Logo
Logo
×

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা

‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’র শিল্প

Icon

চপল বাশার

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’র শিল্প

বাংলাদেশের চা শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। দেশের জিডিপিতে চা শিল্পের অবদান এখনো ১ শতাংশ। এটা ধরে রাখতে হলে চা শিল্পে বিরাজমান বহুবিধ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। চা শিল্পকে শুধু বাঁচিয়ে রাখলে হবে না, এর সার্বিক উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন প্রয়োজন, যাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এ পণ্য উচ্চতর অবস্থানে থাকে। চা শিল্পের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন অসম্ভব বা কঠিন কিছু নয়। এর জন্য শুধু দরকার সংশ্লিষ্ট সব মহলের সদিচ্ছা ও যথাযথ উদ্যোগ। মনে রাখতে হবে, চা শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে এবং সেই সঙ্গে এর ওপর নির্ভর করে লাখ লাখ পরিবারের জীবিকা।

এদেশে চা চাষের সূচনা হয় প্রায় দুশ বছর আগে। পরীক্ষামূলক চায়ের চাষ হয় ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে। ব্রিটিশ বণিকরাই এদেশে চা পাতার চাষ ও চা উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছিল। চট্টগ্রামের পর সিলেটে চায়ের চাষ করে ভালো ফল পাওয়া যায়। বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু ১৮৫৪ সালে, সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে। এ পানীয়কে জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে বিনামূল্যে মানুষকে চা খাওয়ানো হতো। বিভিন্ন রেলস্টেশনে পানীয় হিসাবে চায়ের উপকারিতা বর্ণনা করে পোস্টার লাগানো থাকত। সেখানে তৈরি চা বিতরণ করা হতো রেলযাত্রীদের মধ্যে। এভাবেই এদেশের মানুষ চা পানে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং পয়সা খরচ করে চা খাওয়া শুরু করে।

যে চা একসময় বিনামূল্যে খাওয়ানো হতো, তা এখন ঢাকার ফুটপাতের দোকানে বিক্রি হয় প্রতি কাপ দশ টাকায়। দুধ-চিনি দিয়ে খেলে প্রতি কাপের দাম ১৫ টাকা। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে চা খেলে আরও বেশি দাম দিতে হয়। সন্দেহ নেই, এদেশে চা এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। ধনী-দরিদ্র সবাই চা পানে অভ্যস্ত। দেশে চায়ের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েই চলেছে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় ছোট-বড় ১৬৯টি বাগানে চা উৎপাদিত হচ্ছে। আমাদের চা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বহু বছর ধরে। চা উৎপাদনে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। কিন্তু চা রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন আর আগের মতো নেই, ক্রমেই নিম্নগামী। এর প্রধান কারণ আমাদের চায়ের মান। এদেশে উৎপাদিত চায়ের মান ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত। চায়ের মান ভালো না হলে বিদেশের বাজারে এর চাহিদা বাড়বে না, বরং কমতে থাকবে। আর দেশের মানুষ, যারা চা কিনে খান, তারাও ভালো ও উচ্চমানের চা পান করতে চান। দেশি চায়ের মান যদি খারাপের দিকে যেতেই থাকে, তাহলে চায়ের দেশে বিদেশি চা আমদানি শুরু হবে। দেশি চায়ের মান ভালো না হলে দেশের মানুষও আমদানি করা চায়ের দিকে ঝুঁকবেন, বাংলাদেশের চা শিল্প তখন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। চা বাগানের মালিকরা তাদের বাগানে অন্য ফল বা ফসলের চাষ শুরু করবেন। সেটা কি দেশ বা দেশের জন্য ভালো হবে? হবে না। তাহলে উপায় কী? উপায় একটাই-চায়ের মান যেভাবেই হোক উন্নত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, চা বাগানের মালিক, শ্রমিক, বিক্রেতা, ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকদের সমবেত উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা।

দেশের চা বাগান, উৎপাদন

বাংলাদেশের আটটি জেলায় এখন ১৬৯টি এস্টেট বা চা বাগানে চায়ের চাষ ও উৎপাদন হচ্ছে। জেলাগুলো হলো-মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। সবচেয়ে বেশি চা বাগান রয়েছে মৌলভীবাজারে, ৯০টি। এরপরই হবিগঞ্জ, সেখানে রয়েছে ২৫টি চা বাগান। চট্টগ্রামে আছে ২২টি, সিলেটে ১৯টি, পঞ্চগড়ে ৯টি, রাঙ্গামাটিতে ২টি এবং খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁয় ১টি করে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫ হাজার ৩৫১টি স্থানে ছোট আকারের জমিতে চায়ের চাষ হয়।

চা রপ্তানি থেকে বার্ষিক আয়ের হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ খাতে আয় ওঠানামা করে। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় চা রপ্তানি থেকে আয় নিম্নগামী। বাংলাদেশ যেসব দেশে চা রপ্তানি করে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, কানাডা ও পাকিস্তান। চা রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্থান এখন ৬১তম। এ অবস্থান মোটেই সন্তোষজনক নয়।

চায়ের গুণগতমান

বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের গুণগতমান ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চা রপ্তানিতে। গত ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সিলেটের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে বাংলাদেশের চা শিল্প নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের আয়োজক সাংবাদিকদের সংগঠন কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (সিজেএ) বাংলাদেশ শাখা। বাংলাদেশ চা বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সারওয়ার হোসেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আলিমুল ইসলাম ছাড়াও চা শিল্প সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা সেমিনারে তাদের বক্তব্য রাখেন। বক্তারা চা শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। একটি বিষয়ে সব বক্তাই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এদেশে উৎপাদিত চায়ের গুণগতমান কমে যাচ্ছে। মান কেন কমেছে সে বিষয়ে বক্তারা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

দেশের অধিকাংশ চা বাগানের বয়স একশ বছরের বেশি। দেড়শ বছরের পুরোনো চা বাগানও আছে। এসব প্রাচীন বাগানের চায়ের গাছও প্রাচীন। এগুলোর উৎপাদনশীলতা কমে গেছে। এসব গাছ থেকে উন্নত মানের চা পাতা যাওয়া যায় না। চা গাছের ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ দিয়ে মানসম্মত চা উৎপাদন করা যায়। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় না। ফলে চায়ের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় না।

চা উৎপাদনে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতাও আছে। সিলেট বিভাগের অনেক বাগানের কারখানায় সীমান্তের ওপার থেকে চোরাচালান হয়ে আসা নিম্নমানের চা মেশানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে চায়ের গুণগতমান কমে যায়। চা পাতা থেকে চা উৎপাদনের সময় রং মেশানোর অভিযোগ আছে। চা দেখতে যেন সুন্দর হয় সেজন্যই রং দেওয়া হয়। এ অভিযোগ গুরুতর। কেমিক্যালযুক্ত রং দিয়ে তৈরি চা খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। ভেজাল দেওয়ার এ প্রবণতা রোধ করা জরুরি।

অধিকাংশ চা বাগানের কারখানায় প্রাচীন ও সেকেলে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। এসব পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে মানসম্মত চা উৎপাদন সম্ভব নয়। চা কারখানাগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি, কিন্তু তা হচ্ছে না।

চা বাগানের গাছগুলো যেন সতেজ থাকে সেজন্য পর্যাপ্ত শেড ট্রি বা ছায়াতরু থাকা দরকার। কিন্তু অনেক চা বাগানেই দেখা যায় যথেষ্ট শেড ট্রি নেই। চা গাছের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার এটাও অন্যতম কারণ।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও চা চাষে বিঘ্ন ঘটছে। অনাবৃষ্টি অথবা অতিবৃষ্টির কারণে চায়ের চাষ প্রায়ই ব্যাহত হয়, উৎপাদিত চা পাতা থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না।

চা শ্রমিকদের জীবন

চা শিল্পে সরাসরি নিয়োজিত জনশক্তি ৫ লাখ হলেও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত জনশক্তি অনেক বেশি। সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলোর জন্য ব্রিটিশ বণিকরা ভারতের মাদ্রাজ, ওড়িশা, বিহার থেকে শ্রমিক এনেছিল দেড়শ বছর আগে। তাদের উন্নত জীবনযাত্রা ও বেশি পারিশ্রমিকের প্রলোভন দেখিয়ে এদেশে আনা হয়। কিন্তু উন্নত জীবনযাত্রার পরিবর্তে তারা পেয়েছে ক্রীতদাসের জীবন। তাদের নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাদের বংশধররাই এখন এদেশের নাগরিক হিসাবে চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করছে।

ব্রিটিশরা এদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত হয়েছে সন্দেহ নেই। তাদের স্থায়ী আবাসন, সাপ্তাহিক মজুরি, রেশন দেওয়া হয় সরকার নির্ধারিত হার ও নিয়মে। শ্রমিকদের অভিযোগ-তারা যে পরিমাণ শ্রম দেন, সে তুলনায় ন্যায্য মজুরি পান না। এখনকার নিয়ম অনুযায়ী একজন শ্রমিক চা বাগান থেকে দিনে ২৫ কেজি চা পাতা উত্তোলন করে জমা দিলে ১৭০ টাকা পাবেন। জমা দেওয়া চায়ের পরিমাণ যদি কম হয়, তাহলে মজুরির পরিমাণও কমে যায়। এছাড়া একজন শ্রমিক সপ্তাহে ৩ কেজি চাল অথবা আটা রেশন হিসাবে পান। বছরে দুবার উৎসব বোনাস দেওয়ার নিয়ম আছে। শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা মালিকপক্ষ করে থাকেন

শ্রমিকরা বলেন, দিনে ২৫ কেজি চা পাতা সংগ্রহ কষ্টকর কাজ। সবাই পেরে ওঠে না। ২৫ কেজি চা পাতা তুললেও পাওয়া যায় ১৭০ টাকা, এতে তাদের সংসার চলে না। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছিল প্রায় দুবছর আগে। বেশ কিছুদিন কর্মবিরতি চলার পর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে ধর্মঘট বন্ধ হয়। মালিকপক্ষ দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণে রাজি হয়। এখনো সেই হারই বজায় আছে।

চা বাগানে শ্রমিকের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। যন্ত্রপাতি বা আধুনিক মেশিন দিয়ে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ তোলা যাবে না। শ্রমিকের হাত সেখানে লাগবেই। এজন্য চা শিল্প শ্রমভিত্তিক বা শ্রমকেন্দ্রিক শিল্প। শ্রমিক যদি সন্তুষ্টচিত্তে কাজ করতে পারেন, তাদের মনে ক্ষোভ না থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক কাজ পাওয়া যায়। এজন্যই চা বাগান মালিকদের উচিত শ্রমিকদের কল্যাণে আরও মনোযোগী হওয়া।

চা বাগানের মালিকদেরও সমস্যা রয়েছে। যার অন্যতম হচ্ছে, ব্যাংক ঋণের সুদের হার। চা বাগানের জন্য আগে কৃষি ক্যাটাগরিতে ঋণের জন্য ৯ শতাংশ হারে সুদ দিতে হতো। পরে চা বাগানকে শিল্প ক্যাটাগরিতে এনে ১৪ শতাংশ হারে সুদ নেওয়া হচ্ছে। এতে মালিকদের ব্যয় বেড়ে গেছে, তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকারের উচিত হবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চা বাগানগুলোকে কৃষি খাতের হারে ঋণ দেওয়া। ব্যাংক ঋণ ছাড়াও আরও যেসব সমস্যা মালিকদের রয়েছে, সেগুলোর সমাধানও সরকারকেই করতে হবে।

চা শিল্পের আধুনিকায়ন

চায়ের মান উন্নয়নে চা বাগান ও চা প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন অতি জরুরি। প্রাচীন আমলের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উন্নতমানের চা উৎপাদন আশা করা যায় না। সেকেলে যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন ব্যবহার করলে চায়ের মান বাড়বে।

চা বাগান থেকেও পুরোনো চা গাছ অপসারণ করে অধিক ফলনশীল চা গাছের চারা রোপণ করতে হবে। খরা ও অনাবৃষ্টি মোকাবিলার জন্য চা বাগানে আধুনিক সেচ ব্যবস্থার প্রচলন করা দরকার। একইসঙ্গে আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থাও থাকতে হবে, যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। চা গাছে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করতে হবে; এতে মাটির উর্বরতা নষ্ট হবে না, চা পাতার পর্যাপ্ত ফলন হবে।

শ্রমশক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শ্রমিক কল্যাণে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান যতটা সম্ভব উন্নত করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে যেন তারা তাল মিলিয়ে চলতে পারেন, সেজন্য তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি চা শিল্পের উন্নয়নে অবশ্যই অবদান রাখতে পারে।

বাংলাদেশের চা শিল্প এখন যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, তা মোকাবিলা করা কঠিন নয়, যদি সব পক্ষ আন্তরিক উদ্যোগ ও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়।

লেখক : সাংবাদিক

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম