শিক্ষককে প্রস্তুত করাই চ্যালেঞ্জ
অমিত রায় চৌধুরী
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
২০২৩ থেকেই বলবৎ হতে যাচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত এর আওতা। দীর্ঘ প্রস্তুতি, অংশীজনের মতামত, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ, কর্মশালা- কোনো কিছুই বাদ যায়নি। রাষ্ট্রের নীতি-দর্শন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও সমকালীন চাহিদা প্রাধান্য পাচ্ছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ৬০ বছরের পুরোনো ব্যবস্থাকে বদল করা সহজ নয়। নতুনকে স্বাগত জানাতে মানুষ হয়তো জৈবিকভাবেই তৈরি থাকে না। খাপ খাওয়াতে সময় লাগে।
অনলাইন ভর্তি কিংবা ভর্তির জন্য লটারির মতো যুগান্তকারী সিদ্ধান্তও বিতর্ক এড়াতে পারেনি। করোনাকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ভার্চুয়াল সংযুক্তি অচেনা সম্ভাবনার দোর খুলে দিয়েছে। সাড়া মিলেছে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ কৌশলেও। কিন্তু জনমানস দ্বিধা-সংশয়মুক্ত ছিল-এ কথা বলা যাবে না। চেষ্টার সুফল বা স্থায়িত্ব পরের কথা। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অথবা উদ্ভূত বাস্তবতায় পদ্ধতির পরিবর্তন অস্বাভাবিক নয়।
বড় কথা-প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার কোথাও যে গলদ থেকে যাচ্ছে-তাও বেশ বোঝা যাচ্ছিল। মান নিয়ে আক্ষেপের অন্ত ছিল না। আবার অনেকে বলবেন-অতীতের প্রতি পক্ষপাত হয়তো মানব মনেরই বৈশিষ্ট্য। তবে নানা মানদণ্ডে সমাজে যে বৈষম্য বাড়ছে আর তার দায় যে অনেকটাই বিভক্ত শিক্ষার, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। একথাও সত্যি-বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শিক্ষার চরিত্র ও ব্যবস্থাপনা কাঠামোয় পরিবর্তনের চেষ্টা নজর কেড়েছে। সামাজিক সুরক্ষা বলয় মজবুত হয়েছে। শিক্ষা সংস্কারে নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে।
এরই মধ্যে প্রযুক্তির হস্তক্ষেপ ছিল বৈপ্লবিক; যা ব্যবস্থাকে গতিশীল ও স্বচ্ছ করার সুযোগ এনে দিয়েছে। লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা বা শিক্ষা বেষ্টনী বাড়ানোর মতো কর্মসূচি সফল হয়েছে। কিন্তু সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার লক্ষ্য অধরাই থেকে গেছে। সৃজনশীল পদ্ধতি ফলপ্রসূ হয়নি। কোচিং-সিন্ডিকেট বা নোট-গাইড নেক্সাস থেকেও মুক্তি মেলেনি। নৈতিক অবক্ষয় বাদ সেধেছে বারবার। দরকার পড়েছে পরিবার থেকে সমাজ-সবার অন্তর্ভুক্তি, পরিপার্শ্বের সমর্থন। জ্ঞান, দক্ষতা ও চিরন্তন মূল্যবোধের জাগরণ। দেশকাল কিংবা জাতীয়-আন্তর্জাতিক বাস্তবতা-সবকিছুই শিক্ষা ভাবনায় জায়গা পেয়েছে। বিশিষ্টজনের উৎসাহ গৃহীত উদ্যোগে তাৎক্ষণিক সম্মতির সংকেত। তবে কারিকুলাম বাস্তবায়নে কোনো চ্যালেঞ্জ কতটা নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে-সে আলোচনাটাই আগে জরুরি।
কিছু কাঠামোগত ও স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য এবারের কারিকুলামকে প্রথামুক্ত করেছে। প্রথমত, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়াটা ধারাবাহিকভাবে পরস্পর সংবদ্ধ ও যুক্তির শৃঙ্খলে সংযুক্ত। ২০২৩ থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়ে এই শিক্ষাক্রম ধাপে ধাপে ২০২৭-এ শেষ হবে, নতুন পদ্ধতিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন সবচেয়ে বড় পরিমাপক; যা মুখ্যত শ্রেণিকক্ষে সম্পন্ন হবে। পাবলিক পরীক্ষা হবে ৩টি। সনদ ২টি। এসএসসি ও এইচএসসি। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আলাদা পরীক্ষা থাকলেও সনদ দ্বাদশে। ৩য় শ্রেণি অবধি কোনো পরীক্ষাই নেই। লক্ষণীয় যে, প্রাথমিক শ্রেণিতে সামষ্টিক পরীক্ষা ৩০ শতাংশ। একাদশ-দ্বাদশে তা ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার চাপ বাড়বে।
লক্ষ্য নিষ্পাপ শৈশবকে ভারমুক্ত রাখা, আনন্দময় করা। বিষয় নির্ধারণে থাকছে প্রক্রিয়াগত বৈচিত্র্য, নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। শিক্ষার্থী কোনোভাবেই এসএসসির আগে বিষয় বা ধারা অনুযায়ী বিভাজিত হবে না। অর্থাৎ বিজ্ঞান, বাণিজ্য কিংবা মানবিক-সবাই ভাষা, গণিত, কৃষি, প্রযুক্তি, লাইফ স্কিলস, সমাজ বিজ্ঞান, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, ধর্ম-নৈতিকতা-মোট ১০টি বিষয় শিখবে। ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন নিশ্চিত করাই উদ্দেশ্য; যাতে প্রয়োজনে শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে পেশা নির্বাচন করতে পারে। যে কোনো একটি পেশার ওপর দক্ষতা অর্জন বাধ্যতামূলক করা হবে। সেটা কৃষি, সেবা বা শিল্প খাত-যাই হোক না কেন।
সনদকেন্দ্রিক পরীক্ষার জায়গা নেবে পারদর্শিতা; যা তাকে কাজের বাজারে অপ্রাসঙ্গিক করবে না। বিভাজন তুলে দেওয়ার অন্য এক মাত্রা আছে। তা হলো-প্রজন্ম চেতনায় বিজ্ঞানের ছাপ। যুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। শিক্ষাক্রম রূপরেখায় ১০টি বিষয়ের সঙ্গে কারিগরি ও মাদ্রাসা শাখার যৌক্তিক সমন্বয়ের কথা ভাবা হয়েছে। সবচেয়ে নতুন অভিজ্ঞতা হবে কর্মকালীন শিখন। এখানেই নির্ভর করছে পুরো উদ্যোগের সাফল্য। বছরব্যাপী চলা এই অভিজ্ঞতাভিত্তিক অনুশীলনের ক্ষেত্র শুধু ক্লাসরুম নয়, বাসা, পরিবার, অভিভাবক, চারপাশ এমনকি সহপাঠীও পরীক্ষক হতে পারে। পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে শিখনলব্ধ জ্ঞানের চর্চা সব শিক্ষার্থীর অভিন্ন মূল্যবোধ গঠনে সহায়ক হবে। বিষয়বস্তু সবার জন্য এক হওয়ায় ভাবনার ঐক্য গড়ে উঠতে পারে।
পাঠ্যসূচি বদলে যাচ্ছে, বদলাচ্ছে পাঠ্যবই। এমনকি পরীক্ষা পদ্ধতিও। সামষ্টিক পরীক্ষার বিষয় ও শ্রেণিভেদে নম্বর বিন্যাসে তারতম্য নতুন কারিকুলামের বৈশিষ্ট্য। শিখনকালীন মূল্যায়ন করবেন শ্রেণি শিক্ষকরা। রুটিন মাফিক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পাঠের ভিত্তিতে প্রয়োগমূলক কাজের মধ্য দিয়েই চলবে এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতেই হাতে আসছে নতুন বই। ১ম, ২য়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির বিদ্যার্থীরা ১ম কিস্তিতে বই পাবে। ২০২৪ সালে ৩য়, ৪র্থ, ৮ম ও ৯ম শ্রেণি। ৫ম ও ১০ম ক্লাসে বই যাবে ২০২৫ সালে। একাদশ ২০২৬ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বই পাবে ২০২৭ সালে।
অর্থাৎ নতুন কারিকুলামে প্রথম এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ ও এইচএসসি ২০২৮ সালে। ১০ম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতেই এসএসসি পরীক্ষা। আর দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসে এইচএসসি। তবে একাদশে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার নম্বর যুক্ত করেই তৈরি হবে ফলাফল। পিইসি, জেডিসি বা জেএসসি পরীক্ষা হবে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায়। কেন্দ্রীয়ভাবে নয়। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে সনদও থাকবে। আগামী বছর থেকেই শুরু হবে নতুন শিক্ষাক্রমের পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়ন। ৬২টি প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে পাইলটিং শেষ হয়েছে। প্রথার বাইরে গিয়ে শিক্ষা ভাবনা। শিক্ষার্থীদের উদ্দীপনা বা আগ্রহ পরখ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এ কাজে অংশ নিয়েছিলেন; যাদের অভিজ্ঞতা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।
রূপকল্প, প্রস্তুতি বা আয়োজন-সব মিলে স্বাধীনতা-উত্তরকালে শিক্ষাক্ষেত্রে নেওয়া এটিই বৃহত্তম উদ্যোগ। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক যে ব্যবস্থার অংশীজন, সেখানে সব ভালো-মন্দের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ জারি থাকবে। শুক্র-শনি দু’দিন বন্ধ থাকবে প্রতিষ্ঠান। পরিকল্পনা অনেক মহৎ কোনো সন্দেহ নেই। সৃষ্টিশীলতার জন্য বিশ্রাম দরকার। ছাত্র-শিক্ষক উভয়ের জন্য। যথাসময়ে পাঠ্যবই প্রণয়ন-মুদ্রণ নিঃসন্দেহে খুব একটা ঠুনকো কাজ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে পাঠ্যপুস্তক ইস্যু বিতর্কের বড় পরিসরজুড়ে থেকেছে। আর ঐতিহাসিক এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বড় অবলম্বন পুস্তক প্রণয়নে মুন্সিয়ানা; যা অনেক কঠিন কাজ সহজ করে দিতে পারে। তাই শুধু অভিজ্ঞ, সৎ ও পরিশ্রমী শিক্ষাবিদকে দায়িত্ব দিলেই চলবে না, কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার পর্যাপ্ত সময়ও দিতে হবে।
এরপর আসবে মোটিভেশন। যা সচেতন করবে সমাজকে। নানারকম রূপান্তরের মধ্য দিয়ে চলেছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ ও জীবনচর্চা। পেশায় বৈচিত্র্য আসছে। মেয়েরা কাজের বাজারে স্বচ্ছন্দ। ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রশ্নে সবাই একমত। শ্রেষ্ঠত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে লড়াই থাকলেও এক জায়গায় চেতনার ঐক্য আছে। প্রান্তিক কৃষকও তার সন্তানের ভবিষ্যৎ যে কোনো মূল্যে নিরাপদ করতে চায়। প্রথম প্রজন্মের বিশাল অংশ এখন কাজের বাজারে।
বদলে যাওয়া এই মানসিকতাই দুর্লভ সামাজিক পুঁজি। এই শক্তির সদ্ব্যবহার করতে হলে সমাজকে সম্পৃক্ত করা চাই। আর নতুন উদ্যোগে কার্যকর অংশীদার অভিভাবক। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব অভিভাবক, সামাজিক নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। প্রয়োজনে অভিভাবকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও কাজে আসতে পারে।
এই মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুলস্ শিক্ষক-একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথমেই শিক্ষকের বেতন ও মর্যাদার বিষয়টি আরেকবার ভাবতে হবে। নাগরিকের স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সামর্থ্য ছিল কম। কয়েক দশক আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল। ৭৫-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের অবহেলাও শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত করার জন্য দায়ী। শিক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা হয়েছে। অপ্রস্তুত বেকার জনগোষ্ঠীর আশ্রয় হয়েছে শিক্ষা; অসুস্থ রাজনীতির পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে শিক্ষাঙ্গন। তবে এনটিআরসির মাধ্যমে অথবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে নিযুক্ত মেধাবী ছেলেমেয়েরা এই প্রক্রিয়ার ব্যতিক্রম। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরও খারাপ। আসলে শিক্ষায় সমতার জন্য গোটা দেশে একরকম ব্যবস্থা দরকার। অথচ শিক্ষার পণ্যায়ন ক্রমাগত বৈষম্যের বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে।
নগরকেন্দ্রিক ধনিক শ্রেণি শিক্ষাবাজারের দখল নিয়েছে। এখন যে বাস্তবতা সেখানে দাঁড়িয়ে যে কোনো মহৎ লক্ষ্যজয় কষ্টসাধ্য। মেধার অভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু নৈতিক অবক্ষয়ে আক্রান্ত সমাজকে সুস্থ করা কঠিন। সেজন্য শুধু প্রশিক্ষণ নয়, লাগবে কার্যকর নজরদারি। প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। দক্ষতা বৃদ্ধি বা সম্পূর্ণ অপরিচিত প্রক্রিয়ার সঙ্গে ধাতস্থ হতে চাই নিবিড় মনোযোগ, ঐকান্তিক আগ্রহ ও ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা। দেখেছি সৃজনশীল পদ্ধতি বা কমিউনিকেটিভ ইংরেজি-উভয় উদ্যোগই ভেস্তে গেছে। কারণ, প্রথমত শিক্ষক কষ্ট করতে রাজি ছিলেন না। দ্বিতীয়ত প্রশিক্ষণ ছিল দায়সারা ও স্বল্পমেয়াদি।
এবারের কর্মপরিধি যেমন বিস্তৃত, কাজের প্রকৃতি তেমনই বহুমাত্রিক, গভীর ও স্ব-উদ্ভাবনী। সবকিছু মাথায় রেখেই প্রশিক্ষণের জন্য নেওয়া হয়েছে মেগাপ্রকল্প। আর এ প্রশিক্ষণ চলতে হবে বিরতিহীন ও বাধ্যতামূলক। প্রশিক্ষণ চলাকালেই শিক্ষকের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা যাচাই করা যাবে। শিখনমূলক মূল্যায়নের সময় পক্ষপাতিত্বের সুযোগ কমিয়ে আনতে প্রযুক্তির সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে। প্রক্রিয়া অনানুষ্ঠানিক হলেও রেকর্ড রাখতে হবে। ডিজিটাল সার্ভেইলেন্স সব প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করতে পারে। শিক্ষকের ক্লাসরুম পারফরম্যান্স যাতে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে মনিটর করতে পারে তার সুযোগ রাখতে হবে।
শিক্ষকের পারদর্শিতার ওপর ভিত্তি করে তাকে পদোন্নতি বা শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই যেন শিক্ষক ২ বছরের বেশি এক কর্মস্থলে থাকতে না পারে। সব কথার শেষ কথা, এই উদ্যোগ সফল হলে দেশ নিশ্চয়ই লাভবান হবে। আর প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত শিক্ষাকে সরকারের হাতে নেওয়ার এখন কোনো বিকল্প নেই।
বিবর্তনের ধারায় শিক্ষা চেতনায়ও নানা বাঁক, নানা রূপান্তর এসেছে। পাশ্চাত্য ভাবনাও কখনো কখনো ছায়া ফেলেছে। সে চিন্তা মোড়ক বদলে আবার নিজের জগতেই পরিশীলিত হয়েছে। ছকবদ্ধ কিংবা ছকভাঙা, উভয় শিক্ষাই হাতছানি দিয়েছে। কলার পাশে বিজ্ঞান, জ্ঞানের পাশে কর্ম, ধর্মের পাশে ইহজাগতিকতা-এমন আপাত বিপরীত সহাবস্থানই আদর্শ মনে হয়েছে। জীবিকার জন্য শিক্ষার সন্ধান চাই নিশ্চয়ই। তবে খালি বই পড়া নয়, চরিত্র ও মনের গঠনও মজবুত হওয়া চাই।
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি চাই। কেবল রোজগারের কৌশলটি রপ্ত করা নয়, মূল্যবোধ গঠনের বিষয়টিও ভাবতে হবে। পরিশ্রমী শিক্ষার্থীর অভাব নেই; কিন্তু সাফল্যের মাপকাঠি কী, তা এরা বুঝে উঠতে পারছে না। বিশ্বজনীন শিক্ষা মানুষকে স্বার্থপর করে না, নিজেকে অতিক্রম করতে শেখায়। শুধু ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষা নয়, চিন্তার জালের বিস্তার ঘটিয়ে শিক্ষার্থী যেন জ্ঞানের মুক্ত আকাশে ডানা মেলতে পারে, বিশ্ব নাগরিক হয়ে উঠতে পারে-নতুন শিক্ষাক্রমের হয়তো এমনই অঙ্গীকার।
অমিত রায় চৌধুরী : সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