সর্বস্তরে বাংলা : আর কত অপেক্ষা?
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফেব্রুয়ারি। মাতৃভাষা বাংলাকে যথার্থ মর্যাদাদানে বিপুল রক্তের সমাহারে বিসর্জন-অর্জনের শোকাবহ-গৌরবোজ্জ্বল মাস। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষা নিয়ে এমন রক্তঝরা অন্দোলন আর কোথাও হয়নি। ফেব্রুয়ারির আগমনে বাঙালি জাতি চেতনার নতুন স্পন্দনে জাগ্রত হয়ে অশুভ শক্তির বিনাশে কঠিন ব্রত গ্রহণ করে থাকে।
এ মাসে সর্বক্ষেত্রে বাংলাকে প্রকৃত অর্থেই প্রচলিত করার উদ্দেশ্যে নানামুখী অঙ্গীকার আমরা শ্রবণ করে থাকি। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্লেষণ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ‘বাংলা ভাষা প্রচলন উদ্যোগ’ নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান জানিয়ে নামফলকের উপরে ৬০ ভাগ বাংলা ও নিচে ৪০ ভাগ অন্য যে কোনো ভাষা ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে। এ ধরনের বাংলা ভাষার প্রচলন কাসুন্দি আর কতদিন পর্যালোচনার বিষয় হবে-এটাই দেশবাসীর প্রশ্ন।
এটি সর্বজনবিদিত যে, ভাষাভিত্তিক জাতি হিসাবে বাঙালির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে হাজার বছরের বহু আগে। ইংরেজি, ফরাসি বা জার্মান ভাষার মতো বাংলা ভাষার ইতিহাস প্রায় দশম শতক থেকেই ঐতিহ্যমণ্ডিত। মূলত মানব সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদান সৃষ্টির পটভূমিতে রয়েছে অবস্তুগত জ্ঞান-বিজ্ঞানেরই ধ্যানধারণা। অবস্তুগত সংস্কৃতির প্রধান উপকরণ হিসাবে ভাষা মানুষের মনোজগতের ভাব-কল্পনা, সাহিত্য-শিল্পকলা ইত্যাকার অপার্থিব ঐতিহ্যের ধারক-বাহকরূপে চিহ্নিত হয়েছে।
যেহেতু অন্য কোনো প্রাণীর ভাষা নেই, তাই তাদের সংস্কৃতিও নেই। একমাত্র ভাষার কারণে মানুষ সংস্কৃতিমান হতে পেরেছে। বিজ্ঞজনের মতানুসারে, এ উপমহাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষা বাংলা এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় আসীন করার লক্ষ্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এ উপমহাদেশে দ্বিতীয় নবজাগৃতির সূচনা করেছে।
বাঙালি জাতির মাতৃভাষা বাংলা। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বিশাল আত্মত্যাগের মহিমা শুধু বাঙালি জাতির নয়, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে গ্রহণ করে সমগ্র বিশ্ব আজ গৌরবদীপ্ত হয়েছে। খ্যাতিমান ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতানুসারে-৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে এর প্রকাশকালকে যদি চিহ্নিত করা হয়, তাহলে এ ভাষার সমৃদ্ধির ইতিহাস প্রায় চৌদ্দ শ বছর। বাঙালি জাতির জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ, বিকাশ ও প্রসারে এ ভাষার অবদান শুধু ঐতিহ্যমণ্ডিত নয়, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে জাতিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ ভাষার অবদান এক অসাধারণ চেতনায় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে দীর্ঘ সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ঋদ্ধ প্রাণশক্তিতে পরিপুষ্ট হয়ে মাতৃভাষা বাংলা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শক্ত ভিত হিসাবে বিবেচিত। একুশের চেতনায় ভাস্বর মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক নীতিগুলো তথা জাতিসত্তার সংবিধানসম্মত প্রধান চার স্তম্ভ-জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে জাতি তাদের সামগ্রিক আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির সনদ হিসাবে গ্রহণ করেছে।
মাতৃভাষা বাংলাকে প্রায়োগিক অর্থে যথাযথ মূল্যায়ন না করে এবং সর্বত্র এর বিকাশমানতাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি অথবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে আমাদের তৎপরতা কোনোভাবেই জাতির সামষ্টিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে না। মাতৃভাষার মাধ্যমে সব স্তরে এবং সব জনপদে শিক্ষাকে যদি কার্যকরভাবে জনপ্রিয় করা না যায়, তাহলে শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং এর প্রাসঙ্গিক উন্নয়ন নিয়ামকগুলোর তুলনামূলক প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
বাংলা ভাষাকে অবহেলা করার যে প্রবণতা, তা যে শুধু ব্রিটিশ শাসিত ঔপনিবেশিক এবং পাকিস্তান শাসিত অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক যুগে সম্প্রসারিত হয়েছিল তা নয়। এর বহু আগে থেকে, বিশেষ করে তুর্কি শাসনের সময় থেকেই বাংলা ভাষার প্রতি বিরূপ ধারণা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। সেজন্য মধ্যযুগে বাংলা ভাষার মর্যাদাকে স্ব-শাসনে প্রতিষ্ঠাকল্পে কবি আব্দুল হাকিম তার ‘বঙ্গবাণী’ শীর্ষক এক কবিতায় লিখেছেন-‘সে সবে বঙ্গেত জম্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’।
এটি যে শুধু একটি ব্যঙ্গার্থক কথোপকথন বা কোনো রচনার পঙ্ক্তি ছিল তা নয়, এটি ছিল এই অপশাসন এবং বাংলা ভাষা অবমূল্যায়নের বিরুদ্ধে বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ, যন্ত্রণা ও প্রতিবাদের দ্রোহী প্রকাশ। ‘আমার ধ্যানের ভারত’ শীর্ষক রচনায় ভারতের জাতির পিতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (মহাত্মা গান্ধী) বলেছেন-‘মাতৃভাষাকে স্থানচ্যুত করার পদ্ধতিকে ইংরেজদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ইতিহাসের একটি দুঃখজনক অধ্যায় বলে বর্ণনা করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, রামমোহন রায় আরও বড় সংস্কারক এবং লোকমান্য তিলক আরও বড় পণ্ডিত হতে পারতেন, যদি তারা তাদের চিন্তাধারাকে ইংরেজিতে প্রকাশ না করে তাদের মাতৃভাষায় তার প্রকাশ ঘটাতেন। অবশ্যই এসব গুণী ব্যক্তি ইংরেজি সাহিত্যের সমৃদ্ধ রত্নভান্ডারের জ্ঞান দ্বারা উপকৃত হয়েছিলেন। নিজেদের মাতৃভাষার মাধ্যমে না হওয়াতে এ জ্ঞান অর্জন কতটুকু জনগণের উপকারে এসেছে তা প্রশ্নের দাবি রাখে।
মাতৃভাষায় চিন্তা, মত প্রকাশ এবং সামগ্রিক অর্থে জ্ঞান অর্জনের যে ধারা, তা বিশ্বের শীর্ষ উন্নত দেশগুলো তথা চীন, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি ইত্যাদির উন্নয়নের সফল ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি সবার জানা যে, ভারত বিভক্তির পর এই পূর্ব অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক মুক্তির স্বপ্ননির্ভর রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানের অভ্যুদয়।
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনেও মুসলিম জাতি হিসাবে এ অঞ্চলের মানুষের সম্ভাব্য মুক্তির প্রেরণা বিপুলভাবে কার্যকর ছিল। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম পরিহাস, পাকিস্তান নামক নতুন রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠীর অধিকাংশই ছিল পশ্চিম অঞ্চলের সামন্ত প্রভু এবং ঔপনিবেশিক শোষণ প্রক্রিয়ার ধারণায় লালিত সামরিক-বেসামরিক আমলাদের প্রতিনিধি।
ফলে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠী আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে অধিকতর বঞ্চিত ও নিপীড়নের কঠিন শৃঙ্খলে নতুন মাত্রায় পুনর্বাসিত হয়। সংগত কারণেই শোষণ-বঞ্চনা-নির্যাতন, রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, জাতিগত নিপীড়ন, দস্যুবৃত্তি ও সম্পদ লুণ্ঠন এ অঞ্চলের মানুষকে জোরালোভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ শক্তিতে উজ্জীবিত করে তোলে। মূলত পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর পরিকল্পনা ছিল বাঙালি সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষার মূলে আঘাত করে এ অঞ্চলের সংস্কৃতিকে তাদের অধীনস্থ এবং ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে সরকারি, অন্যান্য পেশা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধার অচলায়তন সৃষ্টি করা।
এ প্রসঙ্গে দার্শনিক হেগেলের সংগ্রাম, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ যুদ্ধের যৌক্তিকতা প্রণিধানযোগ্য। হেগেল কখনো বল প্রয়োগের জন্য যুদ্ধকে সমর্থন করেননি বরং শান্তি-শৃঙ্খলা, শোষণ-বঞ্চনার ফলে সৃষ্ট বিপর্যস্ত পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য যুদ্ধ বা বল প্রয়োগকে সমর্থন করেন। এটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক যে, বাঙালি জাতির ভাষা আন্দোলন এবং এর ফলে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের বীজ পরবর্তীকালে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের এগারো দফা ও গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন প্রভৃতি ঘটনাপ্রবাহে বিকশিত হয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে শক্তি