পরিমার্জনাধীন অসম্পূর্ণ শিক্ষাক্রম ‘চূড়ান্তভাবে’ অনুমোদিত?
ড. আবদুস সাত্তার মোল্লা
প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত ৩০ মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত দুই মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় পরিমার্জনাধীন অসম্পূর্ণ শিক্ষাক্রম অনুমোদন করে। জানা যায়, উভয় মন্ত্রণালয়াধীন দুটো শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি এবং শিক্ষাক্রম উপদেষ্টা কমিটির প্রায় ৮০ জন সদস্য ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। এমন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা ঘণ্টাচারেক আলোচনা শেষে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ‘চূড়ান্তভাবে’ অনুমোদন করেন।
আমার জানামতে, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি কাজ শুরু করে প্রায় তিন বছরে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (জাশিপাবো) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং অধিকাংশ সময় পৃথকভাবে, কখনো কখনো একসঙ্গে কাজ করে এ ‘শিক্ষাক্রম রূপরেখা’ নামের প্রকৃতপক্ষে ‘শিক্ষাক্রমের ভূমিকা’ রচনা করেছে। স্মর্তব্য যে, ২০১১ সালে জুলাইয়ে কাজ শুরু করে মাত্র তিন-চার মাসে জাশিপাবো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের যথাক্রমে ছয় (এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির) এবং সাত (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ) শ্রেণির শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করেছিল।
মাধ্যমিক স্তরের নিম্নমাধ্যমিক উপস্তরের (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) সাতটি পাঠ্যপুস্তকও ডিসেম্বরের মধ্যে রচনা করে ২০১২ সাল থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাস্তবায়ন শুরু করা গিয়েছিল। পরে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২’ নামে অনুমোদন করে।
শিক্ষাক্রম নিচের শ্রেণি থেকে ক্রমান্বয়ে ওপরের দিকে বাস্তবায়ন করতে হয়; কিন্তু পূর্ণ, সামগ্রিক শিক্ষাক্রম-পরিকল্পনা একসঙ্গে করতে হয়। শিক্ষাক্রম-পরিকল্পনা সামগ্রিক না হলে শিক্ষাক্রমের সমকেন্দ্র (Concentric) বা সর্পিল (Spiral) পদ্ধতি অনুসরণে নিচের শ্রেণি থেকে ওপর দিকে ক্রমেই বিস্তৃত করা হয়েছে কি না (Vertical alignment) এবং একই শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষাক্রমে পুনরাবৃত্তি বর্জন করা হয়েছে কি না (Horizontal alignment), তা পর্যালোচনা করে শিক্ষাক্রমের ভেটিং সম্পন্ন করা যায় না।
জাশিপাবোর ভেতর থেকে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষাক্রম পরিমার্জন শেষ হলেও প্রাক-প্রাথমিক শুরুই করা হয়নি। মাধ্যমিক স্তরের শুধু ষষ্ঠ শ্রেণির পূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়েছে, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের কাঠামোই তৈরি হয়নি! প্রাক-প্রাথমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাক্রম পূর্ণ করা হলে তাকে যথাক্রমে প্রথম শ্রেণি ও দশম শ্রেণির সঙ্গে যৌক্তিকভাবে মেলানো কষ্টসাধ্য, এমনকি অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
যুগান্তরে প্রকাশিত আগের দুটি লেখায় (২১ মার্চ ও ১৭ এপ্রিল) আমি জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখায় কিছু সীমাবদ্ধতা, ত্রুটি ও সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলাম। সে সমস্যাগুলোর সমাধান না করেই, সেগুলো জিইয়ে রেখে এত উচ্চক্ষমতার কমিটি কীভাবে এটি অনুমোদন করল বুঝতে পারছি না। তাই যে সমস্যাগুলোর সমাধান না করে বর্তমান শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুসরণে পূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করে, সে অনুসারে পাঠ্যপুস্তক রচনা করে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে এগিয়ে গেলে শিক্ষা তথা জাতির কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন মাঝপথে থমকে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে, শুধু সেগুলো এখানে পুনর্ব্যক্ত করতে বাধ্য হচ্ছি।
১. অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের ফুলঝুরি
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখায় ঝাঁকুনি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, রূপরেখার লেখকরা অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন (Experiential
Learning) নামে একটি নতুন ধারণার আওতায় শিশু-কিশোরদের শিক্ষাক্রম উন্নয়ন করছেন। আসলে এক্সপেরিয়েনশিয়াল লার্নিং-এর মূল বিষয় ‘করে শেখা’র (Learning by doing) কথা প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে অ্যারিস্টটল বলে গেছেন। সক্রিয় শিখনের (Active Learning) কথা উববিু, Piajet-সহ অনেক শিক্ষাবিজ্ঞানী বলে গেছেন। ড্যাভিড কোব ১৯৮৪ সালে একই ধারণাকে একটি চক্রে রূপ দিয়েছেন। এরূপ স্ট্যাটিক চক্র অনুসারে শিখন ভালো হয় কি না, তা নিয়ে Seaman (2008) IBergsteiner et al (2010)-সহ অনেক শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী প্রশ্ন তুলেছেন। ড্যাভিড কোব এটি উদ্ভাবন করেননি; বরং বিংশ শতাব্দীর অন্যান্য শিক্ষাবিদের ধারণা আবিষ্কার করেছেন মাত্র। আরও উল্লেখ্য, তিনি এটি করেছেন প্রধানত বয়স্ক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য, শিশু-কিশোরদের শিক্ষার জন্য নয়।
ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক (২ জুন যুগান্তরে প্রকাশিত) পরিমার্জনাধীন শিক্ষাক্রমের পাইলটিংয়ে সৃজনশীলতা চর্চার প্রশংসা করেছেন। এটি অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনপদ্ধতির জাদুর কাঠির অবদান নয়। বাংলাদেশ শিক্ষাক্রমের চতুর্থ আবর্তনে (২০১১-১২) সব বিষয়েই দলীয় কাজ এবং অধিকাংশ বিষয়ে অনুসন্ধানমূলক কাজের ব্যবস্থা রাখা আছে। এখন পাইলটিংয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের মাধ্যমে কিছু পরীক্ষাধীন বিদ্যালয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। সারা দেশে সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে সৃজনশীলতা চর্চার চেষ্টা করা যায়; তবে ৬০, ৭০, ৮০ জন শিক্ষার্থীর গিজগিজ করা একেক ক্লাসে সেটা কতটা সম্ভব হবে, চালু হলেই বোঝা যাবে!
উল্লেখ্য, শিক্ষাক্রম জাতীয়ভাবে তৈরি করার শুরু থেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষানির্ভর প্রকৃতিবিজ্ঞান শিক্ষায় অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের জন্য শিক্ষাক্রম ও শিখনের কিছু অংশ ব্যাবহারিক কাজ, অনুসন্ধান, নির্ধারিত কাজ ইত্যাদি হিসাবে শিক্ষার্থীদের করানো হয়ে আসছে। মাস্টার্স ও তদূর্ধ্ব কোর্সে গবেষণা করে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির সুযোগও রয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, সংগীত ইত্যাদিতে এ ধারার শিখনের প্রাধান্য থাকে।
কিন্তু বিশ্বের কোথাও সাধারণ শিক্ষার পুরো কোর্স এমন অভিজ্ঞতাভিত্তিক করা হয় না; কারণ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আগের লোকদের সৃষ্ট গ্রন্থে, জার্নালে লিপিবদ্ধ এবং ইদানীং ইন্টারনেটে প্রকাশিত বিশাল জ্ঞানভান্ডারের আস্বাদ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি। সবার সবকিছু করে শেখার দরকারই পড়ে না। সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষাধারায় প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকে পুরো কোর্স অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মাধ্যমে চালানোর চেষ্টা করার কোনোই প্রয়োজন নেই; এ ‘অপচেষ্টা’ শিক্ষার্থীদের বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারের সঙ্গে পরিচয় করায় বিঘ্ন সৃষ্টি করবে মাত্র।
২. নবম-দশম শ্রেণিতে ‘একমুখী’/সমন্বিত শিক্ষা?
পাকিস্তান আমলে শরিফ শিক্ষা কমিশনের (১৯৫৯) আওতায় এবং ১৯৬০ সালের শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে এদেশে শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরের মাঝখানের নবম-দশম শ্রেণির উপস্তরে সমন্বিত/একমুখী শিক্ষার পরিবর্তে শাখাভিত্তিক শিক্ষা এবং ম্যাট্রিকুলেশনের পরিবর্তে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা চালু করা হয়। শাখাভিত্তিক শিক্ষা তখনকার ইন্টারমিডিয়েট স্তরের দুই শ্রেণি নিচ থেকে শুরু হওয়ায় তা ব্রিটেন ও আমেরিকার ‘ও লেভেল’-এর সমতুল হয়। এতে ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যবধান কমে আসে।
বিষয়টি না বুঝে শাখাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি প্রচলনের তিন দশক ও চার দশক পর দুবার নবম-দশম শ্রেণিতে সমন্বিত শিক্ষা প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল। দুবারই বুমেরাং হয়েছে। প্রথম চেষ্টা করা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে, জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনকালেও তা ছয় মাসের বেশি টেকেনি; শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শাখাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। আবার ২০০৩-২০০৪ সালে ‘নবম শ্রেণির কচি শিক্ষার্থীরা শাখা নির্বাচনের যোগ্যতা অর্জন না করার’ ধুয়া তুলে এ উপস্তরের শিক্ষাকে একমুখী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেটাও ভেস্তে গেছে। পরিণামে মাধ্যমিক শিক্ষা খাত মানোন্নয়ন প্রকল্প দুর্নাম কুড়িয়েছে, আর জাতিকে অহেতুক বিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা বইতে হয়েছে।
শাখাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি প্রচলনের ৬০ বছর পর এখন বলা হচ্ছে-বিশ্বের ৪০টি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা করে নাকি এ উপস্তরের শিক্ষাকে একমুখী করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু ওই ৪০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। আমি ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা খাত মানোন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জাশিপাবোর বিশেষজ্ঞ হিসাবে তখনকার সদস্য-শিক্ষাক্রমের নির্দেশে ১৪টি বিভিন্ন দেশের উপাত্ত সংগ্রহ করেছিলাম এবং পরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরও ১৬৮টি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উপাত্ত নিয়ে (মোট ১৮২টি দেশের) দেখেছি। কথা সত্য, অধিকাংশ উন্নত দেশে এ উপস্তরে ‘ঘোষিত শাখা’ থাকে না; কিন্তু বিষয় নির্বাচনের খোলা সুযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে শাখাবিন্যাস স্পষ্ট করে তোলে।
তাতে উচ্চমাধ্যমিক উপস্তর ও উচ্চশিক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষার মজবুত ভিত তৈরি হয়ে যায় নবম-দশম শ্রেণিতেই। এবারের পরিকল্পনায় নবম-দশম শ্রেণিতে বাস্তবিক এক পত্রের বিজ্ঞান/মানবিকের সরু ভিত্তি নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক উপস্তরে গিয়ে ছয়টি পত্রের ব্যবস্থা শিক্ষাক্রমের সমকেন্দ্রিক ধীর কলেবর বৃদ্ধির নীতি লঙ্ঘন করবে এবং শিক্ষার্থীরা এ হঠাৎ ছয়গুণ কলেবরের পড়া নিয়ে হিমশিম খাবে। সুতরাং বর্তমান বিশেষায়নের যুগে সবাইকে জোরপূর্বক সবকিছু শিখিয়ে ‘হরফুন মওলা’ বানানোর চেষ্টা ত্যাগ করা জরুরি।
৩. প্রমাণ পরীক্ষার চেয়ে মনগড়া নম্বর প্রদানের প্রাধান্য!
শিক্ষাক্রম রূপরেখার সবচেয়ে দুর্বল এবং অসাধ্য পরিকল্পনা করা হয়েছে মূল্যায়ন বিষয়ে। শিক্ষক/অভিভাবক/বন্ধুদের দিয়ে শিখনকালীন (Formative, Continuous) মূল্যায়ন প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ১০০ শতাংশ, চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৬০ শতাংশ, নবম-দশম শ্রেণিতে ৫০ শতাংশ, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ। আমরা জানি, শিক্ষার সব উদ্দেশ্য/যোগ্যতা/ শিখনফল মূল্যায়ন করতে হলে শিখনকালীন মূল্যায়নের হার অবশ্যই বাড়াতে হবে।
কিন্তু দেশের সামাজিক বাস্তবতা তো বুঝতে হবে! ২০০৩-২০০৮ সালে সেসিপের আওতায় স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন শীর্ষক ২০-৩০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন পদ্ধতিও বাস্তবায়ন করা যায়নি। কারণ, শিক্ষকের হাতে বেশি নম্বর প্রাইভেট পড়া শুধু উৎসাহিত নয়, আবশ্যিক করে তোলে। তাছাড়া স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও কলেজ গভর্নিং বডির হস্তক্ষেপে শিখনকালীন মূল্যায়ন নম্বর প্রদানের হিড়িকে পরিণত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
তাই প্রমাণ লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্র যতই সরু হোক, এর শতকরা হার যৌক্তিকভাবে বাড়াতে (সব ক্ষেত্রে অন্তত ৬০ শতাংশ) হবে; নইলে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় ধস নেমে তা পুরো ব্যবস্থাটিকেই বিকল করে দিতে পারে। আর স্বাস্থ্য শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি যেসব Non-scholastic বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেগুলো শিক্ষার্থীরা পড়বে না; একসময় শিক্ষকরাও পড়ানো বাদ দেবেন। মনে রাখতে হবে, এ প্রজন্মের শিশু-কিশোররা জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি এবং শিক্ষাক্রম উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের চেয়েও মেধাবী ও বুদ্ধিমান। তারা সনদভিত্তিক পাবলিক পরীক্ষা এবং মনগড়া নম্বর প্রদানের ঠুনকো ব্যবস্থার পার্থক্য ভালোই বোঝে!
৪. শুধু দশম শ্রেণির কোর্সে মাধ্যমিক, একাদশ ও দ্বাদশে দুটো পৃথক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা?
নবম শ্রেণির কোর্সকে মাধ্যমিক পাবলিক পরীক্ষার বাইরে রাখার কোনো যুক্তি পেশ করা হয়নি। এ প্রজন্মের নবম-দশম শ্রেণির কিশোর শিক্ষার্থীরা যখন জানবে নবম শ্রেণির কোর্স সনদভিত্তিক পাবলিক পরীক্ষার বাইরে, তখন তারা নবম শ্রেণির কোর্স বাদ দিয়ে অগ্রিম দশম শ্রেণির পড়া নিয়ে ব্যস্ত হবে; এমনকি শিক্ষকরাও সেদিকে ইঙ্গিত করবেন। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পৃথক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নিতে গেলে কোর্সের পাঠাভ্যাসের সময় কমে যাবে; এতে হিতে বিপরীত হবে। দুবছরের কোর্সের বোঝা মাথায় রাখা থেকে মুক্তি দেওয়ার যুক্তি অসার; কারণ, সৃজনশীলতা ও উচ্চতর দক্ষতার দাবিদার শিক্ষাক্রমের আওতায় প্রধানত মুখস্থনির্ভর পরীক্ষার ব্যবস্থা অকল্পনীয়।
ড. আবদুস সাত্তার মোল্লা : শিক্ষাক্রম গবেষক; অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা)
asmolla@ymail.com