ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী গন্তব্য

সাইফুল হক
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থান ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিদায় সমকালীন বিশ্বে এক নজিরবিহীন ঘটনা। কিন্তু ছাত্র-জনতার এ অভূতপূর্ব গণজাগরণ-গণঅভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ষোলো বছরের চরম স্বেচ্ছাচারী আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের পতন আকস্মিক ঘটনা ছিল না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণের বহুমাত্রিক পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। চরম দমন-নিপীড়ন মোকাবিলা করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নৃশংস ফ্যাসিবাদী শাসন বিদায় দিতে জানবাজি লড়াই এগিয়ে নিয়েছে। শিক্ষার্থী-জনতা মিলে সেই লড়াই ছত্রিশ দিনে মরণপণ লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে; হাসিনা সরকার উৎখাত হয়েছে।
আওয়ামী সরকারকে মানুষ কোনোভাবেই আর বরদাশত করতে পারছিল না। দরকার ছিল একটি স্ফুলিঙ্গের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আপাতত অরাজনৈতিক একটি ন্যায্য দাবি নিয়ে এ স্ফুলিঙ্গের সূত্রপাত করেছিল। কিন্তু এ ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ, তাদের দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী, পুলিশসহ গোটা রাষ্ট্র ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তার ফলে দ্রুত এ আন্দোলন পুরোপুরি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক চেহারা নিতে বাধ্য হয়েছে; শিক্ষার্থীদের নয় দফা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ তথা সরকার পতনের এক দফায় পরিণত হয়েছে।
ছাত্র-জনতা সমগ্র সশস্ত্র রাষ্ট্রব্যবস্থা মোকাবিলা করে কার্যত রাষ্ট্র অচল করে দিয়েছিল। যে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে সব ধরনের বিরোধিতা ও বিরোধীদের দমন-নিপীড়নের নিষ্ঠুর হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছিল, উগ্র বলপ্রয়োগের হাতিয়ার সেই গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বুকের রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা চ্যালেঞ্জ করেছে এবং তাকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে পিছু হটাতে বাধ্য করেছে। এদেশে এরকম ঘটনা আগে আর ঘটেনি।
দমনমূলক যে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভর করে আওয়ামী লীগ ভোট ছাড়াই ক্ষমতা কব্জা করে রেখেছিল, গণঅভ্যুত্থানের মুখে সে রাষ্ট্রব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়ল, বিপর্যস্ত হলো। এটি ছিল জনসমর্থনবিহীন জনবিচ্ছিন্ন এক নিপীড়ক রাষ্ট্রব্যবস্থা। চারশ’র বেশি থানা আক্রান্ত হলো, ছাত্র-জনতার ভয়ে অধিকাংশ থানার পুলিশসহ রাষ্ট্রের অপরাপর বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করল। তারা রাষ্ট্রের বাহিনী হলেও যেভাবে দলীয় বাহিনীর মতো সরকার ও সরকারি দলের হয়ে কাজ করেছে, স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ক্ষোভের কেন্দ্রে ছিল এসব বাহিনী। সুবিধাভোগী ও উচ্চাভিলাষী একশ্রেণির কর্মকর্তার কারণে বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাধারণ সদস্যদের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল।
ছাত্রদের সঙ্গে সঙ্গে এ গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছে শহরের শ্রমজীবী-মেহনতি সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, আর নানা শ্রেণি-পেশার বিক্ষুব্ধ লাখ লাখ মানুষ। যে এক-দেড় হাজার (সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি) মানুষ শহিদ হয়েছেন, তার মধ্যে শিক্ষার্থীদের বাইরে শহরাঞ্চলের সর্বহারা-আধা সর্বহারা শ্রেণির মানুষের সংখ্যাই বেশি। এ মানুষদের হারানোর কিছু ছিল না। কিন্তু তাদের শত বঞ্চনা, বেকারত্ব, না খাওয়া আর মানবেতর জীবনের গ্লানি তাদের গণপ্রতিরোধ-গণঅভ্যুত্থানের কাফেলায় শামিল করেছে।
বাংলাদেশে ২০২৪-এর এ গণঅভ্যুত্থান ছাত্র-তরুণদের প্রায় সমগ্র একটি প্রজন্মকে রাতারাতি বড় করে তুলেছে, করে তুলেছে দায়িত্বশীল। রংপুরের শহিদ আবু সাঈদের বীরোচিত আত্মদান হাজারো, লাখো তরুণকে জুলুম আর জালেমশাহি রাজত্বের বিরুদ্ধে দেশাত্মবোধের চেতনায় জাগিয়ে তুলেছে। তাদের অনেকের কাছে এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে শামিল হওয়ার মতো গৌরবের বিষয়। হাজার হাজার তরুণ শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষ আবু সাঈদের মতো আত্মদানে গুলির মুখে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।
এ শক্তিকে কে পরাজিত করে! অভ্যুত্থানের পর তারা যেভাবে সারা দেশে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছে, ডিবি অফিস, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, থানাগুলোকে পরিষ্কার করেছে, থানা থেকে শুরু করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মন্দির ও অঞ্চলগুলোকে পাহারা দিয়ে আসছে, তা দায়িত্ব ও সম্প্রীতির নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। কোমলমতি বলে যাদের ছোট করা হতো, প্রয়োজনে তারা কীভাবে অভিভাবকের ভূমিকায় আবির্ভূত হলো, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। আমাদের সব যে শেষ হয়ে যায়নি, ‘জেন জি:-এর এ প্রজন্ম তা দেশবাসীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিদায়ের দিন ৫ আগস্টকে অনেকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মতো বিজয় হিসাবেও দেখছেন। অনেকে এ অভূতপূর্ব ঘটনাকে বিপ্লব হিসাবেও আখ্যায়িত করছেন। ধ্রুপদি অভিজ্ঞতা ও চিন্তায় যে অর্থে বিপ্লব বোঝানো হয়, যেখানে শাসকশ্রেণির পরিবর্তে নিপীড়িত শ্রেণি ও তাদের প্রতিনিধিরা ক্ষমতা দখল করে, প্রচলিত উৎপাদন সম্পর্ক তথা উৎপাদন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটায়, সেরকম কোনো আমূল পরিবর্তন এখানে ঘটছে না। বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য যে ধরনের শ্রেণি সমাবেশ দরকার, মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও আধিপত্য দরকার, বাংলাদেশের এ গণঅভ্যুত্থানে তার কাঙ্ক্ষিত বিকাশ ঘটেনি। তবে ছাত্র-জনতার এ গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থান অনেক বিপ্লবী উপাদানের জন্ম দিয়েছে, বিপ্লবী সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এ গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের শক্তিকে পরাজিত করেছে, ছাত্র-জনতার গণকর্তৃত্ব, বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ও নৈতিক গণক্ষমতারও এক ধরনের উত্থান ঘটিয়েছে। ছাত্র-তরুণরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে জাগরণ সৃষ্টি করেছে, পুরোনো শাসনব্যবস্থা, পুরোনো জমানা পরিবর্তনে যে জনমত তৈরি করেছে, তার মধ্যে বিপ্লবী সম্ভাবনা রয়েছে।
এ গণঅভ্যুত্থান সমাজের প্রতিটি অংশ, রাষ্ট্রের প্রতিটি অংশকে প্রবলভাবে ধাক্কা দিয়েছে, অনেক কিছু ভেঙেচুরে দিয়েছে। কেবল স্থাপনা নয়; প্রচলিত ধারণা, অচলায়তন, চিন্তা-দর্শন, মূল্যবোধ, গতানুগতিক রাজনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি বহুক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে; অযুত ইতিবাচক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে। কিন্তু বাস্তবে এসব সম্ভাবনা কতখানি কী কাজে লাগানো যাবে, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে।
এটা স্পষ্ট, এ অভ্যুত্থান সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে নতুন এক গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জমিন তৈরি করে দিয়েছে। এ অভ্যুত্থানের পরিণতিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আপাতত নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। তারা এখন সব বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন পাচ্ছেন। এ সরকারের এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দ্রুত বিদ্যমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, অর্থনীতির বন্ধ চাকা সচল করা, উপর থেকে নিচ পর্যন্ত গণহত্যার অপরাধীসহ ফ্যাসিবাদের সব হোতাকে গ্রেফতার ও বিচার করা, রাষ্ট্র ও সরকারের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ব্যাপারে জাতীয় সমঝোতা তৈরি করা এবং সর্বোপরি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। ১৭ আগস্ট গ্লোবাল সাউথ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; যার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে’। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সমর্থনে এ লক্ষ্যে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপে এগোতে চাইলে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ও আশু প্রত্যাশা বেহাত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে।
কিন্তু গত এক-এগারোর সরকারের মতো এ সরকারের মধ্যে যদি রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ দেখা দেয় (সে আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না), তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দ্রুতই বিরোধ দেখা দেবে।
এ সরকারের প্রতি জনগণের ন্যূনতম প্রত্যাশা হচ্ছে, তারা ছাত্র-জনতার অধিকার ও মুক্তির গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ধারণ করবে, তাকে সম্মান দেখাবে। তারা শেখ হাসিনার জনম্যান্ডেটবিহীন সরকারের আবর্জনা পরিষ্কার করতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তাদের অনতিবিলম্বে সব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আমলাতন্ত্রসহ রাষ্ট্রের সবস্তর থেকে হাসিনা সরকারের দোসরদের অপসারণ, সব অগণতান্ত্রিক কালো আইন বাতিল, সমগ্র নির্বাচনি ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মতো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একইভাবে গণঅভ্যুত্থানের বীর শহিদদের উপযুক্ত মর্যাদা, নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা তাদের অগ্রাধিকাভিত্তিক কাজের অংশ। এ গণজাগরণ-গণঅভ্যুত্থান শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার বাঁচার আশু ইস্যুগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব বিষয়েও মনোযোগ দেওয়া দরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলা কুসুমাস্তীর্ণ নয়। দেশে এখনো রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতি ফিরে আসেনি, এটি আসতে সময় নেবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে দেশের ভেতরে-বাইরে বহু ধরনের তৎপরতা রয়েছে। অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতার আশঙ্কাও রয়েছে। ভারত গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় ও বিজেপির বাংলাদেশবিরোধী ধারাবাহিক উসকানিমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের মানুষের প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থনে এ সরকার কতদিন থাকবে, তাদের নিজেদের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে কিনা, থাকলে কী-এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের এখনো পরিষ্কার কোনো উত্তর নেই। এ সরকারের ওপর মার্কিনি প্রভাব কতখানি, তা নিয়েও আলোচনা আছে।
ব্যতিক্রমী কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়া বাংলাদেশে এ সময়ে সাম্প্রদায়িক কোনো সহিংসতা বা দাঙ্গা হয়নি; ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যেখানে যা হামলা-আক্রমণ হয়েছে, তা মূলত রাজনৈতিক কারণে; এদের আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্টতার কারণে ঘটেছে এসব। এদের যেসব সমাবেশ-বিক্ষোভ হয়েছে, তা পতিত আওয়ামী লীগের মদদের কারণেই। আর এদের লক্ষ্য ছিল মোদি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এখন পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে। ছাত্র-তরুণদের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও পালাক্রমে এ মানুষদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের মানুষের বার্তা হবে, আমরা আমাদের এ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের অভিযাত্রায় সবার আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগিতা চাই। হাসিনা সরকারের হাতে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তার নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ভারতের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণের সাধারণ প্রত্যাশা হচ্ছে, ভারত কোনোভাবেই আর যেন পতিত স্বৈরতন্ত্রী ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মাদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সহযোগী না হয়। এটি মনে রাখা দরকার, ভারত যদি হাসিনা সরকারকে একরোখা সমর্থন না জোগাত, তাহলে হয়তো আওয়ামী লীগের এ করুণ পরিণতি এড়ানোর সুযোগ থাকত। আমরা যেহেতু প্রতিবেশী বদলাতে পারব না, তাই এ দেশের মানুষ ভারতের সঙ্গে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সব দ্বিপাক্ষিক সমস্যার দ্রুত সমাধানই কামনা করবে।
আর গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার এ গুরুত্বপূর্ণ কালপর্বে আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রধান রক্ষাকবচ জনগণের ঐক্য। বাংলাদেশকে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদী বলয়ের বাইরেই তার জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ যাতে আবার এ ডামাডোলের মধ্যে কোনো পরাশক্তির বাংলাদেশকেন্দ্রিক রাজনৈতিক, সামরিক স্বার্থের অনুকূলে ঝুঁকে না পড়ে, বিজয়ী ছাত্র-জনতাকে সে ব্যাপারেও বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সাইফুল হক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি