সঞ্জয়ের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল, কেন বললেন সোহম চক্রবর্তী
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম
আরজি করকাণ্ডে অপরাধী সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা হয়েছে। গতকাল সোমবার নিম্ন আদালতে এ দণ্ডের ঘোষণা দেন বিচারক অনির্বাণ দাস। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে এক্স হ্যান্ডলে সঞ্জয়ের রায় আমৃত্যু ফাঁসির কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে টালিউড অভিনেতা-বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী বলেছেন, সঞ্জয়ের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল।
এদিকে আরজি করের রায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন— সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবে রাজ্য সরকার। নিম্ন আদালতের শাস্তি ঘোষণার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মালদহে দাঁড়িয়ে জানিয়েছিলেন— এখনো দোষীর ফাঁসির দাবিতে তিনি অনড়।
ফাঁসির আদেশের পরিবর্তে কেন কারাদণ্ড, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে বিভিন্ন মহলে। মিশ্র প্রতিক্রিয়া টালিপাড়ার অন্দরেও। তাই সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড নিয়ে অখুশি অভিনেতা-বিধায়ক সোহম। কী মত তার, সে বিষয়ে জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।
কোনো রাখঢাক না রেখেই ক্ষোভ উগরে দিলেন বিধায়ক। তিনি বললেন, আদালতের এই রায় আমরা মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু আমার মন ভরেনি। বাকি অনেকের মতো আমিও চেয়েছিলাম, অপরাধীর চরমতম শাস্তি হোক। ফাঁসি-ই চেয়েছিলাম, সেটি হলো না। এরপরই যেন নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছেন— মহামান্য আদালত যেটি ঠিক মনে করেছেন, সেটিই করেছেন। তারপরও বলব— কোথাও যেন বড় ফাঁক থেকে গেল। যারা এ ধরনের ঘৃণ্য মানসিকতার, তাদের যেন সুযোগ করে দিল এই শাস্তি।
সোহম এখানেই থামেননি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যেন উসকানি থেকেই গেল। তারা হয়তো ভাবতেও পারেন— আমি তো আরজি করে পার পেয়ে যাচ্ছি! বাকি জীবনটা না হয় হাজতেই কাটিয়ে দেব।
এই শাস্তি আগামী দিনে অপরাধীদের মনে ভয় ধরাবে না, এ ধরনের অপরাধ করার আগে দ্বিতীয়বার ভাববে না— এমনই মত প্রযোজক-অভিনেতার। সোহম মনে করেন, এই শাস্তি আগামীতে দৃষ্টান্ত স্থাপনে ব্যর্থ। এবার কি শেষ ভরসা উচ্চ আদালত? সোহমের কথায় যদিও আশার সুর মেলেনি। তিনি বলেন, না হলে তো মানুষের রোষ, দিনের পর দিন সবার পথে নামা ব্যর্থ হয়ে যাবে। তার থেকেও বড় কথা— নির্যাতিতা বোন ও তার পরিবার যে ন্যায়, যে সম্মান দাবি করেন, সেটি যেন অসম্পূর্ণ থেকে গেল। সমাজসচেতন প্রত্যেক নগরবাসী সেই কথা মাথায় রেখে তাই রাতের পর রাত জেগে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন বলে জানান সোহম।
রায় শোনার পর হতাশ অভিনেতা নির্যাতিতার মা-বাবার সঙ্গেও দেখা করার উৎসাহও যেন পাচ্ছেন না। এ অভিনেতা বলেন, আমি ওদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। কিন্তু শুধুই সান্ত্বনা জানিয়ে ওদের শূন্যতা তো ভরাট করতে পারব না। যে ন্যায়বিচার তাদের পাওয়ার কথা, সেটিও দিতে পারব না। কারণ আমার হাতে কিছুই নেই। বলতে বলতে জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন অভিনেতা। সন্দেহপ্রকাশ করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তের ওপর।
শাসক দলের বিধায়কের সাফ দাবি—আদালত অবশ্যই তথ্যপ্রমাণের ওপর নির্ভর করে একা সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তারপরও বলব— সঞ্জয় একা দোষী নন, সেটি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। ওর সঙ্গে যিনি বা যারা ছিলেন, এই রায়ের সুবাদে তারা আড়ালে চলে গেলেন। আর সঞ্জয় দোষী হলে ওর মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল— ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট। সেটি হলো না। তিনি আরও বলেন, ওই রাতে ঘটনাস্থলে শুধুই সঞ্জয় আর নির্যাতিতা ছিলেন, তা তো নয়!
অভিনেতা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন—হয়তো শারীরিক অত্যাচার করেছেন সঞ্জয়। কিন্তু এত কিছু হয়ে গেল, কোনো আওয়াজ কি হয়নি? হতাশ সোহম উদাহরণ দিয়েছেন সৌদি আরবের। যেখানে চুরি করলে চোরের আঙুল কাটা যায়। তিনি বলেন, এই শাস্তি ওখানকার লোকেদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে পেরেছে। যার জন্য সৌদি আরবে সোনার দোকান সারা রাত খোলা থাকে। বিক্রেতা নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি ফিরতে পারেন।