Logo
Logo
×

বাতায়ন

আত্মশুদ্ধিতে পরিশুদ্ধ হোক রাজনৈতিক সংস্কৃতি

Icon

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আত্মশুদ্ধিতে পরিশুদ্ধ হোক রাজনৈতিক সংস্কৃতি

দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিবেশ পর্যালোচনায় আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির প্রতি অপরিসীম অবজ্ঞা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

পারস্পরিক সমঝোতা-সৌহার্দ-সম্প্রীতির বিপরীতে অসহিষ্ণু আচরণ জনগণকে রাজনীতির প্রতি অনাগ্রহী করে তুলেছে। মানুষের মর্যাদা সুদৃঢ় করার জন্য প্রয়োজনীয় নাগরিক স্বাধীনতা অপরিহার্য।

রাষ্ট্রের সব জনগণের সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা অবারিত ভোগ করার মধ্যেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় মুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণের অধিকার প্রয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করে সমাজের স্বয়ম্ভরতা অর্জনে মুক্তচিন্তার অবাধ প্রকাশ এবং সাংস্কৃতিক বিবেকের জাগরণ একান্ত প্রয়োজন। এ ধারাবাহিকতায় একুশ শতক ছিল সবচেয়ে সৃষ্টিশীল শতক, যা বিশ্বের প্রায় সব মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে স্পন্দিত এবং তা অর্জনে প্রচণ্ড শক্তি জুগিয়েছিল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক মনীষী অ্যারিস্টটল বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে তার বস্তুবাদী দর্শনে শুধু জীবনের প্রয়োজনে নয়, বরং উত্তম জীবন সচল করার প্রয়োজনেই রাষ্ট্রের উৎপত্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ব্যক্তিকে সর্বোৎকৃষ্ট জীবনের দিকে পরিচালিত করার লক্ষ্যে মানুষ সব সামাজিক সম্পর্ক এবং শক্তির বন্ধনে জাগতিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নে রাষ্ট্র গঠন নিশ্চিত করেছে। এজন্যই রাষ্ট্র মানুষের পরিপূর্ণ জীবনপ্রবাহের গতিময়তায় একটি অনিবার্য প্রতিষ্ঠানরূপে প্রতিভাত। মানবসত্তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ বা পরিবার-সমাজের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা, নিরাপত্তা-মঙ্গল প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার সার্থকতা সর্বজনবিদিত।

খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী লুসিয়ান-পাই রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যাখ্যায় বলেছেন, কোনো জাতিরাষ্ট্রে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি-বিশ্বাস-আদর্শিক মনোভাবের সমষ্টিগত প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলাবদ্ধ আচরণের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা-বিধিবিধান ও নীতিনৈতিকতার সমাহার রাজনীতির মৌলিক ভিত্তি তৈরি করে। মূলত রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল উপাদান হচ্ছে কোনো দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতি নাগরিকদের সনাতন মূল্যবোধ-অনুভূতি ও আস্থার সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি। মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল অ্যালমন্ড সর্বপ্রথম রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন। তার মতে, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যদের রাজনীতি সম্পর্কে মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির রূপ ও প্রতিকৃতি।’ একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতির প্রবহমানতায় সেদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি উদ্ভাসিত। রাজনীতি নিয়ে সমাজের চিন্তাচেতনা-ধ্যানধারণা, রাজনৈতিক মূল্যবোধ-বিশ্বাস-মতাদর্শ, জ্ঞানগত কার্যকলাপ-আগ্রহের পরিমাপ-মূল্যায়নমূলক অভিযোজনে নির্ধারিত হয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাবলীল উত্তরণ। জনগণ সম্যক অবগত আছেন, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি পারস্পরিক সম্পূরক-পরিপূরক। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি হচ্ছে সমাজে বসবাসরত ব্যক্তিদের উন্নয়ন ও সমষ্টিগত মূল্যবোধ সৃষ্টির সোপান। ব্যক্তিস্বাধীনতার পাশাপাশি পুরো সমাজ উন্নয়নে পরিমার্জিত পারস্পরিক শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-পরমতসহিষ্ণুতা-অপরের বক্তব্যকে অবজ্ঞা না করার প্রবণতা রাজনৈতিক সংস্কৃতির উচ্চ মাত্রা নির্দেশ করে।

যে কোনো রাষ্ট্রের উন্মেষ ও চলমান প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-সমাজের সার্বিক চিত্রপট মানবকল্যাণের জটিল মিথস্ক্রিয়ায় নির্মিত হয় রাজনৈতিক রীতিনীতির পাঠ্যক্রম। একনায়ক-সামরিক-স্বৈর-গণতান্ত্রিক গতিধারায় গ্রহণ-বর্জনের নানাবিধ পন্থায় পরিচালিত হয় স্বকীয় সত্তার রাষ্ট্রব্যবস্থা। আদর্শের ঘাত-প্রতিঘাতে তৈরি হয় দল-উপদল-দলীয় নেতৃত্ব ও কর্মীর আচার-আচরণ। দল গঠনের প্রণিধানযোগ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্ম-বর্ণ-দল-মত-অঞ্চল নির্বিশেষে সমগ্র জনগোষ্ঠীর পরিপূর্ণ মঙ্গলসাধন করা। আদর্শিক ভিন্নতায় বিরোধ-বিচ্ছেদ, প্রতিহিংসা-পরশ্রীকাতরতা দূর করে সংগত-সংযত-সমাজস্বীকৃত আচরণ দ্বারা দেশ ও দেশবাসীর উপকার করার ইস্পাতকঠিন ব্রত গ্রহণের মাধ্যমেই নেতৃত্বের পরিশীলিত ও গ্রহণযোগ্য বিকাশ ঘটে।

মূলত সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে ব্রিটেনের বুর্জোয়া বিপ্লব-ফরাসি বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে রাজতন্ত্র-স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিপরীতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মধ্যেই আধুনিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বীজ বপিত হয়েছিল। সুদূর অতীতে উদ্ভূত সংস্কৃতি-উপসংস্কৃতির প্রভাব সমাজকাঠামোর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনে সমধিক সার্থক না হলেও সামাজিক উন্নতি-প্রগতি-পরিবর্তনশীলতা অনেকাংশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য মোড়কে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় উন্নয়ন-অনুন্নয়নের মানদণ্ডে মুখ্য বিষয় হিসাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনই রাজনৈতিক সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

ব্যক্তি-শ্রেণি বা দলীয় স্বার্থ রক্ষার ধারণা তথা স্বৈরতন্ত্র-অভিজাততন্ত্রের পরিবর্তে মানুষ প্রতিষ্ঠা করেছে গণতন্ত্র। স্বাধীনতা-সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠার যে বিশ্বজনীন চেতনা, তা ইউরোপে রেনেসাঁ বা ফরাসি বিপ্লব ও অন্যান্য বিপ্লবের পেছনে কার্যকর ছিল। পরবর্তীকালে এ শক্তিমানতাই গণতন্ত্রের ভিত রচনায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। রাষ্ট্র প্রায় সব ক্ষেত্রে জনগণের চরিত্র, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আর্থসামাজিক পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক ও ভৌগোলিক অবস্থানের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে মুক্ত সমাজ গঠন প্রক্রিয়াকে স্পষ্ট করেছে। এটিই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য।

বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান পরিপূর্ণ প্রতিপালনে যথাসময়ে প্রান্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন পর্ষদ থেকে শুরু করে শহর-নগর ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন জনপ্রশাসনের একটি অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য নয়; জনগণের কল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তির অনুসন্ধান সাধারণত নির্বাচনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। রাষ্ট্র পরিচালনায় এর ব্যতিক্রম কোনো পন্থা অবলম্বন করা হলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের স্খলন ও অবৈধ-অনৈতিক সেনা-স্বৈরশাসন উন্মেষের সুযোগ তৈরি হয়।

গণতন্ত্রের প্রাথমিক মূল্যবোধ হচ্ছে, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। অর্থাৎ ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতার তথা চিন্তা-বাক-সংগঠনের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার প্রয়োগ, দলগঠন ও অংশগ্রহণ, প্রার্থী হওয়া, নির্বাচনে অংশগ্রহণ, অভিযোগ উত্থাপনের স্বাধীনতা অর্থাৎ সার্বিকভাবে জীবনধারণ, পরিবার গঠন, নিরাপত্তা বিধান, আইনের আশ্রয়, স্বাধীন মতামত প্রকাশ, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিরোধিতার অধিকার প্রভৃতি সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। যে কোনো সামাজিক প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব ও সৃজনশীল প্রতিভার উন্মেষ একমাত্র গণতান্ত্রিক পন্থায় সম্ভব। এজন্যই বিশ্বের সব সভ্য দেশ, বিবেকবান-মানবতাবাদী মানুষ গণতন্ত্রের ভাবধারায় বিশ্বাসী। ভল্টেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮) বলেছেন, ‘তোমার মতের সঙ্গে আমি একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন হলে প্রাণ দেব।’

আমাদের মুক্তির মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে চার মৌলিক রাষ্ট্রনীতি তথা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত হয়েছে দেশের পবিত্র সংবিধান। বঙ্গবন্ধু বারবার অসংখ্য ভাষণে ওই লক্ষ্যগুলো ঘোষণা করেছেন। তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টির একটি মাত্র আসন ছাড়া সংসদে বিরোধী দলের কোনো অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। তথাপি সংসদনেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভিব্যক্তি প্রকাশ করে স্পিকারকে বিরোধীদলীয় সংসদ-সদস্যকে যথেষ্ট সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন, যাতে তিনি সংসদে তার পরিপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন। সংসদের ভেতরে শুধু নয়; সংসদের বাইরেও সরকারি দল-বিরোধী দলগুলোর আন্তঃসম্পর্ক ছিল পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, আস্থা ও বিশ্বাসে ভরপুর। এমনি করে জাতির পিতার হাত ধরেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শুভ সূচনা ঘটেছিল।

বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী রাষ্ট্র-সমাজ চিন্তাচেতনা বরাবরই জনগণের সুখ-সমৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থির হয়েছিল; যার মূলে ছিল গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সমাজতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। এ জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র-সমাজব্যবস্থার টেকসই সমৃদ্ধি নিশ্চিতে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর সহযোগিতা আহ্বান করে ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দেশের মানুষকে সেবা করে মন জয় করতে হবে। তোমাদের কাছে আমার নির্দেশ, তোমাদের কাছে আমার আবেদন, তোমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আমাদের কাছে রাতের আরাম, দিনের বিশ্রাম হারাম, আমাদেরও কাজ করতে হবে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। ক্ষমতার জন্য আওয়ামী লীগ জন্মগ্রহণ করে নাই। বাংলাদেশে শোষণহীন সমাজ গঠন করার জন্যই আওয়ামী লীগ জন্মগ্রহণ করেছে। শোষণহীন সমাজ গড়ে তুলতে হবে। লোভের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। লোভ যেখানে ধ্বংস সেখানে। একবার যদি কেউ লোভী হয়ে যায়, সে জীবনে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। শুধু আপনার মুখে কালি দেবে না, কালি দেবে সেই সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুখে। যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সাড়ে ৭ কোটি মানুষ স্বাধীন হয়েছে।’ ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণের প্রাক্কালে ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেষ ভাষণে বঙ্গবন্ধু শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির প্রকৃষ্ট উপায়ে ঋদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। আত্মশুদ্ধি-আত্মসমালোচনা-আত্মসংযমের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে দেশকে যে ভালোবাসা যায় না; বঙ্গবন্ধু বরাবরই তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

গণতন্ত্রের বিকাশমানতায় বহু দলের অস্তিত্ব থাকা যেমন জরুরি, তেমনই দল-নেতাকর্মীদের আচার-আচরণে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস, যোগাযোগ প্রভৃতির প্রচলন একান্ত বাঞ্ছনীয়। দলগুলোর মধ্যে নানা বিষয়ে ভিন্নমত থাকাটা স্বাভাবিক হলেও এ মতভিন্নতা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা এবং সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব; যা সর্বজনের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, কালক্রমে গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধিকতর নিকৃষ্ট প্রচলন পুরো জাতিকে হতাশায় নিমজ্জিত করছে। প্রতিনিয়ত একে অপরকে রাষ্ট্রদ্রোহী, দেশের শত্রু, দুর্নীতিবাজ, লোভী, ক্ষমতাপ্রত্যাশীসহ বিভিন্ন কদাচার-কুৎসিত মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি-ডলার সংকট, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা, খাদ্যপণ্য সরবরাহে বাধা, অবরোধ-পালটা অবরোধে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি এবং চলমান বৈশ্বিক মহামন্দার সম্ভাব্য বলয়ে আবদ্ধ দেশগুলোর মতো অবস্থা বাংলাদেশেরও। উদ্ভূত সংকট নিরসনে জনগণের বুদ্ধিমত্তা, ঐক্যবদ্ধতা, উৎপাদনমুখিতা, কঠোর পরিশ্রমকে আমলে না নিয়ে অনর্থক আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক বাগ্বিতণ্ডা জনমনে হতাশার জন্ম দিচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনে আন্দোলনের ইস্যু তৈরি এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর নানা অপকৌশল গ্রহণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। জনপথ দখলে নিয়ে জোরপূর্বক সমাবেশ-মহাসমাবেশের আয়োজন জনদুর্ভোগকে আরও কঠিন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক নানামুখী কূটচালের অনভিপ্রেত রাজনৈতিক কর্মসূচি বা সরকার উৎখাতের অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য কোনোভাবেই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র সংবিধানসম্মত বিধিবিধান যথার্থ অনুসরণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিবাচক প্রতিযোগিতায় সব দলের অংশগ্রহণ আবশ্যক। জনগণের পবিত্র ভোটাধিকার প্রয়োগে সরকার গঠনকল্পে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে সুস্থ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করার জন্য স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে সর্বতোভাবে সহযোগিতাই একান্ত কাম্য। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উৎকৃষ্ট চর্চাই হোক রাজনীতির আদর্শ। মোদ্দা কথা, দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক, দলীয় নেতাকর্মী আত্মশুদ্ধিতে পরিশুদ্ধ-বলীয়ান হয়ে দুর্যোগপূর্ণ সময়কাল অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার নিঃসংকোচে ব্যক্ত করবেন-এটিই প্রত্যাশিত।

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : শিক্ষাবিদ; সাবেক

উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম