‘অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা’র কথা
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
এহসান হাবীব
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![‘অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা’র কথা](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/12/235874-67ac2e9c79be7.jpg)
৫২ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। এ বায়ান্ন বছরে কতটুকু এগোল বাংলাদেশ? স্বাধীনতার পরপরই ’৭৩ সালের নির্বাচন, বিরোধী মতের হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা, সিরাজ শিকদারকে ক্রসফায়ারের নামে পরিকল্পিত হত্যা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাহরণ, হাজার হাজার জাসদকর্মীকে হত্যা, একদলীয় বাকশাল, ’৭৫ সালের নির্মম হত্যাকাণ্ড, সেনাশাসন, সেনাশাসকের হাত ধরে বহুদলীয় গণতন্ত্র, আবার হত্যাকাণ্ড, আবার সেনাশাসন, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন-এসবই ঘটনাবহুল বাংলাদেশের প্রতিচিত্র। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির মাত্র কুড়ি বছরের মাথায় এসব ঘটনাবলি বাংলাদেশের বিকাশকে যেমন রুদ্ধ করেছে, তেমনি প্রতিটি ঘটনায় প্রতিবাদমুখর বাঙালির অবস্থান বাংলাদেশকে আশা জুগিয়েছে। রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রশাসকদের নানাবিধ ছলচাতুরী, নিপীড়ন, নির্যাতনে এ দেশের কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী-শিল্পী জাতপাত ভুলে গণমানুষের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিবাদে কলম ধরেছেন, গান গেয়েছেন, কবিতা লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন। এগুলো আমাদের ইতিহাসের উজ্জ্বল স্মারক। কিন্তু গত দেড় দশক? এখানে এসে কলম থেমে যায়। যেন একটা ব্লাকআউট পর্ব চলছে। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির জায়গায় যেন অন্ধকার যুগ চলছে। এ সময়ে এ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ চরম উৎকর্ষ লাভ করেছে। চারদিক থেকে অবরুদ্ধতা ঘিরে ধরেছে। পুলিশের গুলি থেকে রেহাই পায়নি মায়ের পেটের শিশু। বিশ্বজিৎ সারা দুনিয়ার মানুষের সামনে প্রকাশ্য রাস্তায় খুন হয়ে গেল; তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তনু ধর্ষিত হলো, ধর্ষণের পর খুন। নিজ গৃহে খুন হলেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। এসবও এক দশক আগের ঘটনা। ক্রসফায়ারের নামে রাষ্ট্র হত্যার উৎসবে মেতে উঠেছে। স্ত্রী-কন্যাকে সচল ফোনের মধ্যে রেখে খুব ঠান্ডা মাথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালিয়ে দিয়েছে পিতা একরামের মাথায়। ফোনের একপ্রান্তে স্ত্রী আর কন্যা আহাজারি করছে আর অপরপ্রান্তে তড়পাতে তড়পাতে মারা গেলেন একরাম। রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের নমুনা। এর একটারও বিচার হয়নি। বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থা সরকারের অঙ্গুলি নির্দেশে চলে। এলো তথ্যপ্রযুক্তি আইন। ৫৭ ধারার রমরমা কারবার হলো। অসংখ্য মানুষকে এই ধারায় জেলে পুরে নির্যাতন করা হলো। লেখক মোশতাক তো জেলের মধ্যে মারাই গেলেন। এভাবে একটা ভয়ের বোবা উপত্যকায় পরিণত করা হলো বাংলাদেশকে। ৫৭ ধারা ভেঙে নতুন রূপে আরও ভয়ংকরভাবে ফিরে এলো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। ভয়ের মাত্রা আরও ছড়িয়ে দিয়ে একে একে লুটপাট করা হলো ব্যাংক, শেয়ারবাজার, টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র। লক্ষ লক্ষ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলো। বিরোধী মতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য চালানো হলো গুম-খুনের নতুন নতুন অপারেশন। গুম এ অবরুদ্ধ ব-দ্বীপে একটা ভয়ংকর শব্দ হিসাবে আবির্ভূত হলো। সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক কর্মী, কবি, লেখক, সাংবাদিক, ছাত্র, শিক্ষক কেউই রেহাই পায়নি এই নীল বিষের ছোবল থেকে। আর এসবের মধ্য দিয়ে কেড়ে নেওয়া হলো মানুষের মত ও ভোটের অধিকার। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ আসন দখল করা হলো। বাকিগুলো সমঝোতার মাধ্যমে ভাগাভাগি করা হলো নিজেদেরই তৈরি বিরোধী দলের সঙ্গে। ২০১৮ সালে ভোটের নামে করা হলো অভিনব প্রহসন। আগের রাতেই প্রশাসনের সহায়তায় ব্যালট বাক্স ভরে ফেলা হলো সিলমারা ব্যালটে। দিনের বেলায় যারা কেন্দ্রে যেতে চেয়েছিলেন, তারা কেন্দ্রে গিয়ে শুনলেন, তাদের ভোট হয়ে গেছে। সুবর্ণচরের এক গৃহবধূ-ভোট দেওয়ার অপরাধে সারারাত তাকে আটকে রেখে চালানো হয় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ। এসবই বাংলাদেশের চিত্র। যেন বোম্বের কোনো অ্যাকশননির্ভর সিনেমার চিত্রনাট্য লিখছি। কিন্তু এটাই বাস্তব। ঘটেছে বাংলাদেশে। যেন এখানে এক ‘দানবের আখ্যান’ রচিত হচ্ছে।
এ বর্বর জুলুমের যুগে আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করি, বাংলাদেশের অনেক মিডিয়া, কবি-লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবী এসব অনাচারের বিরুদ্ধে চুপ থেকেছেন। চুপ থেকে সরকারকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে নানা ছুতোয় সরকারের পক্ষে কলম ধরেছেন। অথচ বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে এর উলটোটা। আমরা হতবাক হয়ে দেখলাম, এ সময়ে কবিরা সরকারি মাহফিলে কবিতা পড়ার জন্য লাইন ধরছে, শিল্পীরা বন্দনাগীত গাইছে, বুদ্ধিজীবীরা তাদের দালালির আলখাল্লা পড়ে ছুটছে সরকারি ভবনগুলোতে। এর বিপরীতে আমরা ২০১৮ সালে কয়েকজন সতীর্থকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলাম ‘অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। আমি, চিনু কবির, সরকার আজিজ, বিজন সম্মানিত, অনুপ সাদি, হাসান জামিল, সৌরভ মাহমুদ (সময়ের যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়ে সৌরভ আত্মহত্যা করেছে), মিলু হাসান, মাহমুদুল শান্তসহ আর কয়েকজন মাত্র জড়িত ছিলাম সেসময়। আমরা বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা পড়তাম। ময়মনসিংহ থেকে শুরু করেছিলাম। আমরা মৌলভীবাজার ও খুলনায় অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। তখন আমাদের ডাকে খুব বেশি কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সাড়া দেয়নি।
আমরা খেয়াল করলাম, অল্প অল্প করে হলেও প্রতিবাদের ভাষাটা আমাদের কবিদের ভেতর থেকে উচ্চারিত হচ্ছে। তারা লিখছেন একটু একটু করে। যেন ছোট্ট ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ একেকটা। চিন্তা করলাম, ছোট্ট ছোট্ট স্ফুলিঙ্গগুলোকে একটি পাত্রে ধরে রাখা যায় কিনা? যদি একত্র করা যায়, তাহলে এই স্ফুলিঙ্গই হয়তো একদিন বড় বিস্ফোরণ হতে পারে। ফ্যাসিবাদবিরোধী গণমানুষের লড়াইয়ে এ বিস্ফোরণ হয়তো বাংলার কবিকুলের দায় কিছুটা হলেও মোচন করতে পারবে। সেই চিন্তা থেকেই ‘অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা’ নামের এ সংকলন।
আমার বন্ধু কাফি কামাল। প্রতিবাদী চেতনার এক কবি, লড়াকু সাংবাদিক। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করার কারণে নির্বাচনের দিন প্রকাশ্য রাস্তায় মেরে রক্তাক্ত করা হয় তাকে। পরবর্তীকালে বেশ কয়েকবার তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। জীবন বাঁচাতে কাফি পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। তিনি সেখানে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। ওখানকার একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘বলতে চাই’ নামক একটা টকশো সঞ্চালনা করেন। এ টকশোতে কাফি আর আমি দুজনে মিলে বেশ কয়েকটি পর্বে অংশ নিয়েছি। টকশোর আগে-পরে আমাদের নানা বিষয় নিয়ে কথা হতো। কবিতা নিয়ে, বাংলাদেশের কবিদের নিয়ে। দুর্বিনীত দুঃসহ সময়ে আমাদের কবিরা ফুল-পাখি-লতাপাতা-প্রেম নিয়ে পড়ে আছে এসব নিয়ে আমরা দুঃখ করতাম। টিপ্পনী কাটতাম। আবার দুজনই বলতাম, অমুক তো এরকম লিখছে, তমুক তো একটা দারুণ প্রতিবাদের কবিতা লিখছে। তখন আমরা দুজনই খুব করে অনুভব করতাম এরকম একটা সংকলনের প্রয়োজনীয়তা। যেন এক মলাটে এই প্রতিবাদগুলো ধরে রাখা যায়। যাতে করে ভবিষ্যৎ সময়ের পাঠকরা এই সাহসী কবিদের মূল্যায়ন করতে পারে। তা নাহলে সময়ের প্রতি বিরাট অবিচার করা হবে। ভবিষ্যৎ ধারণা করে বসতে পারে যে, এ সময়ে বাংলাদেশের সব কবি একযোগে ক্লীব ও অমেরুদণ্ডীতে পরিণত হয়েছিল। এমন ভাবনা থেকেই আমরা সিদ্ধান্তে নিই যে, ‘অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা’ নামে সংকলনটি আমরা করব। আমরা জানি, রাজনৈতিক কবিতা স্লোগানসর্বস্ব হয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে। ফলে কাজটা আমাদের জন্য অনেক গণমানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ইতিহাসে কবির সাহস ও কবিতার প্রেরণাদায়ী উদ্দীপক শক্তি নিজস্ব মহিমায় ভাস্বর।
অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কবিতা সাহসকে উসকে দেয় বারুদের মতো। নানা কালখণ্ডের ইতিহাসে সাহসী কবিরা তাই একেকটি উজ্জ্বল তারকা। তাদের অমর পঙ্ক্তিগুলো প্রতিবাদী মানুষের রক্তে নাচন তোলে স্থান-কালের সীমানা ছাড়িয়ে। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে উচ্চারিত হয় নাজিম হিকমত, পাবলো নেরুদা, ভ্লাদিমির মায়াকভস্কি, মার্টিন নিমোলার, ল্যাংস্টন হিউজ, এদুয়ার্তো গালেয়ানো, অক্তাবিও পাজ, মাহমুদ দারবিশ প্রমুখের কবিতা। বাংলা ভাষার কবিদের হাতেও রচিত হয়েছে চিরন্তন প্রতিবাদের উজ্জ্বল পঙ্ক্তি। বাংলা এমন একটি ভাষা, যার অধিকার আদায় হয়েছে প্রাণের বিনিময়ে। এ ভাষায় রচিত হয়েছে সর্বকালে রক্ত নাচন-তোলা কবিতা ‘বিদ্রোহী’। বিদ্রোহী কবি আখ্যা পেয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত হয়েছে তার কবিতা। কারাভোগ করেছেন তিনি। আমাদের রয়েছে প্রতিবাদী কবিতার উজ্জ্বল ইতিহাস। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে কাজী নজরুলের ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’ কিংবা সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়: পূর্ণিমাচাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’র ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ-পরবর্তীকালে সুভাষ বন্দোপাধ্যায়ের ‘প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য, ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা’, শঙ্খ ঘোষের ‘নিভন্ত এই চুল্লিতে মা, একটু আগুন দে; আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি, বাঁচার আনন্দে’, নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’, শামসুর রাহমানের ‘আসাদের শার্ট’ মুক্তিযুদ্ধসহ গণমানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষ নিয়ে রফিক আজাদের কবিতা ‘ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো’ কাঁপিয়ে দিয়েছিল রাজসিংহাসন। সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাকশাল গঠন ও মাত্র চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে আবু সালেহ’র লেখা ‘ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা, রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা’ আলোড়ন তুলেছিল গণমানুষের মনে। এখনো মুখে মুখে ফেরে সে কবিতা। রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ এখনো সমকালীন। জেনারেল এরশাদের কবিতা রচনা নিয়ে মোহাম্মদ রফিক উচ্চারণ করেছিলেন দুঃসাহসী পঙ্ক্তি ‘সব শালা কবি হবে, পিপীলিকা গো ধরেছে উড়বেই’। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজের প্রতি এক জাদুকরী আহ্বান ছিল হেলাল হাফিজের-‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। পরবর্তীকালে আবদুল হাই শিকদার উচ্চারণ করেছিলেন ‘এই বধ্যভূমি একদিন স্বদেশ ছিল’।
দীর্ঘ দেড় দশক ধরে কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে বাংলাদেশে। গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার হারিয়ে গেছে সে শাসনের অন্ধকারে। ক্ষমতাসীন ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। আমরা পরামর্শ করে কবিদের তালিকা করি-কারা কারা এই অবরুদ্ধ সময়ের বিরুদ্ধে লিখছেন। আমাদের সীমাবদ্ধতাহেতু কেউ কেউ হয়তো বাদ পড়ে গেছেন, তাদের খোঁজ আমরা পাইনি। এ আমাদের অক্ষমতা। স্বীকার করে নিচ্ছি। আমরা কোনো গণবিজ্ঞপ্তি দিইনি। প্রকাশ্য কোনো আহ্বানও জানাইনি। তালিকা ধরে ধরে তাদের ফোন দিয়েছি। তাদের মধ্য থেকে আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। মাত্র দশ দিনে এই পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়েছে। টানা কাজ করেছি আমরা। কাফির সঙ্গে আমার দিনরাতের পার্থক্য। ফলে এ দশ দিন আমাদের প্রায় না ঘুমিয়েই শুধু স্ক্রিপ্টের পেছনেই সময় দিতে হয়েছে। কবিতা বাছাই করতে গিয়ে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অনেকের কবিতায় রাজনৈতিক বক্তব্য থাকলেও আমাদের ধারণায়, সেখানে কবিতার অভাব ছিল। কারও কবিতা হয়তো খুবই মনোমুগ্ধকর, কিন্তু দেখা গেল সেখানে অবরুদ্ধ সময়টা ধরা পড়ছে না। যেহেতু বিশেষ সময়ের ক্ষত, যন্ত্রণা, আবেগ, উচ্ছ্বাস, দ্রোহকে ধরার একটি প্রয়াস এ সংকলন, সেহেতু আমরা সেগুলো সংকলনভুক্ত করতে পারিনি। যতটুকু সম্ভব, সংকলনে এ দুইয়ের মিশেল দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বাকি মূল্যায়ন পাঠক ও সময়ের কাছে রেখে দেওয়া ছাড়া আর কীই-বা করতে পারি? এ সংকলন করা সম্ভবই হতো না, যদি না সংকলনভুক্ত কবিগণ এ বিষয়ে আন্তরিক না হতেন। তারা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কবিতা পাঠিয়েছেন। বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই মাহবুব মোর্শেদ, সাইয়েদ জামিল ও পলিয়ার ওয়াহিদকে। এ কবিত্রয় যে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, তা এক কথায় প্রকাশ করার বিষয় নয়। সংকলনের কাজে আমি তাদের দিনে কী রাতে ফোন করে প্রচুর জ্বালিয়েছি। প্রথম জন অগ্রজ, অপর দুজন অনুজ। আপনারা আমাকে নিজগুণে ক্ষমা করবেন। আপনাদের সাহস, সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ এত দ্রুত সম্পন্ন হতো না। সবশেষে বলি, প্রকাশনা সংস্থা ‘আদর্শ’র কথা। একে তো ভয়ের রাজ্য, তার ওপর কবিতার সংকলন। কে নেবে এর ভার? এগিয়ে এলো ‘আদর্শ’। আদর্শকে ভালোবাসা।
লেখক : কবি ও সম্পাদক