চাই ঘাটতি বাজেট থেকে বেরিয়ে আসার পথ
আতাহার খান
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এবারও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিশাল অঙ্কের ঘাটতি দেখানো হয়েছে। ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আয় ৫ লাখ কোটি টাকা আর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগে এটাই হলো সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট।
প্রতিবছরই ঘাটতি বাজেটের জোয়াল কাঁধে নিয়ে দেশবাসীকে পথ চলতে হয়। যেমন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা আর আয় দেখানো হয়েছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। তার মানে ঘাটতির পরিমাণ পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার। সেখানেও ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সেখানেও আমরা ঘাটতির পরিমাণ দেখি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২-এর বাজেটের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সেখানেও ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। আসলেই কি ঘাটতি বাজেট থেকে আমাদের মুক্তি নেই?
এটা কারও অজানা নয়, বছরের পর বছর এভাবে বাজেটের ঘাটতি পূরণ করা হয় অভ্যন্তরীণ খাত আর বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে। বাজেটের ঘাটতি পূরণের জন্য এ পথই বছর বছর অনুসরণ করে আসা হচ্ছে। যেমন অভ্যন্তরীণ খাত হলো ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয়পত্র-এসব ঋণের বিপরীতে সুদের জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়।
এবারও আমরা আরও বড় একটি ঘাটতি বাজেটে আটকা পড়ে গেলাম। এখান থেকে কি কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারব না? হ্যাঁ, সদিচ্ছা আর আন্তরিকতা থাকলে যে কোনো কাজ করা সম্ভব এবং বাস্তবেও তা রূপ দেওয়া যায়। এর জন্য দরকার হয় সরকারি সিদ্ধান্ত।
তবে একথা অস্বীকার করা যায় না যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বিশ্ব পরিস্থিতি উত্তপ্ত। বিশ্বমন্দার গরম নিশ্বাস ঘাড়ের কলার ছুঁয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে চারদিক। দেশে মূল্যস্ফীতির দাহে বিদ্ধ সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা কারও অজানা নয়। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনেও অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। তার ওপর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ নাজুক দারিদ্র্যের কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পথ। সম্পদের বৈষম্য তো আড়াল করার কিছু নেই, সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আয়-বৈষম্যও। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সমস্যা তো দিন দিন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। তার ওপর আছে ডলার সংকট। এ সংকটের নেপথ্যে রয়েছে সরকারের ভুল মুদ্রানীতি। আমাদের মনে রাখা দরকার, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় থেকে ডলার জোগাড় হয়ে থাকে। রপ্তানির চাইতে আমদানি কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় এখান থেকে ডলার আয়ের সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই প্রবাসী আয় থেকে ডলার সংগ্রহ একমাত্র পথ। কিন্তু এখানেও সরকারের বিদেশি মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণ নীতিই দায়ী। বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে না দিয়ে বিনিময় হার বেঁধে রাখার ফলে আজ ডলার সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিদ্যমান বহুমুখী চ্যালেঞ্জ-এসব সামনে রেখে অর্থমন্ত্রী ওই বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, এটি গরিববান্ধব বাজেট। তার এ কথার পেছনে যুক্তি আছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে-এর মধ্যে আছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ভাতা বাড়ানো। এর মানে হলো, গরিব মানুষকে সহায়তা করার জন্য বাড়ানো হয়েছে ভাতার পরিমাণ এবং ভাতা ভোগকারীর সংখ্যা। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা।
আরও আছে। ব্যক্তিগত আয়কর সীমা বাড়ানো, বিদেশি বিলাসপণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো, কার্বন করসহ নতুন কিছু বিষয়ের ওপর কর আরোপ, ফ্ল্যাট কেনা, জমির রেজিস্ট্রেশন ফি, একাধিক গাড়ি কেনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে কর। আছে আরও নানা খাতে কর বাড়ানোর প্রস্তাব। এগুলো অবশ্যই ইতিবাচক দিক। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চান ব্যবসা-বাণিজ্য সতেজ ও ফলবান হয়ে উঠুক।
তবে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সুনির্দিষ্ট কোনো পথ নেই। পাশাপাশি পরিষ্কার নয় সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় দিকনির্দেশনা। এখানে আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান বিশৃঙ্খল অবস্থা দূর না হওয়া অবধি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মুদ্রার মান আর সুদের হার বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো। জোর করে কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকিটাই বড় হয়ে ওঠে। উদাহরণ টেনে বলা যায়, বিদেশি মুদ্রার মান ও সুদের হার নির্ধারণ, বাজারে একাধিক মধ্যস্বত্বভোগীর দৃঢ় অবস্থান, চাঁদাবাজি, পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি-এসব অব্যবস্থাপনা জিইয়ে রেখে কী করে সম্ভব হবে বাজার ব্যবস্থাপনাকে সংকটমুক্ত রাখা! বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, ২ হাজার টাকা কর দেওয়া হলে ৪৪ ধরনের নাগরিক সুবিধা লাভ করা যাবে। এক্ষেত্রে টিআইএন-এর সঙ্গে রিটার্ন জমা দেওয়ার রসিদও দেখাতে হবে। অতি দরিদ্র যারা, তারা এ ২ হাজার টাকা কর দিতে পারবেন না, তাদের ভাগ্যে সেসব নাগরিক সুবিধা ভোগ করার কোনো আশাই আর থাকছে না। সংগত কারণে প্রশ্ন উঠবে, প্রতিদিন সাধারণ মানুষ নানা ধরনের পণ্য ও সেবা কেনার জন্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট দিচ্ছে-সেখানে কেন তাদের নাগরিক সুবিধা লাভের জন্য আরও ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে? এটা কি এক ধরনের জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ নয়?
প্রস্তাবিত বাজেট সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, একথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারি কর্মচারীদের বেতন, পেনশন, উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ পরিশোধে খরচ হয়ে যাবে বরাদ্দের বড় অংশ। তার ওপর আরও আছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অর্থায়ন। এতসবের পর সরকারের হাতে খুব একটা টাকা থাকে না। অস্বীকার করা যাবে না, অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে দেশবাসী-কারণ মূল্যস্ফীতি, সরকারের অভ্যন্তরীণ ব্যাংক নির্ভরতার জন্য বেসরকারি খাতের ভোগান্তি, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় ইত্যাদি সমস্যা পেরোনোর মতো পরিষ্কার কোনো পথনির্দেশনা নেই এখানে।
উল্লিখিত চ্যালেঞ্জগুলোর স্বরূপ এক নয়। কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, যা স্বাভাবিক পথে মীমাংসা করা যায়। আর কিছু চ্যালেঞ্জ আছে মোকাবিলা করা কঠিন হবে; তাই বলে তা বাস্তবে রূপ দেওয়া অসম্ভব মনে করার কোনো কারণ নেই। এখানে শুধু দরকার হয় সরকারি সিদ্ধান্তের।
শুরুতে আমি বলেছিলাম ঘাটতি বাজেটের কথা। সেখান থেকে বের হয়ে আসা কি কোনোভাবেই সম্ভব নয়? উত্তর হলো, সম্ভব। সেজন্য কৌশলগতভাবে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত শিল্পায়নের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানো-পাশাপাশি প্রয়োজন মানবসম্পদ উন্নয়নের মধ্য দিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের পরিবেশ আরও বিস্তৃত করা।
বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ, এটি পুরোনো খবর। ২০১৭-এর মাঝামাঝি এসে প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ পূরণ করে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে যায়। এটি ছিল তখন আমাদের জন্য সত্যই একটা সুখবর। এ সাফল্য নিয়ে গর্ব হয়। উন্নতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী রেখে আমরা সামনের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়েও যাচ্ছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮২৪ ডলার। তবে মাথাপিছু আয়ের এ গড় হিসাব নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। এখনো সমাজের বিশেষ শ্রেণির হাতে রয়ে গেছে সম্পদের পাহাড়। সেখানে আয়বৈষম্যও অত্যন্ত পরিষ্কার। তার মানে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে রয়ে গেছে বড় ব্যবধান। মাত্র ১০ শতাংশ ধনীর হাতে রয়ে গেছে দেশের ৩৫ শতাংশ সম্পদ। এ পরিসংখ্যানই কী পরিষ্কার করে দেয় না, ধনী-দরিদ্রের অবস্থান এখন কোন পর্যায়ে অবস্থান করছে! শুধু নিরুপায় দৃষ্টিতে আমাদের দেখতে হয়, এদেশে ২ কোটি ৪৫ লাখ দরিদ্র মানুষের দুর্দশা আর আর্তনাদের ছবি। আরও বড় চিন্তার কারণ, দেশের অর্ধেক মানুষরই নেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতা।
আমরা জানি, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সূচক ঊর্ধ্বমুখী রাখার জন্য প্রয়োজন হয় সুস্থ ধারার রাজনীতি। সেখানে সরকারি ও বিরোধী দল উভয়কেই চাই দায়িত্বশীল ভূমিকায়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে দেশে সুস্থ অবস্থা বজায় রাখা দরকার। বিশেষ করে চাই টাকার জন্য বাংলাদেশকে নিরাপদ জায়গায় পরিণত করা। অনুকূল পরিবেশে সে চলাচল করতে ভালোবাসে। দেশের রাজনীতি যদি উত্তপ্ত থাকে, দলগুলো যদি সংঘাত আর হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে টাকা পাড়ি জমাবে অন্য কোনো নিরাপদ জায়গায়। মুহূর্তেই দেশ থেকে বের হয়ে যাবে বিশাল অঙ্কের টাকা। সে তার নিজ প্রয়োজনেই খুঁজে নেবে নিরাপদ কোনো দেশ। তাই দেশের উন্নতির স্বার্থে অশান্ত রাজনীতি কাম্য হতে পারে না। সংঘাতের পথে না গিয়ে সরকার আর বিরোধী উভয়পক্ষেরই উচিত সমঝোতার মধ্য দিয়ে দেশে সহনশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। তার মানে এটাও একটি যুদ্ধ-অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধ। সেখানে আমাদের প্রত্যেককেই একেকজন সফল যোদ্ধার ভূমিকায় অবস্থান নেওয়া উচিত। এসবই নির্ভর করে সরকার কতটা ছাড় দিচ্ছে তার ওপর। অন্তত সামষ্টিক অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর স্বার্থে রাজনীতির সুস্থ অবস্থা অপরিহার্য। কারণ, সুস্থ রাজনীতিই পারে ঘাটতি বাজেটের অভিশাপ থেকে বেরিয়ে এসে অর্থনীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী রাখতে।
এজন্য আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য স্থির করা আছে ‘ভিশন’-৪১ অভিমুখে। সেখানে পৌঁছাতে হলে আমাদের হাতে আছে আরও ১৮ বছর। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ করার জন্য দরকার হবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) আলোকে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করা। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য প্রয়োজন পড়বে ৬৪ হাজার ৯৫৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন টাকা। এ বিনিয়োগের ৮১ দশমিক ১ শতাংশ (৫২৬৫৮.৬ বিলিয়ন টাকা) হবে বেসরকারি খাতে, আর বাকি ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ (১২৩০১.২ বিলিয়ন টাকা) হবে সরকারি খাতে।
যদি সফলভাবে এ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে উন্নত দেশের পথে বাংলাদেশ বেশ খানিকটা এগিয়ে যাবে, সন্দেহ নেই। এখানে আমাদের মনে রাখা দরকার, উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ করাটা কিন্তু খুব একটা সহজ কাজ হবে না। অন্তত মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশের মতো সহজ হবে না। উন্নত দেশের সোপানে প্রবেশ করতে হলে জাতিসংঘ নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) আগে অর্জন করতে হবে। সেই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জন্য প্রয়োজন হবে শিল্প-অবকাঠামো, অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতের ব্যাপক উন্নয়ন। এজন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা ছাড়াও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রথম ১২ বছরেই অতিরিক্ত ৯২৮.৪৮ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে। বিপুল পরিমাণের অর্থ। সেজন্য চাই বিকল্প উৎস থেকে রাষ্ট্রের নিয়মিত টাকা আয়ের সুযোগ।
শুরুতে আমরা বলেছিলাম ঘাটতি বাজেটের ঘোরপ্যাঁচ থেকে কি আমরা কখনো বেরিয়ে আসতে পারব না? হ্যাঁ, পথ অবশ্যই খোলা আছে। শুধু দরকার সেই পথ খুঁজে বের করা। ধরা যাক, দেশে প্রতিবছরই বিদেশি বাণিজ্যিক বিনিয়োগ কিছু না কিছু আসবেই। এ বাণিজ্যিক বিনিয়োগ আসার কারণ কারও অজানা নয়। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের এখানে শ্রমের দাম অনেক কম-পানির মতো সস্তা আর কী! তাই অধিক মুনাফার আশায় উন্নত দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। এসব বিনিয়োগের ধরন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিমুক্ত প্রকল্পে সরকার দেশের স্বার্থে মোট মূলধনের কমপক্ষে ১০ শতাংশ অংশীদার হতে পারে। তার জন্য একটি আইন করে নিলেই হলো। এ ধরনের কিছু বাণিজ্যিক বিনিয়োগকৃত মূলধনের মালিকানাসূত্রে বছর শেষে খুব ভালো অঙ্কের লভ্যাংশ পাওয়া যাবে। এতে বাজেটে ঘাটতির চাপ অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি আমাদের উদ্দেশ্য থাকা উচিত কী করে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্ব উভয় খাত থেকে আয় আরও বাড়ানো যায়। বাজেটের ঘাটতি পূরণের জন্য রাজস্ব আয় বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই।
আমরা এগিয়ে যাচ্ছি মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশ অভিমুখে। সেই পথে হাঁটতে হলে ঘাটতির অভিশাপ থেকে কীভাবে বাজেটকে রেহাই দেওয়া যায়-এখন খুঁজে বের করা দরকার সেই পথ।
আতাহার খান : সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, কবি