চ্যাট-জিপিটি : শিক্ষা ও গবেষণাক্ষেত্রে এর উপযোগিতা
ড. জিয়াউল লিখন
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বজুড়ে এখন চ্যাট-জিপিটির জয়জয়াকার। ৩০ নভেম্বর, ২০২২-এ চ্যাট-জিপিটির যাত্রা। বর্তমানে ব্যবহারকারী প্রায় ১.৮ বিলিয়ন। এটি একটি ডাটাবেইজ প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা পরিচালিত চ্যাটবট। ইউজারের প্রত্যাশিত উত্তরের জন্য প্রচুর ডাটা সংরক্ষিত রয়েছে এতে। পৃথিবীর বহুল ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন বা মেশিন লার্নিং টুল গুগলের চিত্র ও লিংকভিত্তিক উত্তরের পরিবর্তে এটি টেক্সটভিত্তিক উত্তর দেয়। ফলে এটি গতি এনেছে গবেষণাপত্র তৈরি, নিবন্ধ রচনা, গবেষণাপত্রের সাহিত্য পর্যালোচনা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে। চ্যাট-জিপিটির প্রম্পটে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে এটি যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দ্রুত ও নির্ভুলভাবে জানাতে পারে। ব্যবহারকারীর নির্দেশ মতো নিজ থেকে কবিতাও লিখে দেয় এ চ্যাটবট। চ্যাট-জিপিটি ব্যবহার করে কেউ সৃজনশীল ছবি বিভাগে সেরা হতে পারেন, আবার কেউ ইচ্ছা করলে গোটা উপন্যাসই লিখিয়ে নিতে পারেন এর সহায়তা নিয়ে। টেক্সটভিত্তিক প্রোগ্রাম হওয়ায় চ্যাট-জিপিটি গবেষণা ও শিক্ষা খাতে অনেকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মূলত ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা ওয়েব পেজ, বই, উইকি, আর্টিকেল ইত্যাদি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ফিল্টারিং পদ্ধতি অবলম্বন করে চ্যাটবটে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে এটি বিপুল শব্দ ভান্ডার, বাক্যের বিন্যাস, তথ্যের কোষাগার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের হোমওয়ার্ক, অ্যাসাইনমেন্টের প্রয়োজনীয় তথ্যের সহজলভ্যতা যেমন রয়েছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য বহুমাত্রিক তথ্য প্রাপ্তির নতুন ঠিকানা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এটি আফ্রো-এশিয়াসহ বিশ্বের সব অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষাভাষীদের মধ্যে অনগ্রসর ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের পাঠদানে সহযোগিতার জন্য আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা চলছে।
এত শত উপযোগিতার পরও একের পর এক মামলা খাচ্ছে চ্যাট-জিপিটির উদ্ভাবনকারী মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। যেমন গত বছর মামলা করেছিলেন লেখক জর্জ আর আর মার্টিন, জডি পিকাউল্ট ও জন গ্রিশাম। তাদের অভিযোগ ছিল, এ সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করা হয়েছে। কপিরাইট বা মেধাস্বত্বের প্রশ্নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত চ্যাটবট চ্যাট-জিপিটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরে মামলা করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। মামলায় দাবি করা হয়েছে, চ্যাট-জিপিটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিউইয়র্ক টাইমসের কপিরাইট লঙ্ঘন করা হয়েছে। চ্যাট-জিপিটিকে করিৎকর্মা বানাতে নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশিত লাখ লাখ নিবন্ধ সংবাদমাধ্যমটির অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান ঘটনাবলি সম্পর্কে জানতে চাইলে চ্যাট-জিপিটি কখনো কখনো নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধগুলোর অংশবিশেষ হুবহু উদ্ধৃতি করবে। অথচ এ তথ্য বিনা পয়সায় পাঠককে পড়তে দেয় না নিউইয়র্ক টাইমস। একই মামলায় ওপেনএআইয়ে বিনিয়োগকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটকেও বিবাদী করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, শতকোটি ডলারের বেশি ক্ষতির জন্য এ দুই প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা উচিত। প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়া এ চ্যাট-জিপিটিকে ব্যবহার করে অনেক সংবেদনশীল ও গোপনীয় তথ্য অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এসব কারণে ভবিষ্যতে নতুন নতুন সংকট তৈরি হতে পারে।
চৌর্যবৃত্তি ও সৃজনশীলতা
চ্যাট-জিপিটির বহুবিধ ব্যবহারের একটি ক্ষেত্র হলো একাডেমিক বা শিক্ষামূলক খাত। আমাদের শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে চ্যাট-জিপিটির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে এটি নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহায়ক প্রতারণাকে আরও সক্ষম করে তুলতে পারে, একাডেমিক সততা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াতে পারে এবং সর্বোপরি প্রকৃত শিক্ষার অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়ন ঘটাতে পারে। চ্যাট-জিপিটি এর একটি সম্ভাব্য অপব্যবহার হলো, যথাযথ বৈশিষ্ট্য নিরূপণ ছাড়াই এটি বিদ্যমান কাজের অনুরূপ আদল তৈরি করে। অন্যের কাজ ব্যবহারকারীর নিজস্ব হিসাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম করে তোলে। যথাযথ উদ্ধৃতি ছাড়াই শিক্ষার্থীকে অ্যাসাইনমেন্ট ও এ সংশ্লিষ্ট নানাবিধ প্রতিবেদন তৈরির অনুমতি দিয়ে একাডেমিক অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ন করে। পাশাপাশি এটি মৌলিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির নীতিগুলোকে ক্ষুণ্ন করে। চ্যাটজিপিটির এর মাধ্যমে সুসঙ্গত এবং প্রাসঙ্গিকভাবে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া তৈরির সুবিধা ব্যবহারকারীকে মডেলের ওপর নির্ভর করতে প্রলুব্ধ করে। এতে করে ব্যবহারকারীর সৃজনশীলতা ও ব্যক্তিত্ব বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ ধীরে ধীরে সে মডেলের পরামর্শের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে এবং তার অনন্য চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গী প্রকটভাবে ছায়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সাংবাদিকতার সৃজনশীলতার ওপরও চ্যাট-জিপিটির প্রভাব জটিল। কারণ এটি অনুপ্রেরণা প্রদান করতে পারে এবং ধারণা তৈরি করতে পারে। তাই ব্যবহারকারীকে অবশ্যই এটিকে তার নিজস্ব সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় প্রতিস্থাপনের পরিবর্তে এটিকে শুধু একটি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে জানতে হবে, এটিকে তার অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব চিন্তাভাবনার লঞ্চিং প্যাড হিসেবে ব্যবহার করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে।
বুদ্ধিদীপ্ত বিশ্লেষণী ভাবনা-চিন্তা
এআই প্রযুক্তি এখন বাস্তবতা, একে অগ্রাহ্য করার কোনো উপায় নেই। বিশেষভাবে গবেষকদের চ্যাট-জিপিটির প্রতি আগ্রহের অন্যতম কারণ গবেষণার মানোন্নয়ন ও নিবন্ধ লিখতে ভাষাগত উৎকর্ষতা সাধন। ধারণা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে এটি গবেষণা ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করবে এবং পরীক্ষামূলক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করবে। তবে চ্যাট-জিপিটির ওপর ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে এবং সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না পেলে এটি বিশ্লেষণমূলক চিন্তাভাবনার পরিবর্তে অসম্পূর্ণ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রদান করে। চ্যাটজিপিটির কিছু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন, সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য ইনপুট করা না হলে চ্যাট-জিপিট যথাযথ উত্তর দিতে পারে না। গতিময় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের নব সংযোজন চ্যাট-জিপিটি চমকপ্রদ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করলেও সর্বদাই যে তা সঠিক হবে সে নিশ্চয়তা নেই। এটা তখন হয়ে যায় গুগল ম্যাপ আবিষ্কারের পর গুগল স্ট্রিট দেখে দেখে গাড়ি চালাতে চালাতে খাদে পড়ার মতো ঘটনা। ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক ব্রিয়ান লুসি এবং ডাবলিন ইউনিভার্সিটির মাইকেল ডাউলিং সম্প্রতি তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন দ্য কনভারসেশনে। তাদের দাবি, চ্যাট-জিপিটি ফাইন্যান্স পেপার লেখার কাজে ব্যবহার হতে পারে আর সেটা অ্যাকাডেমিক জার্নাল হিসাবে পাসও করতে পারে। লুসি অ্যান্ড ডাউলিংয়ের দাবি, সব গবেষণাই ওই প্যানেলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তার মানে হচ্ছে এআই টুলটি মানসম্মত প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা তৈরি করতে সক্ষম। যদিও সেটা এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। তারা দেখতে পান টুলটি ভিন্ন ভিন্ন গবেষণা ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম রেটিং পেয়েছে। বিশেষ করে ডাটাসেট ও গবেষণা প্রস্তাব ক্রমাগত ভালো রেটিং পেয়েছে। সাহিত্য পর্যালোচনা পরীক্ষণ পরামর্শের ক্ষেত্রে রেটিং কিছুটা কম এসেছে। তার পরও তা গ্রহণযোগ্য। গবেষকরা দেখেছেন, চ্যাট-জিপিটি বাহ্যিক পরীক্ষণের একটি সেট গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই ভালো। সেই সঙ্গে সেগুলো সংযুক্তও করতে পারে। কিন্তু জটিল ধাপগুলোয় এটি কিছুটা দুর্বল, বিশেষ করে যদি অনেক বেশি ধারণাগত প্রক্রিয়া থাকে, যেমন সাহিত্য পর্যালোচনা বা টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশ বনাম বহির্বিশ্ব
শিক্ষার্থীদের পক্ষে অ্যাসাইনমেন্ট ও পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য চ্যাট-জিপিটি ব্যবহার করার সম্ভাবনাকে আমলে নিয়ে এবং এআই সহায়ক প্রতারণা ঠেকাতে বাংলাদেশের কিছু ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ইতোমধ্যেই তাদের ক্যাম্পাসে চ্যাট-জিপিটির ব্যবহার নিষিদ্ধের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রবন্ধ লেখা, অ্যাসাইনমেন্ট সহায়তা, স্ক্রিপ্ট কোডিং এবং মূল্যায়ন সহায়তার মতো কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য ছাত্রছাত্রীরা চ্যাট-জিপিটি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সহায়তা পেতে পারে। তবে এ সহায়তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। অতিমাত্রায় চ্যাটজিপিটির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের চিন্তাকে বিকশিত করার এবং নতুন ও অনন্য ধারণা তৈরির ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। চ্যাটজিপিটি সমাধান বা তথ্য খোঁজার প্রক্রিয়াকে বেগবান করে, তবে একই সঙ্গে তা শিক্ষার্থীদের নিজস্ব গবেষণা পরিচালনার আকাঙ্ক্ষাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। শ্রেণিকক্ষে চ্যাট-জিপিটি ব্যবহারের জন্য ওপেনএআইয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি (এএসইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চ্যাট-জিপিটির এন্টারপ্রাইজ সংস্করণ ব্যবহার করা হবে। এএসইউ কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারের সুযোগ বাড়ানো, উদ্ভাবন ও গবেষণা ত্বরান্বিত করা এবং সাংগঠনিক প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা-এ তিনটি প্রধান বিষয়ে জোর দেওয়ার জন্য চ্যাট-জিপিটি ব্যবহার করা হবে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই চ্যাট-জিপিটি ব্যবহার করা হয়েছে, এমন প্রকল্প শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেখানকার অনেক অধ্যাপকই শ্রেণিকক্ষে এখন জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করছেন। অনেক কোর্সের ক্লাসে লেখার মান উন্নত করার জন্য এআইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়। এছাড়া মাল্টিমিডিয়া স্টোরি তৈরির জন্য সাংবাদিকতার ক্লাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহৃত হয়। এএসইউর শিক্ষার্থীদের জন্য এআই চ্যাটবটকে তাদের ব্যক্তিগত শিক্ষক হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, ওপেনএআই এই প্রথম কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্ব করল। ব্রিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এখন নিজেরা বোঝার চেষ্টা করছে পরীক্ষার্থীরা চ্যাট-জিপিটির মতো এআই উপকরণ কখন, কীভাবে, কতটা ব্যবহারের চেষ্টা করতে পারে। অনেক ক্যাম্পাসে এটি ব্যবহারের গাইডলাইন দেওয়া শুরু হয়েছে। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর এখন চাপ বাড়ছে তারা যেন শিক্ষার্থীদের এআই এর সঠিক ব্যবহার শেখাতে শুরু করে। বাথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা এখন পরীক্ষায় এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন।
যদিও আমাদের আইটি স্নাতকের সংখ্যা বাড়ছে, তথাপি চ্যাট-জিপিটির মতো উন্নত এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখনো ভ্রূণের পর্যায়ে রয়েছে। পেশাদারদের মধ্যে এআই প্রযুক্তির বোঝার এবং এর সম্ভাব্য সুবিধাগুলো গ্রহণ করার হার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু অনেকের মাঝেই এখনো এ প্রযুক্তি গ্রহণে দ্বিধা রয়েছে। চ্যাট-জিপিটির ব্যবহারকে অনেকেই একটি জটিল প্রক্রিয়া হিসাবে মনে করে। তাদের ধারণা এটি ব্যবহারের জন্য ব্যাপক প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রয়োজন, যদিও আদতে তা সত্য নয়। অনেকেরই আবার এর ব্যবহার শেখার জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও প্রচেষ্টা নেই। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কারিগরি জ্ঞান ও মানসিকতা অ্যারিজোনা বা বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি না হলেও প্রযুক্তির দিক থেকে আমরা নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখা সমীচীন হবে না। সেজন্য সর্বাগ্রে দরকার প্রযুক্তি ব্যবহারের যথাযথ কৌশল নিরূপণ করা। জাতীয় পর্যায়েও এ বিষয়ে যথেষ্ট নজর দেওয়া প্রয়োজন। ‘National Strategy for Artificial Intelligence Bangladesh 2019-2024’-কে একবিংশ শতকের চ্যাট-জিপিটির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠন যেমন বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিসহ বেসিসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। উপযুক্ত কৌশল ও শর্ত নির্ধারণ করেই চ্যাট-জিপিটি ব্যবহারে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পাঠক্রম পরিকল্পনায় এবং পরীক্ষার খাতা দেখার কাজে এআই শিক্ষকদের কীভাবে কাজে লাগতে পারে সে বিষয়েও ভাবনার অবকাশ আছে। শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের লেখাপড়ায় সঠিকভাবে চ্যাট-জিপিটি কাজে লাগাতে পারে সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও উদ্যোগী হতে পারে। ইত্যবসরে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবেই বিভ্রান্তিতে পড়ে না যায়। তাদের কাছে সুস্পষ্ট করতে হবে কখন, কোন ক্ষেত্রে তারা এটি ব্যবহার করতে পারবে আর কোথায় পারবে না। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চ্যাট-জিপিটির মতো এআই প্রযুক্তি গ্রহণের ও ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে যথা শিগ্গির।
লেখক : সিস্টেম এনালিস্ট (পরিচালক), বাংলাদেশ পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার