Logo
Logo
×

বাতায়ন

স্বদেশ ভাবনা

খাদ্যশস্য উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য কেন আসছে না

Icon

আবদুল লতিফ মন্ডল

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খাদ্যশস্য উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য কেন আসছে না

সার্বিক কৃষি খাতের (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং বন-এ তিন উপখাত নিয়ে সার্বিক কৃষি খাত) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপখাত শস্য। দেশের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনের দায়িত্ব শস্য উপখাতের। কিন্তু শস্য উপখাতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছে না। প্রধান খাদ্যশস্য চাল উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এলেও এখনো পণ্যটিতে স্বনির্ভরতা আসেনি। দ্বিতীয় খাদ্যশস্য গমে আমরা প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছি। অন্যান্য ফসল উৎপাদনেও আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি এবং এগুলোর চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মেটাতে হচ্ছে আমদানির মাধ্যমে। কেন এ অবস্থা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় কী? এসব আলোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।

দেশে চাল, গম, ভুট্টা ও অন্যান্য শস্যজাতীয় খাদ্যলভ্যতার মূল উৎস হলো শস্য উপখাত। শস্যজাতীয় খাদ্যপণ্যের উচ্চ প্রবৃদ্ধিহার খাদ্যশস্যের আমদানির প্রয়োজনীয়তা নিরসন বা হ্রাস করে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। অন্যদিকে শস্যজাতীয় খাদ্যপণ্যের নিম্ন প্রবৃদ্ধি হার দেশকে এসব পণ্যে আমদানিনির্ভর করে তোলে। শস্য উপখাতের প্রধান ফসল ধান তথা চাল। এটা সত্য, চাল উৎপাদনে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছি। স্বাধীনতার সময়কালের কম-বেশি ১ কোটি টন চালের উৎপাদন বর্তমানে সাড়ে ৩ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত পণ্যটিতে স্বনির্ভরতা আসেনি। এর প্রধান কারণ চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস’-২০২৩-এর তথ্য মোতাবেক, ২০২৩ সালে দেশে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্বাভাবিক হার (আরএনআই) ছিল ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা আগের বছর (২০২২) ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২৩ সালের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ২০২১ সালে এ হার দেখানো হয়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, গত ৩ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধিহার ছিল ১ শতাংশের নিচে। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হারের চেয়ে বেশি হওয়ায় দেশের চাহিদা মেটাতে পণ্যটি আমদানির বিকল্প নেই। আমাদের প্রতিবছর কিছু পরিমাণ চাল আমদানি করতে হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, বিশ্বে চাল আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে চাল আমদানিতে বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হয়েছে যথাক্রমে ৮৫১, ৪২৭ ও ৫৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪)।

আমাদের খাদ্যশস্যের তালিকায় চালের পরের অবস্থানে অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (হায়েস) ২০২২ অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে মাথাপিছু দৈনিক গমের ব্যবহার দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৯ গ্রামে। ২০০৫ সালের হায়েসে এর পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ১ গ্রাম। ২০১৬ সালে তা ছিল ১৯ দশমিক ৮ গ্রাম। এ থেকে বোঝা যায় গমের ব্যবহার কীভাবে বাড়ছে। গমের ব্যবহার বাড়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-এক. জনসংখ্যা বৃদ্ধি : জনশুমারি ২০২২ অনুযায়ী, স্বাধীনতার সময়ের সাড়ে ৭ কোটি জনসংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটিতে। দুই. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যসচেতনতা : সময়, আয় ও জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তনের দোলা খাদ্যাভ্যাসেও লেগেছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত-সব শ্রেণির ভোক্তার খাদ্য তালিকায় গম তথা আটা-ময়দা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। এক্ষেত্রে আয়ের পাশাপাশি ভূমিকা রাখছে স্বাস্থ্য সচেতনতা। তিন. গমের আটা-ময়দা থেকে তৈরি বিস্কুট, কেক, ইত্যাদি শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাচ্ছে না, বরং রপ্তানি হচ্ছে ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয়।

বর্তমানে দেশে বছরে গমের চাহিদা কম-বেশি ৭৫ লাখ টন। আর এ চাহিদার বিপরীতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গমের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১১ থেকে ১২ লাখ টনের মধ্যে, যদিও ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে দেশে গমের উৎপাদন হয়েছিল ১৯ লাখ ৮ হাজার টন। ফলে গমের চাহিদার ৮৫ শতাংশ মেটাতে হচ্ছে আমদানির মাধ্যমে। সরকারি হিসাবে ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে গম আমদানিতে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৮৩০, ২ হাজার ১৩৫ এবং ২ হাজার ২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪)। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে ১৯ লাখ টনের বেশি গম উৎপাদিত হওয়ায় ওই অর্থবছরে গম আমদানি বাবদ ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ৩২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০০০)।

ভুট্টা চাষে কম সময়েই সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যান্য খাদ্যশস্যের চেয়ে কম পরিচর্যা ও কম সেচ খরচে ভালো ফলন হয় ভুট্টার। হেক্টরপ্রতি ফলনেও ভুট্টা উৎপাদনকারী বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর কাতারে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে ভুট্টার উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ৩৫ লাখ ৭৮ হাজার টন, যা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪ লাখ ৩২ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। এখন ভুট্টার ওপর নির্ভরশীল দেশের প্রাণী খাদ্যের বাজার। মাছ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির উৎপাদন বাড়ায় ভুট্টার খাবারের চাহিদাও বাড়ছে। আর এসব খাদ্য তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছে দেশের অনেক কোম্পানি। ফলে এসব খাদ্যে আমদানিনির্ভরতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। তবে মানুষের খাদ্য হিসাবে ভুট্টার ব্যবহার এখন পর্যন্ত খুবই সীমিত।

আলু শস্য উপখাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলে আসছে, সর্বোচ্চ বার্ষিক ৮০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে দেশে ১ কোটি ১০ লাখ টনের কাছাকাছি আলু উৎপাদিত হচ্ছে; কিন্তু তাদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ হয়, গত বছর যখন আলু সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হয় এবং প্রতি কেজি আলু ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে থাকে। বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরও আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে সরকার আলু আমদানির অনুমতি প্রদান করেছিল, যা এখনো বহাল রয়েছে। বছরের পর বছর আমাদের গর্বের রপ্তানি পণ্য ছিল আলু। এখন সেই আলু আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলু আমদানি হয়েছে ৯৮ হাজার ৭৩১ টন।

ডালকে ‘গরিবের মাংস’ বলা হয়। কারণ ডালের দাম মাংসের চেয়ে কম হলেও প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের বাজারে মসুর, মুগ, মটর, ছোলা, মাষকলাই, খেসারিসহ ৭-৮ ধরনের ডালের বর্তমানে বার্ষিক চাহিদা ২৫ থেকে ২৬ লাখ টন। এ চাহিদার বিপরীতে দেশে এর উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টন। বাকি ১৫-১৬ লাখ টনের চাহিদা মেটানো হয় আমদানি করে।

দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক প্রায় ২৪ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদনের পরিমাণ ৪ থেকে ৫ লাখ টন। ২০২২ সালের জুনে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। সেজন্য সরকার আগামী ৩ বছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ টন তেল উৎপাদনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটি করা গেলে চাহিদার ৪০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে মেটানো সম্ভব হবে। এ কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। সরকারি হিসাবে ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভোজ্যতেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৯২৬, ২ হাজার ৮৯৩ এবং ২ হাজার ৮৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪ মোতাবেক, বর্তমানে দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২২ লাখ টন। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো ২১ হাজার ৩১৩ টন চিনি উৎপাদন করেছে। ছয়টি মিল বন্ধ হওয়ার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে চিনির উৎপাদনও ছিল বেশি, ৮২ হাজার টন। ফলে চিনিতে আমরা প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছি।

