Logo
Logo
×

বাতায়ন

সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য মুখের যত্ন নিন

Icon

ডা. মো. ফারুক হোসেন

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য মুখের যত্ন নিন

বিশ্বে প্রতিবছর ২০ মার্চ ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে পালিত হয়। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য জনগণকে সচেতন করে তোলা, যেন মুখের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিশ্বব্যাপী সাড়ে ৩০০ কোটি মানুষ মুখের রোগে আক্রান্ত। ২০২৪ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে-এর ক্যাম্পেইনে থিম বা প্রচারণার বিষয় হলো-A HAPPY MOUTH...IS A HAPPY BODY. অর্থাৎ সুস্থ মুখে সুস্থ শরীর। সুস্থ মুখ কেবল স্লোগান নয়, বরং এটি জীবনে চলার একটি দিকনির্দেশনা, যা আমাদের সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই প্রচারণার মাধ্যমে মানুষ যেন সুস্থ মুখের সঙ্গে সার্বিক সুস্থ শরীরের যোগসূত্র বুঝতে পারে এবং দাঁত ও মুখ সুস্থ রাখতে উৎসাহিত হয় এ লক্ষ্যে ২০ মার্চ ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে পালিত হচ্ছে।

মুখ শরীরের আয়না হিসাবে কাজ করে। মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর বর্জন করতে হবে। নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করতে হবে সার্বিক স্বাস্থ্য এবং জীবনের মান ঠিক রাখার জন্য। মুখ ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখলে মাড়ির রোগ থেকে সৃষ্টি হওয়া পেরিওডন্টাল রোগ, ব্যাকটেরিয়াল অ্যান্ডোকার্ডাইটিস, ব্রেন স্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া খাদ্যনালির ক্যানসারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই মাড়ি ও মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখলে আমরা এ ধরনের ক্যানসার এবং নানাবিধ আলসার থেকে রক্ষা পেতে পারি। মুখের রোগ পেরিওডন্টাইটিসের সঙ্গে নন-অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়।

গর্ভবতীর মুখের যত্ন : গর্ভকালীন মুখের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। গর্ভবতী থাকার সময় মাড়ির রোগ থাকলে গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয়, ওই শিশু আকার ও আকৃতিতে ছোট হবে। গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাবারে অরুচি থাকে। এর ফলে পেট ফাঁপা থাকতে পারে অথবা পেট ভরা ভরা লাগতে পারে। এ জন্য একবারে বেশি না খেয়ে বারবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। একজন মানুষ সাধারণত দিনে তিনবার খাবার গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে তিনবারের পরিবর্তে পাঁচবার অল্প অল্প করে খাবার দেওয়া উচিত। কারণ বমি বমি ভাবের কারণে এবং খাবারে অরুচির কারণে অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের কেউ কেউ সামান্য খাবার খান বা একদম খেতে চান না। এ সময় দাঁত ও মুখের যত্ন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য ফলিক এসিডের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে প্রথম তিন মাসে অবশ্যই ফলিক অ্যাসিড দেওয়া প্রয়োজন। সবার জানা থাকা প্রয়োজন যে, ফলিক এসিডের অভাব হলে ঠোঁট কাটা এবং তালু কাটা শিশুর জন্ম হতে পারে। এছাড়া শিশুর গঠন এবং গর্ভবতী মায়ের মুখে আলসার দেখা দিতে পারে। খাবারের পাশাপাশি ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় প্রোজস্টেরন হরমোন বেশি থাকার কারণে গর্ভবতী মায়েদের কনস্টিপেশন এবং মুখের রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া মাড়িতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী থাকার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে দাঁতের স্কেলিং করে মাড়ির যথাযথ যত্ন নিলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেবে না।

যাদের পেরিওডন্টাল রোগ আছে, তারা এথেরোস্কেলেরোটিক হার্টের রোগের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এথেরোস্কেলেরোসিস এমন একটি অবস্থা যখন শরীরের ধমনি আক্রান্ত হয়ে ধমনির অভ্যন্তরভাগ সরু হয়ে যায়। কারণ ধমনির প্রাচীরে প্ল্যাক জমা হয়ে থাকে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত পরিবহণ কমে যায়। যদি হৃদযন্ত্রগামী ধমনি বা রক্তনালিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা হয়, তাহলে বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ ব্যথা মাঝে মাঝে বাম হাতে, কাঁধে বা চোয়ালে অনুভূত হতে পারে। কখনো কখনো নিচের চোয়ালের মাড়ির দাঁতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এথোরোস্কেলেরোসিস মস্তিষ্কের ধমনিতে হতে পারে। ফলে মাথা ব্যথা, অস্বচ্ছ দৃষ্টি এবং মাথা ঘুরতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের এথেরোস্কেলেরোসিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া ধূমপান, মোটা হয়ে যাওয়া, স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু পেরিওডন্টাল রোগের সঙ্গে এথেরোস্কেলেরোসিসের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, তাই মাড়ির যত্ন নিতে হবে। ভুলে যাওয়া রোগের সঙ্গে মাড়ি রোগের সম্পর্ক রয়েছে। শুধু দাঁতের যত্ন নিলেই হবে না, পাশাপাশি মাড়ি ও শরীরের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। পেরিওডন্টাল রোগ হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। একজনের পেরিওডন্টাল রোগ হলে পরিবারের বাকি সদস্যদের চেকআপ করিয়ে নিতে হবে। মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রাখলে কেউ বিভিন্ন ধরনের সিস্টেমিক রোগ থেকে শুরু করে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবন লাভের জন্য মুখের যত্ন নিন।

ডা. মো. ফারুক হোসেন : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ

dr.faruqu@gmail.com

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম