
প্রিন্ট: ০১ মে ২০২৫, ১১:০০ এএম
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করাই হয়েছিল শাপে বর

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
এটি সর্বজনবিদিত যে, বাংলাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল উত্তাল ঘটনাপঞ্জিতে পরিপূর্ণ। ১৯৭০ সালের ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর যথাক্রমে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও পাঁচটি প্রদেশে প্রাদেশিক পরিষদের উভয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক ও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক এবং ভুট্টোর দলের কূট অপকৌশলের নগ্ন ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করে। কিন্তু ১ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসকের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা এবং গভীর রাতে সামরিক আইন পরিচালক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের সংহতি বা সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি খবর-মতামত-চিত্র প্রকাশের ব্যাপারে সংবাদপত্রগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ১১০ নং সামরিক আইন জারি বাংলায় অবিস্মরণীয় এক দ্রোহী রূপ পরিগ্রহ করে।
অধিবেশন বন্ধের আকস্মিক ঘোষণায় বাংলার সর্বস্তরের জনতা প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ বাঙালি এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১ মার্চ থেকে সারা দেশে চলমান ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও উত্তাল মিছিল-স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তুলে।
বাঙালি জাতির পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ধারণ করে সংবাদ সম্মেলনে জনগণের মুক্তির ডাক দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এটি পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আমরা বাঙালিরা ঘৃণাভরে এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলাম এবং ২ মার্চ ঢাকা ও ৩ মার্চ দেশব্যাপী বাংলার সাধারণ মানুষ হরতাল পালন করবে। পরবর্তী দিকনির্দেশনার জন্য আপনারা ৭ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’ ২ মার্চ হরতাল, মিছিল ও কারফিউর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ছাত্র সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
একই দিন বঙ্গবন্ধু সন্ধ্যায় প্রেস কনফারেন্সে বারবার ‘বাংলাদেশ’ উচ্চারণ করেন। হরতাল চলাকালীন সামরিক জান্তার হিংস্র বাহিনীর গুলিতে তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুলের ছাত্র আজিজ মোর্শেদ ও মামুনসহ ৫০ জনের মতো গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি হন। সামরিক আইন প্রশাসক ওইদিন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু নিরস্ত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন এবং পরদিন ৩-৬ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেন।
৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে-আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দিবেন। যে কোনো মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে-অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
ওই দিন রাতে বঙ্গবন্ধু তার ঘোষণায় বলেন, ‘২৩ বছর ধরে রক্ত দিয়ে আসছি। প্রয়োজনে আবার বুকের রক্ত দেব। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে বীর শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।’ ৪ মার্চ ১৯৭১ গণবিক্ষোভে এক দফার দাবি অর্থাৎ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় সামরিক জান্তার সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ওইদিন খুলনায় বাঙালি অবাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং লাগাতার হরতালে কার্যত ঢাকাসহ সারা দেশ অচল হয়ে পড়ে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য স্বাধীনতার স্লোগান উচ্চারিত হলো, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন এবং গঠিত হলো স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
উল্লেখ্য, এ দিন রেডিও পাকিস্তান ঢাকার নাম পরিবর্তন করে ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ নামকরণের ঘটনা চলমান আন্দোলনকে বেগবান করে মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। ৬ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোনে জানান যে, ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
পরিস্থিতির চাপে ভীতসন্ত্রস্ত পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক সদর দপ্তর থেকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতাদের এ বার্তা দেওয়া হয় যে, ৭ মার্চ যেন কোনোভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণা না করা হয়। মেজর সিদ্দিক সালিক রচিত গ্রন্থসূত্রে জানা যায়, ‘পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি ৭ মার্চের জনসভার প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ নেতাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পাকিস্তানের সংহতির বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা হলে তা শক্তভাবে মোকাবিলা করা হবে।
বাঙালি বিশ্বাসঘাতকদের হত্যার জন্য ট্যাংক, কামান, মেশিনগান সবই প্রস্তুত রাখা হবে। প্রয়োজন হলে ঢাকাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। শাসন করার জন্য কেউ বা শাসিত হওয়ার জন্যও কিছু থাকবে না।’ মার্চের দিনপঞ্জির অনুক্রমিক আন্দোলনের অনিবার্য পরিণতি হিসাবে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ তার ভাষণে বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ৮ মার্চ ছাত্রনেতারা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলার বর্তমান মুক্তি আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ ঘোষণা করিয়া স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক জনসভায় যে প্রত্যক্ষ কর্মসূচি ঘোষণা করিয়াছেন, আমরা উহার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করিয়া স্বাধীনতার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপাইয়া পড়িবার জন্য বাংলার সংগ্রামী জনতার প্রতি আহ্বান জানাইতেছি এবং বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত সকল নির্দেশকে যথাযথ কার্যকরী করিবার জন্য সমগ্র দেশবাসীকে বিনা দ্বিধায় বাস্তবায়িত করিবার আহ্বান জানাইতেছি এবং কোনো মহল এই কর্মসূচির অন্তরায় সৃষ্টি করিলে তাহাকে অবশ্যই প্রতিহত করিবার জন্য আবেদন জানাইতেছি।’
এদিন সরকারি কর্মচারীরা জীবনের বিনিময়ে হলেও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকা বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সব অনুষ্ঠান হবে বর্তমান গণআন্দোলনের অনুকূলে। এমনকি বেতারকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রিলে করার শর্তে কাজে যোগদান করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী সব সরকারি অফিস কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ৬ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগপ্রাপ্ত টিক্কা খানকে মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটির সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি পরিবর্তন করে ৯ মার্চ সামরিক শাসন পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওইদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভায় ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন এবং অন্য প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধুকে ‘বাংলাদেশে জাতীয় সরকার’ গঠনের জন্য অনুরোধ করা হয়। পল্টনের জনসভায় মওলানা ভাসানীও ২৫ মার্চের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আন্দোলন করার ঘোষণা দেন।
১০ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদের যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিককে স্বাধীনতা সংগ্রামে নিয়োজিত প্রতিটি মুক্তিসেনাকে সব ধরনের সাহায্য করার অনুরোধ জানানো এবং পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের আসতে না দিলে বিমানবন্দরে চেকপোস্ট বসিয়ে অবাঙালিকে দেশত্যাগ করতে না দেওয়ার হুমকি প্রদান করা হয়। ১১ মার্চ ভুট্টো ঢাকায় আসতে রাজি আছে মর্মে বঙ্গবন্ধুর কাছে তারবার্তা পাঠায়।
১২ মার্চ কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে সারা আলীর তোপখানা রোডের বাসায় অনুষ্ঠিত মহিলা পরিষদের সভায় পাড়ায় পাড়ায় মহিলা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানানো হয়। একই দিন লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্তি প্রয়োগ নিষ্ফল ও বিপজ্জনক হবে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলপ্রয়োগ করতে ইচ্ছুক। পরের দিন সামরিক কর্তৃপক্ষের ১১৫নং মার্শাল ল’ আদেশ জারি করে সব বেসামরিক কর্মচারী, যাদের বেতন প্রতিরক্ষা খাত থেকে দেওয়া হয়, তাদের ১৫ মার্চ সকালে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় চাকরি থেকে বরখাস্তের হুমকি দেয়, যেটিকে বঙ্গবন্ধু উসকানিমূলক বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি জনগণের সার্বিক স্বাধীনতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অসহযোগ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলার অসহযোগ আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পশ্চিমা শিল্পপতিরা ১৪ মার্চ সামরিক সরকারের প্রতি স্মারকলিপি প্রদান করে বঙ্গবন্ধুর চার দফা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানায়।
১৫ মার্চ ইয়াহিয়া গোপন সফরসূচিতে ঢাকায় আসে। ১৬ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। ওই দিন জামালপুরে হাজার হাজার লোক লাঠি ও নানা রকম দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল করে। ১৭ মার্চে দ্বিতীয় দফা বৈঠক সম্পন্ন হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এবং জনগণকে ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। এই দিনে গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগ কর্তৃক বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন-এই তদন্ত কমিশন চাই নাই।
সেই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে এ তদন্ত কমিশনের সঙ্গে কোনো সহযোগিতা না করতে আহ্বান জানিয়েছেন। ১৯ মার্চেও মুজিব-ইয়াহিয়া তৃতীয় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৯০ মিনিটের এ বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া ছাড়া অন্য কেউ উপস্থিত ছিল না। ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ সেদিন বলেছিলেন, ‘মুজিবকে সমর্থন দেওয়া গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিশ্ববাসীর অবশ্য কর্তব্য। গান্ধীজির পর শেখ মুজিবুর রহমানই এতখানি বিশাল আয়তনে অহিংস শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা লাভ করিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান যেরূপ সাফল্যের সহিত জনসাধারণকে সর্বাত্মক ঐক্যে তাহার পশ্চাতে কাতারবদ্ধ করিতে সক্ষম হইয়াছেন, সমগ্র ইতিহাসে অন্য কোনো নেতার জীবনে এরূপ দৃষ্টান্ত খুঁজিয়া বাহির করা খুবই দুষ্কর।’
২০ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া চতুর্থ দফা বৈঠকে আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি অনুমিত হলেও বঙ্গবন্ধু আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। ২১ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চে প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচি প্রদান ও ২২ মার্চ পত্রিকায় পরিকল্পিত বাংলাদেশের পতাকার মাপ ও বিবরণ প্রকাশ করে। ২৩ মার্চ দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ভবনগুলোয়, বাড়িতে, গাড়িতে কালো পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকা বিমানবন্দর ভবন, প্রেসিডেন্ট ভবন ও লাটভবন ছাড়া অন্য কোথাও পাকিস্তানের পতাকা নজরে আসেনি। ওইদিন বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’ বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন। ২৪ মার্চে অনুষ্ঠিত পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের বৈঠকেও বঙ্গবন্ধু কোনো ধরনের নতিস্বীকার না করার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন। নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের কদর্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাকিস্তান সামরিক জান্তা বাংলাকে পরিপূর্ণ বিধ্বস্ত করার লক্ষ্যে ২৫ মার্চ বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। এর আগেই দৃঢ়চেতা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনাসংবলিত ইশতেহার প্রকাশ পায়। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের সামরিক সরকার ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের যুগান্তকারী প্রেক্ষাপট নির্মাণ করে।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : শিক্ষাবিদ; সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়