্যুর সংবাদ পেলাম কান্না চেপে রাখতে পারিনি। বুকের ভেতর হু হু করে উঠল। মনে হচ্ছে পৃথিবীটা শূন্যতায় ভরে গেল। আমাদের মিয়া ভাই অবশেষে চলেই গেল! তার সঙ্গে অনেক সিনেমায় কাজ করেছি। নায়ক বলি বা সহশিল্পী বলি, ফারুক ভাই একজন কর্মঠ মানুষ ছিলেন। মুখের ওপর সত্য কথাটা বলে দিতে পারতেন। এমন স্বভাবের মানুষ খুব কমই দেখেছি। দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবুও মনে হতো তিনি আমাদের পাশে আছেন, কিন্তু এখন তো চিরতরে চলে গেলেন। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি শক্তিমান এক অভিভাবক হারাল। এমন বলিষ্ঠ অভিভাবক আর আসবে না। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন ফারুক ভাই।

-রোজিনা, অভিনেত্রী

চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। আমাদের মিয়া ভাই আর আমাদের মাঝে নেই। মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার এভাবে চলে যাওয়া। কিছু দিন আগে খবর পড়েছিলাম তিনি দেশে ফিরছেন, আগের চেয়ে ভালো আছেন। ভেবেছিলাম ফিরলে অবশ্যই দেখা হবে। এমনিতেই তাকে অনেকদিন দেখি না আমরা। অবশেষে তিনি ফিরলেন, সবাইকে কাঁদিয়ে। তার এ চলে যাওয়া খুব কষ্টের। তবু এ কষ্ট মেনে নিতে হচ্ছে। দোয়া করি আল্লাহ যেন ফারুক ভাইকে জান্নাতে রাখেন। তার পরিবারের সবার জন্য আমার দোয়া ও ভালোবাসা রইল।

-নাঈম ও শাবনাজ, অভিনেতা ও অভিনেত্রী

প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রাখা ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। আমাদের মিয়া ভাই। এই কীর্তিমান মহান মানুষটির প্রয়াণে গভীর শোক ও তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পাশাপাশি তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না ফারুক ভাই আর নেই। আমার খুব মনে পড়ে করোনাকালীন একবার আমরা একসঙ্গে অনেক কথা বলেছি। সিনেমা নিয়ে অনেক গল্প হয়েছে। তিনি আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। আজ তিনি নেই, বিষয়টি মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ ফারুক ভাইকে ওপারে ভালো রাখুক, দোয়া করি।

-অনন্ত জলিল, অভিনেতা ও প্রযোজক

চলে গেলেন আমাদের প্রিয় মিয়া ভাই। যতদিন তিনি সুস্থ সবল ছিলেন, ততদিন আমাকে স্নেহে আগলে রেখেছিলেন। আমার যে কোনো ভালো কাজ এবং ছবির পোস্টার কিংবা ট্রেলার দেখে তিনি নিজ থেকে অভিনন্দন প্রকাশ করতেন। আমার কাছে এ মানুষটি ছিলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনে শ্রদ্ধাভাজনদের একজন। কাজ কিংবা কাজের বাইরে এ মানুষটির সঙ্গে আমার অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। তার প্রয়াণে প্রিয় অভিনেতা হারানোর পাশাপাশি একজন অভিভাবক হারানোর শোক অনুভব করছি। ওপারে অনেক শান্তিতে থাকবেন ফারুক ভাই। দোয়া ও ভালোবাসা রইল আপনার জন্য।

-শাকিব খান, অভিনেতা

কিংবদন্তি অভিনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। আমাদের মিয়া ভাই এখন আর আমাদের মাঝে নেই। কথাটি শুনেই চমকে গেলাম। দেখা হলে কত মায়া দেখাত ফারুক ভাই। এ মায়া আর পাব না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর কখনো কথা হবে না, দেখা হবে না, ভাবতেই চোখে জল চলে আসে। তার মৃত্যু সংবাদ কয়েকবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। এবারও খবরটি যদি মিথ্যা হতো তাহলে হয়তো স্বস্তি পেতাম। কিন্তু সত্যিকারের মৃত্যু এলে তাকে তো আর ঠেকানো যায় না। ফারুক ভাইয়ের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করে। তার পরিবারের সবাইকে যেন আল্লাহ ভালো রাখে।

-শাবনূর, অভিনেত্রী

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম