
প্রিন্ট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম
পরমব্রত ইমরান হাশমির মতো, বনির আপত্তি ছিল: কৌশানী

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম

আরও পড়ুন
টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায় নতুন বছরে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ডেরা থেকে বের হয়ে সোজা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ঘরের মেয়ে। এখন তার মাথায় শুধুই সৃজিত, পরম কিলবিল করছে। ‘বহুরূপী’ সিনেমার সেই ‘ঝিমলি’ এখন বদলে গেছেন। পরিণত হয়েছেন। অভিনয়ের নানা দিক ও অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্প্রতি ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন কৌশানী।
আপনি বলছিলেন— ৯ বছর পর সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নজর পড়ল আপনার ওপর, কীভাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে কৌশানী বলেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগের বড্ড অভাব। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, একটা নির্দিষ্ট ধরনের কাস্টিং করার প্রবণতা রয়েছে এখানে। সৃজিতদার সিনেমাতে যেমন একই মুখ ঘোরাফেরা করে, যদিও ‘এক্স=প্রেম’ সিনেমাতে নতুন মুখ নিয়ে এসেছে সৃজিতদা। সে কারণেই আমার একটা আফসোসের জায়গা রয়ে গেছে। ৯টা বছর লেগে গেল আমার দিকে তাকাতে। পরিচালকরা যদি আগে আমাকে আরও একটু সুযোগ দিত সিনেমাতে, তা হলে হয়তো আরও ভালো ভালো কাজ করতে পারতাম।
‘বহুরূপী’ দরজাটা খুলে দিল? অভিনেত্রী বলেন, আমার জীবনে আগে এসেছে রাজদার ‘প্রলয়’। তবে রাজদাকে কোথাও দোষারোপ করতে পারি না আমি। আমার লঞ্চ আর রি-লঞ্চ দুটোই রাজদার হাত ধরে হয়েছে। আমার কাছে রাজদার আলাদা জায়গা রয়েছে।
যদি ‘বহুরূপী’ না আসত?—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছুই করতাম না। বাড়িতে বসে অপেক্ষা করতাম ‘বহুরূপী’র মতো একটা সিনেমার জন্য। রাজদা আমাকে শিখিয়েছে— ধৈর্য রাখতে হবে। হতাশা থেকে ভুলভাল সিনেমাতে সই করার চেয়ে অপেক্ষা করা ভালো। সেসব সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে কখন এলো-গেল বোঝা যায় না।
কীভাবে সিনেমার ডাক পেলেন কৌশানী। তিনি বলেন, সৃজিতদা আমাকে প্রথম ফোন করে ডাকে। জিজ্ঞেস করে, তোর চুমু খেতে অসুবিধা আছে? আমি বলেছিলাম— হ্যাঁ, অসুবিধা তো নিশ্চয়ই আছে। তার পর সৃজিতদা জানিয়েছিল, এই সিনেমাতে চুমু খাওয়াটা চিত্রনাট্যের জন্য জরুরি। আমি চিত্রনাট্য শুনলাম। শুনে আর না বলার প্রশ্নই ছিল না। কী অসাধারণ গল্প! সৃজিতদার সঙ্গে আমিও সহমত, কিছু জায়গায় গল্পের খাতিরে ওই দৃশ্যটা প্রয়োজনীয়। আর চুমু খাওয়াটাই তো সব নয়। বুঝেছিলাম ওই চরিত্রের নিশ্চয়ই অন্য অনেক কিছু করার আছে, তার পর কথাবার্তা এগিয়ে যায়।
কৌশানী বলেন, এখন এটা অনায়াসে বলতে পারি যে, আমার অভিনীত সেরা চরিত্র এটি। পর্দায় ঠোঁট ঠাসা চুমু খাওয়া নিয়ে আমার এত বিরোধিতা সেই জায়গাটায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি এ চরিত্রটার জন্য। এর আগে বনির সঙ্গেও পর্দায় চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় করিনি।
অভিনেত্রী বলেন, আলাদা করে কোনো প্রস্তুতি নিতে হয়নি। সেটে ‘ইন্টিমেসি কো-অর্ডিনেটর’ থাকেন। স্বচ্ছন্দ হতে তিনি অনেকটা সাহায্য করেন। আমি ভীষণ চাপে ছিলাম শটের আগে। সকাল থেকে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। কারও সঙ্গে কথা বলছিলাম না। আমার বিপরীতে পরমদা— পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, পরমদা তো ইমরান হাশমি— দারুণ চুমু খায়। পর্দায় অনেককে চুমু খেয়েছে। তবে আমি সৃজিতদাকে বলেই দিয়েছিলাম, এটা যেন একটা টেকেই হয়ে যায়। এই দৃশ্যের রিটেক করা যাবে না। শট নেওয়ার পর চিত্রগ্রাহককে সৃজিতদা বলেছিল—তুই যদি শট না নিতে পেরেছিস বস, পরের চুমুটা তোকে আর আমাকে খেতে হবে। কৌশানী বলে দিয়েছে আর চুমু খাবে না। সেই শুনে আমাদের কী হাসি! পরমদাও খুব ভালোভাবে সামলেছে পুরো বিষয়টি।
চুম্বনের দৃশ্য নিয়ে বনির আপত্তি ছিল কিনা?এ প্রসঙ্গে কৌশানী বলেন, সঙ্গী হিসাবে তো যে কারও অসুবিধা হবে। বাড়ি ফিরে নিস্তব্ধ একটা পরিস্থিতি ছিল কিছুক্ষণ। কিন্তু আমি ওর জীবনে আসার আগে পর্দায় ও চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় করেছে। ‘বরবাদ’ সিনেমাতে ঋত্বিকার সঙ্গে ঠোঁট ঠাসা চুমুর দৃশ্যে অভিনয় করেছে। আমরা সম্পর্কে আসার পর এটা পর্দায় প্রথম চুমু। একটা চ্যালেঞ্জ তো ছিলই, সেটা অতিক্রম করতে হয়েছে। এটা হওয়ারই ছিল।
পারস্পরিক বোঝাপড়া হলো কীভাবে?—এ বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে বাংলা বা কলকাতার ক্ষেত্রেই চুমু একটা বিশেষ বিষয় হিসেবে ভাবা হয়। এ বিষয়টা মুম্বাইয়ে কিন্তু কাপ কেকের মতো। ওখানে পর্দায় ‘স্মুচ’ করার আগে দুবার ভাবে না কেউ। খুব সহজভাবে দেখা হয় বিষয়টিকে। ওখানকার অধিকাংশ চিত্রনাট্যে চুমুর প্রয়োজনীয়তা থাকে। আমাদের এখানকার চিত্রনাট্যে এত বেশি থাকে না। আজকাল ওয়েব সিরিজে সাহসী দৃশ্য থাকে। তবে আমাদের এ সিনেমাতে চুম্বনের দৃশ্যে একটা মিষ্টতা রয়েছে।
অভিনেত্রী বলেন, পরমদার সঙ্গে আমি সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করেছি, তা নয়। ওই পরিস্থিতিতে চুম্বনের প্রয়োজনীয়তা ছিল। সে কারণেই সে দৃশ্যে অভিনয় করতে রাজি হয়েছি আমি। বনির বুঝতে ও গ্রহণ করতে সময় লেগেছে অবশ্যই। তবে আমার মনে হয়, এখন ও অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। ঘরে ফেরার পর তো আমরা দুজন অন্য সাধারণ প্রেমিক-প্রেমিকার মতোই। প্রেমিকা সিনেমার জন্য নায়ককে চুমু খেলে প্রভাব তো পড়বেই। ওই দৃশ্য দেখাও খুব চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়।
যদি উল্টোটা হতো এ প্রসঙ্গে কৌশানী বলেন, আমার জায়গায় বনি যদি চুমুর দৃশ্যে অভিনয় করত, তাহলে আমার ওপর প্রভাব পড়ত কোনো না কোনোভাবে। সঙ্গী হিসাবে মানসিক প্রভাব পড়েছিল বনির, কিন্তু সহ-অভিনেতা হিসাবে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি।
পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা কেমন?—এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, সৃজিতদা মনিটরে বসলে একটা আলাদা মানুষ। শট শেষে দুপুরের খাবার টেবিলে একটা অন্য মানুষ। ওর কাজের দিকটা জাদুর মতো। সবাই বলে, সৃজিতদা সেটে খুব কড়া। যখন-তখন চেঁচামেচি করে। আমি ওই কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই সচেতন ছিলাম আমার কাজ নিয়ে।
তিনি বলেন, আমি সৃজিতদাকে আগেই বলে রেখেছিলাম, তোমাকে তো চেঁচামেচি করা থেকে আটকানো যাবে না। তুমি যদি পারো আলাদা করে বলো আমাকে। আমি এমন প্রস্তুতি নিয়ে, সুরক্ষা নিয়ে সেটে গিয়েছিলাম, আমার ওপর চিৎকার করতে হয়নি সৃজিতদাকে।
পরমব্রত প্রসঙ্গে কৌশানী বলেন, এই সিনেমাতে পরমদা অভিনেতা হলেও কোথাও না কোথাও ওর পরিচালক সত্তাও প্রকাশ পাচ্ছিল। কোন দৃশ্যে আমার অভিনয় নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছিল। আমার এতে খানিকটা সুবিধা হয়েছিল। আমিও পরমদাকে জিজ্ঞেস করেছি— আমার এই দৃশ্যটা কেমন লাগল, ইত্যাদি।
অভিনেত্রী বলেন, সিনেমাতে আমার অভিনীত চরিত্র ‘পূর্ণা’কে সৃজিতদা যেভাবে চাইবে আমাকে সেভাবেই তুলে ধরতে হবে। আমি নিজে থেকে কিছু করব না— এমনটাই ভেবেছিলাম। তিনি বলেন, সিনেমাতে আমার অভিনীত চরিত্রটির অনেকগুলো পর্যায়, অনেক অনুভূতি ধরা দিয়েছে। কখনো অবসাদ, কখনো প্রেম, কখনো বিয়ে, আবার কখনো বাঁচার ইচ্ছা চলে যাওয়া। প্রায়শই ভেঙে পড়া, ট্রমায় থাকা। সেই এক একটা অনুভূতি সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা সহজ ছিল না। সৃজিতদার কথামতো এই দেড় মাস আমি সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে রেখেছিলাম নিজেকে। পার্টিতে যেতাম না। নিজেকে ওই চরিত্রের মধ্যেই ধরে রাখতে চাইতাম। আমার ব্যক্তিজীবনে সব থেকে বড় ট্রমা আমার মায়ের মৃত্যু। সেটা মাথায় রেখে অনেক দৃশ্যে দুঃখ ও ব্যথা ফুটিয়ে তুলেছি।
সৃজিতের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে? নায়িকা-পরিচালকের রসায়ন কেমন?—এমন প্রশ্নের উত্তরে অভিনেত্রী বলেন, ২০ দিন ধরে একটা সিনেমার শুটিং চলে। ইউনিটের সবাই একে অপরকে এত কাছ থেকে দেখে এমনিই একটা সমীকরণ তৈরি হয়ে যায়। আমি মনে করি, অভিনেতার সঙ্গে পরিচালকের অবশ্যই একটা সমীকরণ থাকা উচিত। আমার আর শিবুদার একটা ম্যাজিক্যাল সমীকরণ রয়েছে, যেটা পর্দায় রসায়ন ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
তিনি বলেন, সৃজিতদার কথায় ফিরে আসি। এখন ওর সঙ্গে আমার যে সমীকরণ, ওকে আমি বন্ধুর মতো সব কিছু খোলাখুলি বলতে পারি। আমার কাজের ক্ষেত্রে ওর পরামর্শ নিতে পারি। কাজ করতে করতেই এই বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গেল।
কৌশানী আরও বলেন, রসায়ন যখন তৈরি হয়েছে, কথা তো হবেই। যেখানে মানুষটা সৃজিত মুখোপাধ্যায়, এত রোমাঞ্চকর একটা মানুষ। এসব গুঞ্জন নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।