জোগায়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পরিপূর্ণ রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলা অভিষিক্ত হলেও এখনো আমরা দেখতে পাই, সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারে কার্যকর ব্যবস্থা প্রবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এবং বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭ বাস্তবায়নে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, বাংলা ভাষা আইন সর্বত্র অনুসরণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ওই আইনের ৪ ধারা অনুসারে প্রয়োজনীয় বিধি জারি করার নির্দেশ দেওয়া হবে না, এই মর্মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সাতজনকে বিবাদী করে হাইকোর্টের রুল দেওয়ার নজিরও সৃষ্টি হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ইংরেজিতে থাকা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপন, গাড়ির নম্বর প্লেট, সব ধরনের সাইনবোর্ড ও নামফলক বাংলায় লেখার অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়েছেন। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরের অন্যান্য কলেজ, মুদ্রা, স্ট্যাম্প এবং নৌবাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষাসহ সরকারি সব কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেমন ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছিল, উল্লিখিত রিট আবেদন আমাদের নতুন করে সেই চেতনাকে জাগ্রত করেছে।
‘একুশ মানেই মাথা নত না করা’-মাতৃভাষা আন্দোলনের এই অপ্রতিরোধ্য চেতনা এখনো কতটুকু জোরালোভাবে সঞ্চারিত হচ্ছে, রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা আরও স্পষ্ট হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি, ধ্যানধারণা, মূল্যবোধ, শিল্প-সাহিত্য প্রভৃতির অপরিসীম উন্নয়ন মাতৃভাষা বাংলাকে ঘিরে এবং এর যথাযথ মর্যাদা এবং সর্বক্ষেত্রে এর সামগ্রিক প্রচলন যতটুকু হওয়ার কথা ছিল, তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি বলেই আমাদের এখনো আদালতের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। বাঙালি জাতির জন্য এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে!
সংস্কৃতির বিশ্বায়ন আমাদের এমন এক লুম্পেন সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মোড়কে আচ্ছাদিত করে ফেলেছে, যা প্রতিনিয়ত আমাদের ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে। এই উপলব্ধি থেকেইে হয়তো মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘আমি আমার ঘরটিকে চারদিকে প্রাচীরবেষ্টিত এবং আমার জানালাগুলো বন্ধ রাখতে চাই না।
আমি চাই সব দেশের সংস্কৃতি আমার ঘরের চারপাশে যত ইচ্ছা স্বাধীনভাবে এসে ভিড় করুক। কিন্তু তার কোনোটি আমাকে স্থানচ্যুত করবে, সেটি আমি হতে দেব না।’ জাতিসংঘ ঘোষিত বর্ণনায় উঠে এসেছে-‘স্থান, কাল ও সীমান্তের সংকোচন থেকে একটি বৈশ্বিক গ্রাম সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু প্রত্যেকের পক্ষে এর নাগরিক হওয়া সম্ভব হয় না...বিশ্বায়ন কিছু মানুষের জন্য অভূতপূর্ব মানবিক অগ্রগতির সুযোগসমূহ প্রসারিত করে, কিন্তু অন্যদের জন্য সেসব সুযোগ সংকুচিত করে দেয় এবং মানব নিরাপত্তার অবক্ষয় ঘটায়।’
সংস্কৃতির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা-প্রশিক্ষণ-জাতিগত ঐতিহ্যিক অনুশীলন-ভাষার গুণগত চর্চা প্রভৃতি বাংলা ভাষাকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। ‘বাংলিশ’ অর্থাৎ বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে সংবাদ পরিবেশন, বিনোদন কর্মকাণ্ড উপস্থাপন, বিজ্ঞাপনযন্ত্রে অতিমাত্রায় অনর্থক প্রযুক্তির ব্যবহার, আবৃত্তি, নৃত্যকলা, নাটক, ছায়াছবি প্রভৃতিতে এমন এক অপসংস্কৃতির ধারার বিকাশ ঘটাচ্ছে। টেলিভিশন ও বেতারনির্ভর এসব কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বাংলা ভাষাভিত্তিক একটি উন্নত জাতির ভবিষ্যৎকে সত্য, সুন্দর, কল্যাণ ও আনন্দের পথে এগোতে দেবে না-এটি অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপনের নান্দনিক আয়োজন অতিক্রান্তে জাতি সফল ও সার্থকভাবে বাংলা ভাষার প্রচলন ও প্রয়োগ প্রত্যাশা করে।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : শিক্ষাবিদ; সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়