বাংলাদেশের জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর অন্যতম অপরিহার্য ও জনপ্রিয় খাদ্য উপকরণ হলো পেঁয়াজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশে বছরে ২৪ লাখ টন বা বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনের কথা বললেও পণ্যটির উৎপাদন ১৮-১৯ লাখ টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ টনের আশপাশে রয়েছে বলে মনে করা হয়। তাই প্রতিবছর আমাদের কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, পেঁয়াজ আমদানিতে বিশ্বে ১ নম্বর অবস্থানে বাংলাদেশ।

রান্নায় ব্যবহৃত আদা ও রসুনের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক কম। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে কম বেশি ৩ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে আদার উৎপাদন ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টন। আর ৬ লাখ টনের কিছুটা বেশি চাহিদার বিপরীতে রসুনের উৎপাদন ৪ থেকে ৫ লাখ টনের মধ্যে। শস্য উপখাতের এ দুটি পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে যে ফারাক রয়েছে, তা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

উপরের আলোচনায় যা উঠে এসেছে তা হলো, শস্য উপখাতের প্রধান ও অপ্রধান উভয় প্রকারের ফসলাদি কম-বেশি আমদানি করতে হয়। গম, ভোজ্যতেল, চিনির ক্ষেত্রে আমরা প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছি। আমাদের প্রধান খাদ্য চাল আমদানিতে বিশ্বে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। তাই টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের যে দাবি করছে, তা একটি রাজনৈতিক বক্তব্য মাত্র।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) কৃষি খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপখাত শস্য উপখাতের চ্যালেঞ্জগুলোর উল্লেখ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো-১. নিম্ন উৎপাদনশীলতা : অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ধান ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদনশীলতা কম। কৃষকের মাঠ ও গবেষণা ট্রায়ালের মধ্যে ফসলের বড় ব্যবধান রয়েছে।’ গমের কথাই ধরা যাক। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীনে হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদনের হার আমাদের দেশের চেয়ে বেশি। চীনে এ হার ৫ দশমিক ৪ টন। ভারতে সাড়ে ৩ টন। আমাদের দেশে তা ৩ টনের সামান্য বেশি। ২. জলবায়ু পরিবর্তন : জাতিসংঘ গঠিত জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম হিসাবে ঘোষণা করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সাইক্লোন-ঝড়ের পৌনঃপুনিকতা বৃদ্ধি অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মতো বাংলাদেশের কৃষি খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। হ্রাস পাচ্ছে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হার। ৩. কৃষিজমির প্রাপ্যতা হ্রাস : ‘কৃষিজমি রক্ষা কেন জরুরি’ শিরোনামে ১০ মে যুগান্তরের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের আবাদি জমি, বনভূমি, নদী, লেক ও বনাঞ্চল সব মিলিয়ে মোট জমির পরিমাণ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে দেশের কৃষিজমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর। উল্লেখ্য, ইক্যুইটি বিডির এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও নদীভাঙনের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮৯ হাজার হেক্টর জমি অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের মোট জমির ৫০ শতাংশই চলে যাবে শুধু বসতি স্থাপনের জন্য। কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ায় অর্থাৎ আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় কৃষি খাতে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

উপর্যুক্ত চ্যালেঞ্জগুলোসহ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উল্লিখিত অন্যসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমেই খাদ্যশস্য উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসতে পারে। যেহেতু অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ চলতি অর্থবছরে শেষ হতে যাচ্ছে এবং পরিকল্পনায় উল্লিখিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসেনি, সেহেতু আগামী বছর ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে শস্য উপখাতসহ সার্বিক কৃষি খাতের সাফল্য নিশ্চিতে তৎপর হতে হবে।

আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক খাদ্য সচিব, কলাম লেখক

latifm43@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম