Logo
Logo
×

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা

তরুণরা সামনে আসবেন এটাই বাংলাদেশ

Icon

সামান্তা শারমিন

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তরুণরা সামনে আসবেন এটাই বাংলাদেশ

এ মুহূর্তে যে তরুণরা পাদপ্রদীপের আলোয় আসছেন-তারা আসলে সামনে আসার জন্য প্রস্তুতই ছিলেন। তারা সামনে আসবেন, এটাই বাংলাদেশের নিয়তি। বাংলাদেশের এই রেজিস্ট্যান্স ফোর্স এখন নাগরিক কমিটিতে আছেন, বৈষম্যবিরোধীতে আছেন, বাইরে কিছু মানুষ আছেন, তারাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবেন। যে রেজিস্ট্যান্স ফোর্স আসলে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে, তারা সবাই বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তাদের প্রক্রিয়া, প্রস্তুতি আগে থেকেই সম্পন্ন করা ছিল। এখন শুধু সামনে আসার পালা।

আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ছাড়া সমাজের বাকি অংশ লোয়ার টায়ারে পড়েছিল। তারা সংগ্রাম করেছে, কথা বলেছে। এতে বুদ্ধিবৃত্তিক মহল, ছাত্র, সাধারণ জনগণ, চাকরিজীবী সবাই আছেন। যারা পুরো ফ্যাসিস্ট রেজিম প্রত্যক্ষ করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে তাদের জীবন ও তারুণ্য অতিবাহিত করেছে। তারা ভোট দিতে পারেননি। তারা লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু তাদের সংগ্রাম, তাদের কথা মূলধারার গণমাধ্যমে আসেনি। রাজনৈতিক জায়গা থেকে এগুলো স্বীকার করা হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগ সব সময় এটাকে পুরোপুরি দমনের চেষ্টা করেছে। ছাত্ররা বা যারাই যখন যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তাদের জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। ছিন্নমূল, অচ্ছুত জনগোষ্ঠী হিসাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাদের কখনোই মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় বা মেইনস্ট্রিমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে দেওয়া হয়নি।

তরুণদের একটা বড় অংশকে ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিনিয়ত ফাইট করতে হয়েছে। আমরা অনেক ধরনের আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু আমরা কখনোই সেই কাভারেজ ও গুরুত্ব পাইনি। কারণ আমাদের বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল নানাভাবে। এ তরুণদের মধ্যে অনেকেরই প্রায় ১০-১১ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আছে। কারও সাত-আট বছরের অভিজ্ঞতা আছে। অন্তত পক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এখানে তরুণদের অনেক আন্দোলন হয়েছে। ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই অনেক ধরনের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর একধরনের রাজনৈতিক চর্চার উন্মেষ ঘটেছে। কারণ তাদের একটা বড় ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিনিয়ত ফাইট করতে হয়েছে, অসম লড়াই করতে হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই তাদের যুক্তি শানিত হওয়া, প্রেজেন্টেশন সাবলীল হওয়ার বিষয়গুলো ঘটেছে।

গত কয়েকটি অবৈধ নির্বাচনের পর সাধারণ মানুষ হতাশ হলেও তরুণ সমাজ চেষ্টা চালিয়ে গেছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর মানুষের মধ্যে হতাশার ছায়া নেমে এসেছিল। সবচেয়ে সংগ্রামী মানুষটাও হয়তো বিষয়টি ভুলতে বসেছিল। তারপরও টানা ৮ মাস তারা অবৈধ নির্বাচনের বিরোধিতার চেষ্টা করে গেছে। এর জন্য ছাত্রদের আমাদের স্যালুট জানাতে হবে। তাদের মধ্যে যদি ওই প্রতিবাদের জায়গাটা না থাকত, তারপরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত না থাকত, তাহলে আমরা হয়তো ৫ আগস্ট দেখতে পেতাম না। ভোটাধিকার কী মাত্রায় অপহৃত হলে চারটা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হতে পারে, এর মধ্যে তিনটি নির্বাচনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় অবৈধই বলা যায়।

নানাভাবে আমাদের দেশের মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। কখনো সাংবিধানিকভাবে, কখনো কখনো আবার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে যদি তাকাই, এখানে আমাদের ৬০ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী। তারা যে পরিমাণ ট্যাক্স এবং ভ্যাট দেয় রাষ্ট্রকে-সে সার্ভিসটা তরুণ জনগোষ্ঠী পায় কি? পায় না। ফলে তাদের অনেকেই বিভিন্নভাবে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। তবে আমরা এখন দেখছি ৫ আগস্টের পর থেকে বিপুলসংখ্যক তরুণ আবার দেশে ফিরে আসতে চান। তারা খুব বেশি কিছু চান না। তারা শুধু কাজ করার অপশনটা চান। বেশি বেতন নিয়ে আসবেন এটাও তারা প্রত্যাশা করেন না। তারা চান সম্মান নিয়ে সমাজে থাকতে। যেখানে তারা কথা বলতে পারবেন। নিজের কাজগুলো করতে পারবেন-শুধু এমন একটা জায়গার অভাবেই তারা বিদেশে চলে যান। সেখানে গিয়ে অনেকে হতাশায় ভুগেছেন, ভুগছেন। কিন্তু তাদের যদি এই দেশে আমরা জায়গা করে দিতে পারি, তাহলে হয়তো আমরা নতুন রাজনীতির ওই ধারাটা অ্যাকচুয়ালি ইমপ্লিমেন্ট করতে পারব। আবার এখানে অনেকে বাধাও দিচ্ছেন। কারণ, আমরা যে ধরনের পরিবর্তনের কথা বলছি, এর মধ্য দিয়ে আসলে দলীয় স্বার্থ কায়েম করা সম্ভব হবে না। এমনকি আমরা যে পার্টির কথা ভাবছি, এ পার্টিও যদি জনগণের বিপক্ষে যায়, তখন এ পার্টির বিরুদ্ধেও দেশের মানুষ কথা বলবে।

১৫ বছর বা দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের ভোটাধিকার হরণ এবং অত্যাচার-নিপীড়ন করা হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। আমরা চাই না এটা আর কখনো বাংলাদেশে সম্ভব হোক। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশে যে উত্তরণ আমরা দেখেছি, এটা ইমপ্লিমেন্ট করতে আরও কিছু সময় প্রয়োজন। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু আমরা মনে করি, একটা ফেজ থেকে আরেকটা ফেজে উত্তরণ অলরেডি আমাদের ঘটে গেছে মানসিকভাবে। এখন দরকার সবাই ঐকমত্য হয়ে সেটাকে ইমপ্লিমেন্ট করা। এ ঐকমত্যের জায়গাগুলো নিয়ে এখন কাজ করার দরকার আছে। যদিও আমরা দেখছি বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক দল পক্ষ-বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে।

এতদিন আমরা দুটি প্ল্যাটফরম থেকে কাজ করেছি। অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে সমুন্নত রাখতে আমরা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আট দফা কার্যকরের কথা বলেছি। এটা দিয়ে আমরা প্রত্যেকটা বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা গত চার মাস কাজ করেছি। আমরা দেখেছি যে, বাংলাদেশের মানুষ একটি রাজনৈতিক দল চাচ্ছে। এখন একটা সময় এসেছে, আমরা মনে করি নতুন রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োজন। কারণ এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে শক্তি বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে, এ শক্তিকে ধারণ করার জন্য একটা প্ল্যাটফরম প্রয়োজন। সে প্ল্যাটফরমটা রাজনৈতিক দল হলে, সেটার গতিমুখটা পলিটিক্যাল হয়। ফলে খুবই স্বাভাবিক প্রয়োজনে এটা হচ্ছে।

নাগরিক কমিটি শুধু একটা রাজনৈতিক দলের সার্ভিস প্রোভাইড করার জন্য গঠিত হয়নি। সেটা এর উদ্দেশ্যও নয়। আমরা এখানে দেখেছি যে, আমাদের প্রথম দিকের যাত্রায় যারা যুক্ত হয়েছিলেন-তাদের সিভিল অ্যাডমায়ারেশন ছিল, ইনস্পিরেশন ছিল। এখন সেই জায়গা থেকে আমরা অনেকটা পলিটিক্যালি মুভ করছি। কিন্তু আসলে বলতে গেলে বাংলাদেশে সিভিল পলিটিক্যাল প্ল্যাটফরম তেমন নেই। সিভিল সোসাইটিকে পলিটিক্যালি অ্যাক্ট করা, যেটা আসলে বাংলাদেশের জন্য অতীব প্রয়োজন। বাংলাদেশের জন্য যে পলিটিক্স প্রয়োজন, সেই পলিটিক্সকে সার্ভ করা, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। শুধু সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টায় সমালোচনা না করে এখন উচিত এটিকে সমাধানের দিকে নিয়ে যাওয়া। যেটাকে আমরা বলেছি-‘দায় ও দরদের রাজনীতি’। সেই দায়িত্ববোধ কাঁধে নিয়ে কোনো সিভিল প্ল্যাটফরম বা সিভিল বডি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, সেটা এ মুহূর্তে দেখছি না। তবে আমরা মনে করি না এটাই শেষ। এটা একটা উদাহরণ হতে পারে, জাতীয় নাগরিক কমিটির যখন পার্টি ফরমেশনটা কমপ্লিট হয়ে যাবে। পার্টি ফরমেশন হয়ে গেলে তারা (পার্টি) ইলেকশন এবং পলিটিক্সে ফাংশন করবে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ারভাবে তার যে সিভিল পলিটিক্যাল চরিত্র, সেটাকে ধারণ করবে। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আমরা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশে যে আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখতে চাই, সেখানে আমরা চাই না মিডিয়া হাউজগুলো তাদের পলিসির কারণে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হোক। যুগান্তরসহ গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের একটি চাওয়া আছে। সেটা হলো-বাংলাদেশে যে নতুন রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটেছে, নতুন চিন্তার উত্তরণ ঘটেছে, রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার উত্তরণ ঘটেছে, সে উত্তরণের সঙ্গে প্রত্যেকটি গণমাধ্যমের কার্যক্রম যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ কার্যক্রম যেন দেশের মানুষের সামনের দিনের যে সংগ্রাম, অর্জন, দুটো ক্ষেত্রেই সংগ্রামী ভূমিকা পালন করতে পারে। যুগান্তরের কাছেও আমাদের আবেদন থাকবে-যারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব এবং যারা বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষে কাজ করে-এমন শক্তির সঙ্গে যুগান্তর থাকবে না। তারা থাকবে জনগণের শক্তির সঙ্গে।

লেখক : জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম