নারীদের বাথরুম করার কোনো ব্যবস্থা নেই আমাদের রাজ্যে: স্বস্তিকা
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম
আরজিকরকাণ্ডে নির্যাতিত তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে গোটা ভারতে বিক্ষোভ। বিশেষ করে কলকাতার বিনোদন জগতের শিল্পীরা রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদে মুখর। কিন্তু এখনো তদন্তের গতিপথ স্পষ্ট নয় আমজনতার কাছে। এর প্রতিবাদে রোববার বেলা ৩টা নাগাদ শুরু হয় গণমিছিল। কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে পা মেলাতে দেখা যায় সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে। আর এ মিছিলে সম্মুখসারিতে ছিলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সোহিনী সরকার, দেবলীনারা।
কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল। সন্ধ্যায় সেখানে অবস্থান করে চলে বিক্ষোভ, স্লোগান। রাত গড়াতেই জানা গেল, ‘রাত দখল’-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছে— ‘আমরা তিলোত্তমা’।
ধর্মতলায় ধর্নায় বসছে সোহিনী, স্বস্তিকাদের প্রতিবাদের আসর। জনসাধারণের সঙ্গে রাত জাগবেন তারকারাও। বক্তব্য পেশ, গানের সুরে সুর মেলানো আর নাচের মাধ্যমে চলছিল প্রতিবাদ। আচমকাই ধর্নামঞ্চে তাণ্ডব দেখালো এক মদপানরত যুবক।
আরজি করের প্রতিবাদে রোববার ধর্মতলায় টালিউডে নতুন তৈরি হওয়া ‘সুরক্ষা বন্ধু’ কমিটি নিয়েও তোপ দাগলেন দুই অভিনেত্রী।
রোববার বিকালে মহামিছিলে কোনো বিশেষ দলের ডাকে নয়, সাধারণ মানুষ এতে পা মিলিয়েছিলেন নিজের তাগিদেই। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসেছিলেন এদিন আরজি কর নিয়ে বিচার চাইতে। কেন ২৩ দিন পেরিয়ে গেলেও সিবিআই কোনো ফল সামনে আনতে পারল না, কেন ডাক্তার মেয়েটির রক্তাক্ত দেহ দেখার পরও বাড়ির লোককে বলা হলো— মেয়ে আত্মহত্যা করেছে? কেন প্রমাণ নয়ছয় করল শাসক-ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ? কেন রাজ্যসরকার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল দোষীদের, তা নিয়ে সবার মনে হাজারও প্রশ্ন। আর এর সঠিক জবাব খুঁজতেই রাস্তায় নামা।
ধর্মতলার সামনে ধর্না মঞ্চে ছিলেন শোভন গঙ্গোপাধ্যায়, সোহিনী সরকার, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়রা। সকালে বাড়ি যাওয়ার আগে স্বস্তিকা ফেসবুকে লিখলেন— ‘বাড়ি ফিরছি। আপনারা যারা আজ ঘুমালেন, কাল জাগবেন। লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে। বিচার না আসা পর্যন্ত।’
ধর্না মঞ্চ থেকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন স্বস্তিকা আর সোহিনী দুজনেই। সেখান থেকে টালিউডের নতুন তৈরি 'সুরক্ষা বন্ধু' কমিটি ক্ষোভ উগড়ে দেন তারা। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই উদ্যোগের ঘোষণা করেন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। যিনি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত।
স্বস্তিকা প্রশ্ন তোলেন— ‘আরজি করের ঘটনার পর কেন অভিনেত্রীদের সুরক্ষার কথা ভাবা হচ্ছে। আগে কেন হয়নি? রাস্তায় আউটডোরে শুটিং করতে গেলে, আমরা তো রাস্তায় হিসু করি। একটা বাথরুম নেই, নারীদের বাথরুম করার কোনো জায়গার ব্যবস্থা নেই আমাদের রাজ্যে, আমাদের দেশও নেই। আর এটা শুধু আমাদের (তারকাদের) কথা না, রাস্তা নিয়ে যে নারীরা যাতায়াত করে, তাদের সবার কথা। কারণ ধাবার বাথরুমগুলো এত নোংরা থাকে যে, ওখানে হিসু করলেই ইউটিআই নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আর হাসপাতালে ভর্তি হলেই ধর্ষণ হবে। তার চেয়ে বাবা যাদের চিনি বলব— এদিক দেখ, ওদিক দেখ, আর আমরা রাস্তার ধারে শালীনতা বজায় রেখেই হিসু করতে বসে যাব। এই কথাগুলো কেন একটা ধর্ষণ হওয়ার পর ভাবছে সরকার। এতদিন ভাবল না?’
অন্যদিকে সোহিনী সরকার বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের কেউ যদি বলেন যে, আমাদের সুরক্ষিত রাখবেন, আমরা মেনে নেব না। আমরা নারী অভিনেত্রীরা নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেরাই করে নেব। আর গোটা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ঘোষণা করতে গেলে, সেটি সরকারের তরফ থেকে অফিসিয়ালি করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে আমরা নারীরা নিয়ম বানিয়ে নেব। শাসক দলের কেউ এসে সেই নিয়মগুলো বানাবে না।’
যে জায়গায় অবস্থান বিক্ষোভ করছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, বিদীপ্তা চক্রবর্তীরা, সেখানেই ঢুকে পড়ে অসভ্য আচরণ করেন এক যুবক। বিশেষ করে নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তিনি। তবে গেরুয়া রঙের টি-শার্ট পরা বছর ৩৫-এর ওই যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। ধর্নামঞ্চে থাকা পুরুষরা তাকে ধরে ফেলেন এবং উপস্থিত হয় পুলিশও। উত্তেজিত জনতা তাকে মারতে উদ্যত হলে কোনোরকমে তাকে পুলিশ ভ্যানে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে কোন থানায় নিয়ে গেছে কলকাতা পুলিশ তা এখনো স্পষ্ট নয়।
মেয়েদের সুরক্ষা নিয়ে যে মিছিল, যে ধর্না— সেখানেই এমন কাণ্ডে হতবাক সবাই। মেয়েদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা রিমঝিমও এ দলে রয়েছেন। সবার মুখে একটাই স্বর— ‘শেষ না দেখে ছাড়ব না’।
পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত সংবাদমাধ্যমকে জানান, পাঁচ দফা দাবিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী ও শিশু শিক্ষা দপ্তর এবং পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে ইমেল করা হয়েছে ‘আমরা তিলোত্তমা’র তরফে। জবাব না মিললে উঠবেন না কেউ।
আগামী ৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার পরবর্তী শুনানি। সিবিআই বন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টকে কী জানাবে, সেদিকে তাকিয়ে সবাই। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে এদিন সবার অঙ্গীকার— '৫ সেপ্টেম্বরের অপেক্ষা। তার মধ্যে জবাব মিললে ভালো, নইলে প্রয়োজনে আরও বড় আন্দোলন।’ মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন নিঃসন্দেহে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে মমতা সরকারের।