Logo
Logo
×

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা

শিক্ষার আলো

Icon

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শিক্ষার আলো

ভয়। চতুর্দিক দিয়ে ভয় ঘিরে ধরছে মানুষকে। জীবিকার নয় কেবল, জীবনেরও। অন্ধকারকে ধমক দিলে সে যাবে না, লাঠিপেটা করলেও লাঠিরই ক্ষতি। তাহলে কি করে দূর হবে অন্ধকার? জবাবটা সোজা। আলো জ্বেলে। শিক্ষার আলো তো সেই কতকাল ধরেই জ্বালাচ্ছি আমরা। কিন্তু অন্ধকার তো বিন্দুমাত্র বিচলিত হচ্ছে না। ছোট্ট দেশ দক্ষিণ ইয়েমেন, একটি হিসাবে দেখলাম, সেখানে স্কুলে যেত ৬০ হাজার ছেলেমেয়ে, সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজারে। সাত বছরে বৃদ্ধি পায় পাঁচগুণ। আমাদের দেশে গত সাত বছরে ক’গুণ বেড়েছে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা? বৃথাই শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের বড়াই। আরও কথা আছে। যে শিক্ষা দিচ্ছি আমরা ছেলেমেয়েদের, সেটি কোন শিক্ষা? আর কিছু না বুঝি, আজ তো আমরা এটুকু বুঝি, আসল শিক্ষা হচ্ছে রাজনৈতিক শিক্ষা। অন্ধকার দূর করতে হলে যথার্থ রাজনৈতিক শিক্ষা আবশ্যক।

বিপন্ন এক অভিভাবককে নির্বাক করে দিয়েছে তার চার বছরের শিশুসন্তান। পাঠ্যবইয়ে পড়ছে শিশু, ‘ঘুঘু ডাকছে গাছের ডালে/কুমড়ো ঝোলে ঘরের চালে/ওই ঘুঘুটা মারবো/কুমড়োগুলো পাড়বো।’ শিশুর প্রশ্ন : ঘুঘুটাকে মারবে কেন? অভিভাবক জবাব দিতে পারেননি, তিনি বরং প্রশ্ন করেছেন পাঠ্যপুস্তক প্রণেতাদের, এ ধরনের শিক্ষা কেন দেওয়া হচ্ছে শিশুদের। আসলে ওই শিক্ষাই তো দেওয়া হচ্ছে সবখানে। যেমন বিদ্যালয়ে, তেমনই গৃহে। নিষ্ঠুর হও, অত্যাচার কর। আর কারও ওপর না পার, ঘরে কি ভৃত্য নেই? একটি পাখির অকারণ হত্যা নিয়ে অত্যাশ্চার্য এক কবিতা লিখেছিলেন ইংরেজ কবি কোলরিজ। পাখির হত্যা অতিনিষ্ঠুর পাপ সেই কবির জগতে। আমাদের মানুষ মারাও আজ কোনো অপরাধ নয়। আর যিনি লিখেছেন ঘুঘু মারার ওই বীরত্বপূর্ণ ছড়া, তাকেও আমরা মোটেই দোষ দেব না, বরং বলব, তিনি আয়নার কাজ করেছেন, আমাদের মনের ভেতরের অবিনশ্বর বীরত্বকে বের করে এনেছেন।

মস্তানরা মস্তান হয় একদিকে এই হিংস্রতামূলক বীরত্ববোধের মধ্যে বড় হয় বলে, অন্যদিকে তাদের প্রত্যেকের পিঠে পিতা-মাতার ব্যর্থতা ও সমাজের উপেক্ষার এক সজীব বোঝা চেপে বসে থাকার কারণে। পিতা-মাতারা মহত্ত্বের, কিংবা আত্মত্যাগের কি কোনো আদর্শ তুলে ধরতে পেরেছেন ছেলেমেয়েদের সামনে? পারেননি। সমাজ যে ছেলেমেয়েদের ভালোবাসে এমন কোনো প্রমাণ ছেলেমেয়েরা পায় না। আর পায় না কাজ। জীবনের কাজ নেই, জীবিকার কাজ নেই। ‘কাজ দে, নইলে ঘাড় মটকে দেবো’, এ হুমকি ভূতেরা যত জোরে দেয় তাদের মালিকদের, তরুণরা তার চেয়ে বেশি জোরে দিতে চায় পিতা-মাতাকে। সরবে না দিলেও নীরবে অবশ্যই দেয়। কাজ নেই, কাজ দেওয়া হয়নি, সেজন্যই অকাজ করে। তাছাড়া, বাবা-মা ব্যর্থ হয়ে গেছেন জীবনসংগ্রামে, তারা আত্মসমর্পণ করেছেন অন্যায়ের কাছে। কাকে এখন বীর হিসাবে গ্রহণ করবে এ সন্তানরা? স্কুলের শিক্ষকদের দেখে এবং হতাশ হয়। রাজনীতিতে যাদের দেখে, তারা বিন্দুমাত্র আস্থা অর্জন করতে পারেন না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের একটি জরিপের খবর দেখলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা ২০ জন ছাত্রছাত্রী চরম হতাশায় আচ্ছন্ন। তারা পড়াশোনায় কোনো উৎসাহ পায় না। সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনাও করতে চায় না।

কেবল ২০ জন কেন, বাকি ৮০ জনেরও ৭৯ জনই হতাশ হবে, কেবল পরীক্ষাটা পাশ করা যা বাকি। কী করবে তারা? ভবিষ্যৎ কোথায়? তরুণের জন্য একটা স্বপ্ন চাই তো! সবার জন্যই আসলে স্বপ্ন চাই, যেটা চলচ্চিত্র প্রযোজকরা বোঝেন, বুঝে গরিব মানুষকে আড়াই ঘণ্টার স্বপ্ন দেখিয়ে আরও গরিব করে ছাড়েন। তবে বিশেষভাবে স্বপ্ন চাই তরুণের জন্য। স্বপ্নই তাকে ধনী করে। সে যদি ভবিষ্যৎ না দেখে, তবে বর্তমানে বাঁচবে কী নিয়ে?

ওই যে সজীব বোঝা পিতা-মাতার ব্যর্থতার ও সমাজের উপেক্ষার, তা থেকে মুক্তি চায় তরুণরা। পায় না। যত বুঝে মুক্তি নেই, ততো সে ক্ষিপ্ত হয়। ক্রুদ্ধ হয়। যে আগুন অন্যায়কে পোড়াতে পারত, সেই আগুন গৃহস্থকে পোড়ায়। তরুণরা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে, এখন আবদ্ধদশায় তারা মস্তানি করে।

বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার পক্ষে মোটেই সম্ভব নয় কাজ দেওয়া। জীবিকার কাজ নয়, জীবনের কাজ তো নয়ই। তার জন্যই তো প্রয়োজন উৎপাদন সম্পর্কে পরিবর্তন আনা। এ কাজটা রাজনৈতিক কাজ। দক্ষিণপন্থি রাজনীতি চাইছে ব্যবস্থাটাকে টিকিয়ে রাখতে। বাম রাজনীতিরই দায়িত্ব সমাজ বদলের কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। সেই রাজনীতি আজ শক্তিশালী নয় বলেই দেশে এত বেশি মস্তানি। মস্তানির বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ, সেটি রাজনৈতিক প্রতিরোধ না হলে কখনোই সফল হবে না। আর রোগের যে উৎস, তাকে নির্মূল করার পথটাও রাজনৈতিক পথ ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। কেননা মস্তানি আসছে আমাদের রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থা থেকেই।

দেশে দক্ষিণপন্থিদেরই শক্তি বেশি। তাদের আন্তর্জাতিক মুরুব্বিরাও রয়েছে। এ মুরুব্বিরা যে কত বড় মস্তান হতে পারে, তার প্রমাণ আমেরিকা দিয়ে আসছে পৃথিবীব্যাপী গুণ্ডামি করে। দক্ষিণপন্থিরা বামপন্থি দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একইসঙ্গে মস্তানদের প্রশ্রয় দেয় এবং ব্যবহার করে। তাদের রাজনীতিতে পরস্পর পরস্পরকে যে হারে ‘বেঈমান’, ‘বেঈমান’ বলে পাড়া মাথায় করে চলছে, তাতে একটা জিনিস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে কোনো অসুবিধা নেই, সেটি এই যে, বেইমানি সত্যি সত্যি রয়েছে। এরা বলেন এক, করেন আরেক। এ বস্তু ছাড়া রাজনীতি অচল বলে মনে হয়, আমাদের দেশে। ডিগবাজি যে কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে ঘটছে তা নয়, দলগতভাবেও ঘটে যাচ্ছে।

বুর্জোয়া, তথা দক্ষিণপন্থি রাজনীতির চরিত্রেই আছে এ দোষ। মতলবে থাকে, যখন যা বললে সুবিধা তা-ই বলে। এতে করে এদের প্রতি লোকের আস্থা যে বাড়ছে না সেটা ঠিক। সরকারি পক্ষ বলছেন গণরায় তারাই পেয়েছেন, নির্বাচনে আগ্রহী দলগুলোর দাবি, রায় তাদের পক্ষে।

কোনো কিছুতেই যার বিশ্বাস নেই, তার সঙ্গে মস্তানের তফাতটা মূলত বয়সের, হয়তো বাইরের মুখোশের সঙ্গে ভেতরের মুখশ্রীর। যে শিশু দুলে দুলে কাঁদছে, তাকে শান্ত করতে হলে আরও বেশি দোলানোটাই নিয়ম। রাজনীতির দোষ আরও বেশি রাজনীতি দিয়েই দূর করতে হবে; তবে দুষ্ট, মতলববাজির রাজনীতি নয়, সুস্থ, সমাজ বদলের রাজনীতি। মস্তানরা মানুষ হবে যদি তারা রণাঙ্গন পায় মুক্তিযুদ্ধের। তখন গলিতে থাকবে না, চলে আসবে মুক্ত প্রাঙ্গণে। একাত্তরে মস্তানির কোনো সুযোগ ছিল না এ বাংলাদেশে, কেননা তখন মানুষ লড়ছিল এক রাজনৈতিক লড়াই-জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের জন্য। এখনকার মস্তানি ওইসব লক্ষ্য থেকে আমরা কতটা দূরে সরে এসেছি, তার নিদর্শন বৈ অন্যকিছু নয়। এটি না বুঝলে আমরা কেবল আক্ষেপই করব এবং হতাশ হবো।

২.

ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটির একজন কমিশনার এসেছিলেন বাংলাদেশে, ফেরত যাওয়ার সময় তিনি বলে গেছেন, দক্ষিণের দেশগুলোতে যুবকদের মধ্যে আজ যে হতাশা বিরাজ করছে, তা বিশ্বশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। তৃতীয় বিশ্বের সর্বত্রই এ হতাশা বিদ্যমান বটে, কিন্তু আমাদের দেশে যতটা, ততটা বোধহয় অন্য কোথাও নয়। সেটা ঠিকই আছে, কিন্তু তাতে বিশ্বশান্তির পক্ষে যে বিপদ বাড়ছে সেটা কীভাবে? এ হতাশ যুবকরা কি ধনী দেশগুলোকে আক্রমণ করবে? নাকি তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে প্রতিবেশী দেশের ওপর? না, না, ওসব কিছুই নয়। ভয় একটাই, যুবকরা সব দলে দলে কমিউনিস্ট হয়ে যাবে। সেটা ঘটলে আর বাকি রইল কী? বিশ্বশান্তির মৃত্যুঘণ্টা তো সঙ্গে সঙ্গেই বেজে গেল। আমাদের মুরুব্বিরা তাই চাইবেন-যুবকরা, তোমরা বরং মস্তান হও, কিন্তু কমিউনিস্ট হয়ো না।

মুরুব্বিদের অবশ্য ভয়ের কোনো কারণ নেই। যুবকরা কমিউনিস্ট হচ্ছে না। মস্তানই হচ্ছে। আর মস্তান হলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, সে কমিউনিস্ট হবে না। বিশুদ্ধ অরাজনৈতিক প্রাণী বলতে যদি কিছু থাকে, তবে সে হবে ওই মস্তান। রাজনীতি বোঝে না, গুন্ডামি বোঝে। তাতে বিপদ যা তা আমাদেরই। আমাদের মেয়েরা পথে বের হতে ভয় পায়। পথচারী পকেট সামলায়। শবেবরাতের নামাজ পড়া নিয়েও গুলি চলে, তাতে ঘুমন্ত শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। তবু এসব বাহ্য। আরও বড় বিপদ অন্যত্র। সেটা এই যে, আজকের যুবকরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা শেষ হয়ে যাচ্ছে। মরছে। মরে ভূত হচ্ছে। গাল-গল্প যতই থাক, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ যৎসামান্য। মানুষই আমাদের ভরসা। অনেক বছর আগে পরিবার পরিকল্পনার একটি বিপদের কথা পড়েছিলাম। অকার্যকর মনুষ্যদল সৃষ্টির আশঙ্কা। সচ্ছল ঘরে সন্তান অত্যন্ত কম থাকবে, তারা আবার বিদেশেও চলে যাবে, ওদিকে গরিব ঘরে সন্তানের থইথই, তারা না পাবে শিক্ষা, না অর্জন করবে দক্ষতা। সে আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হয়েছে কি?

যুবকের মস্তান হওয়ার আরেক কারণ বয়স্কদের ব্যর্থতা। প্রবীণরা এমন কোনো আদর্শ তুলে ধরতে পারেননি, যা দেখে নবীনরা উদ্বুদ্ধ হবেন। এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই আজ এ বাংলাদেশে যে, যুবকদের শ্রদ্ধা না হয় পরে হবে, অন্ততপক্ষে আস্থাটুকুও অর্জন করতে পারে। শিক্ষা, ব্যবসায়, আইন, চিকিৎসা, সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র, টাউটগিরি-কোনো কিছুই মানুষকে আজ আর নাড়া দেয় না, উদ্বুদ্ধ করে না কর্মে, উজ্জীবিত করে না অন্তর্গত মনুষ্যত্বকে। এটি পুঁজিবাদী বিশ্বের একটি সাধারণ ব্যাধি। মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন একবার বলেছিলেন, বয়স্কদের তিনি মোটেই বিশ্বাস করেন না, কেননা তারা মিথ্যুক ও প্রতারক; সেজন্য তিনি শিশু ও কিশোরদেরই ভালোবাসেন। বাড়িয়ে বলেছেন হয়তো, তবে মিথ্যা বলেননি কথাটা। গোটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটাই ভর করে আছে অন্যের শ্রমশক্তি আত্মসাৎ করার ওপর। সবাই যেখানে কমবেশি অপরাধী-হয় অন্যায় করে, নয়তো অন্যায় সহ্য করে; সেখানে সৎমানুষ পাবেন কোথায় খুঁজে? যেতে হয় তাই শিশুর কাছে, কিশোরের কাছে। কিন্তু শিশু-কিশোররা তো দূর-দ্বীপবাসী নয়, তারাও কি প্রতিনিয়ত দুষ্ট হচ্ছে না সমাজের দোষ দ্বারা? আমরাও আজ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি এ সবুজ দেশে। অন্যায় আগেও ছিল, এখন তার কৌশল ও ব্যাপকতা বেড়েছে।

যুবক-যুবতিদের তাই ভবিষ্যৎ নেই। ‘যুবতি’ কথাটা এলেই অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। ওই কথার গায়ে বিরূপতা, অবজ্ঞা ও শোষণের অনুষঙ্গ ব্যাপ্ত রয়েছে। মেয়েদের অবস্থা নিঃসন্দেহে এক ডিগ্রি বেশি খারাপ। তারা ছেলেদের সঙ্গে গোটা ব্যবস্থার দ্বারা নিগৃহীত, তদুপরি ছেলেদের হাতে দ্বিতীয়বার নিগ্রহ হতে হয় তাদের। দাসেরও দাস, দাসানুদাস।

দেশ নিয়ে অনেকেই ভাবেন, যারা ভাবেন, তাদের একটি জরুরি প্রশ্নের জবাব এখনই দিতে হবে: যুবকদের রাজনীতি দেবেন, নাকি মস্তানির পথে ঠেলে দেবেন? যৌবনযুদ্ধে গিয়েছিল একাত্তরে, যুদ্ধ-প্রত্যাগত সেই দুঃসাহসী যৌবনকে অস্ত্রসংবরণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ওদিকে শত শত, হাজার হাজার যুবকের হাতে যে অস্ত্র তুলে দেওয়া হলো, তার বিচার কী? ক্ষেত্রবিশেষে আগ্নেয়াস্ত্র পেয়েছে তারা। সাধারণভাবে, নির্বিশেষে, পেয়েছে তারা বেকারত্ব, হতাশা আর মস্তানি। স্বাধীন হওয়ার পর সরকার যদি যুবকদের উপেক্ষা করত, তবে সেটা মন্দের ভালো হতো, কিন্তু তারা যে কৃপাদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন, বিপদটা তো তাতেই ঘটল ভালো করে। সর্বনাশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে এলো। নিজেদের দলীয় স্বার্থে যুবকদের ব্যবহার করলেন। আর পাছে তারা বিরোধী দলে চলে যায়, কিংবা ওই যে ভয়ের মধ্যে সেরা ভয়, পাছে তারা কমিউনিস্ট হয়ে যায়, সেই আতঙ্কে তাদের মস্তান হওয়াটাকে বরং পছন্দ করলেন। প্রশ্রয় দিলেন। যাও বাছারা মদ-গাঁজা খাও, খেয়ে ঝিমাও। শিক্ষা নেই, ভবিষ্যৎ নেই, কারও প্রতি শ্রদ্ধা নেই, সর্বোপরি জীবন-যৌবনের চ্যালেঞ্জ নেই, যুবকরা বাঁচে কী করে? রাজনীতিই কেবল বাঁচাতে পারে। যুবককে ও যৌবনকে। বুর্জোয়াদের রাজনীতি নয়, সমাজ বিপ্লবের রাজনীতি। সেখানে কাজের কোনো অভাব নেই, দুঃসাহসের নয়, আশারও নয়। অন্তহীন সম্ভাবনা সম্মুখে প্রসারিত-মানুষকে সচেতন ও সংগঠিত করার এবং সেই প্রক্রিয়ায় নিজেরাও সচেতন, শিক্ষিত ও রূপান্তরিত হওয়ার। জীবন-জীবিকা সেখানে এক ও অভিন্ন হয়ে যাবে। মেয়েদেরও নেওয়া চাই, কেবল নেত্রী করে নয়, সহকর্মী হিসাবেও। বাংলাদেশে আমরা মানুষ চাই, নাকি মস্তান চাই এ কোনো নৈতিক প্রশ্ন নয়, নির্জলা রাজনৈতিক প্রশ্ন বটে। এর সঠিক জবাবের ওপরই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তার বাইরে সবটাই জোড়াতালি, তাতে তালিই বাড়বে, জোড়া লাগবে না, লজ্জাও ঢাকবে না-যদি অবশ্য লজ্জা থাকে। লজ্জা না থাকুক, বাঁচার ইচ্ছাটা তো থাকবে। যুবকদের মস্তান হতে প্রাণপণে সাহায্য করে কেন তারা মানুষ হচ্ছে না বলে বিরাট আকারে আক্ষেপ করা-সমষ্টিগত ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করারই আরেকটি পথ বটে। হয় মস্তান, নয় মানুষ, এর মধ্যে তৃতীয় কোনো অবস্থান আছে বলে আমরা যেন ভেবে না বসে থাকি। দো-আঁশলারা মানুষ নয়, দেখতে যা-ই মনে হোক।

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম