বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং ও বাস্তবতা
ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ইতালিতে অবস্থিত বোলগ্না বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো। চলমান শিক্ষা কার্যক্রম অনুযায়ী ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১০৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালটিতে প্রায় ৮৭ হাজার ৭৬০ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৬৪ হাজার ছাত্র রয়েছে।
বর্তমানে কিউএস (কোয়াককোয়ারেলি সিমন্ডস) ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ১৬৬তম। প্রতিষ্ঠাকাল অনুযায়ী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের দ্বিতীয় পুরোনো। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১০৯৬ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের প্রায় ২৮ জন প্রধানমন্ত্রী ও ৫০ জনের বেশি নোবেল বিজয়ী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের অবস্থান তৃতীয়, যা ১২০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে প্রায় ২৮ হাজারের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ওই সংখ্যার প্রায় ৪ হাজারের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে।
ছাত্র এনরোলমেন্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম; যেখানে প্রায় ২০ লাখের বেশি ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। ২০২০ সালের ডেটা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৯৭টি অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, সাপোর্টিং স্টাফ ও প্রতিষ্ঠার সন যাই হোক না কেন, র্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অর্জন করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিংয়ে কিউএস, টাইমস হাইয়ার এডুকেশন ও সাংহাইভিত্তিক একাডেমিক র্যাংকিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর র্যাংকিং পদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক গুণাগুণ নির্ণয়ে অনেকটা মিল রয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ওইসব প্রতিষ্ঠানের র্যাংকিংয়ের ওপর ভিত্তি করে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু ইনডিকেটরের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিং করে থাকে।
২০২১ সালে কিউএস র্যাংকিংয়ে একাডেমিক রেপুটেশন, এমপ্লয়ার রেপুটেশন, ছাত্র শিক্ষকের অনুপাত, ফ্যাকাল্টির মোট অর্জিত সাইটেশন, আন্তর্জাতিক ফ্যাকাল্টি ও ছাত্রের অনুপাত ব্যবহৃত হয়েছে। যা হোক, ওই র্যাংকিংয়ে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর মধ্যে একাডেমিক রেপুটেশনে ৪০ শতাংশ নম্বর রয়েছে।
কিউএস র্যাংকিংয়ে একাডেমিক রেপুটেশন যাচাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিদ্যমান পাঠদান ও গবেষণার গুণাগুণ সম্পর্কে বিশ্বের প্রায় ১ লাখের বেশি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত নেওয়া হয়। একাডেমিক কমিউনিটিতে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও অতুলনীয় জরিপ। এমপ্লয়ার রেপুটেশনে ১০ শতাংশ নম্বর রয়েছে। ওই জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনামূলক সক্ষমতা, উদ্ভাবন ও স্নাতকদের কার্যক্ষমতা সম্পর্কে প্রায় ৫০ হাজার রেসপন্স সংগ্রহ করা হয়।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিদ্যমান ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতের ওপর ২০ শতাংশ নম্বর রয়েছে। র্যাংকিংয়ে ব্যবহৃত ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিয়ে থাকে। যদিও পাঠদান প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান পিলার; তবুও গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ফ্যাকাল্টি মেম্বার কর্তৃক প্রকাশনায় অর্জিত সাইটেশনের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার গুণাগুণ নির্ভর করে। এ র্যাংকিংয়ে দেখা যাচ্ছে, ফ্যাকাল্টি মেম্বার কর্তৃক অর্জিত সাইটেশনে ২০ শতাংশ নম্বর রয়েছে। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ফ্যাকাল্টি মেম্বার কর্তৃক পাবলিকেশনে ৫ বছরে মোট অর্জিত সাইটেশনকেই বিবেচনায় নেওয়া হয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের বাইরে থেকে অধ্যয়নরত ছাত্র ও কর্মরত শিক্ষকের অনুপাতের ওপর ৫ শতাংশ নম্বর রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিংয়ে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত র্যাংকিং প্রতিষ্ঠান টাইমস হাইয়ার এডুকেশনেও পাঠদান, গবেষণা, সাইটেশন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম ও জ্ঞানের স্থানান্তরের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ওই র্যাংকিংয়ে, পাঠদান ও শিক্ষণের পরিবেশ, গবেষণা ভলিউম, আয় ও সুনাম, সাইটেশন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম ও উৎপন্ন জ্ঞানের স্থানান্তরে যথাক্রমে ৩০, ৩০, ৩০, ৭.৫ ও ২.৫ শতাংশ নম্বর নির্ধারিত রয়েছে।
এই র্যাংকিংয়ে পাঠদান ও শিক্ষণের পরিবেশ যাচাইয়ে রেপুটেশন, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, ব্যাচেলর ও ডক্টরেট ছাত্রের অনুপাত, একাডেমিক স্টাফদের সঙ্গে ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রাপ্তদের অনুপাত ও প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। রেপুটেশন ও প্রকাশিত আর্টিকেলের ইনডেক্সের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ওই র্যাংকিংয়ে ফ্যাকাল্টি মেম্বার কর্তৃক পাবলিকেশনে মোট অর্জিত সাইটেশনের ওপরও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, কোলাবোরেশন ও উৎপাদিত জ্ঞানের স্থানান্তরেরও গুরুত্ব অপরিসীম। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিংয়ে কিউএস ও টাইমস হাইয়ার এডুকেশনে ব্যবহৃত ইনডিকেটরগুলোর অনেকটা মিল রয়েছে।
২০২১ সালে টাইমস হাইয়ার এডুকেশনে দেখা যাচ্ছে, ‘ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড’ র্যাংকিংয়ে বিশ্বে প্রথম স্থানে অর্জন করেছে। ওই র্যাংকিংয়ে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের শীর্ষস্থান অধিকারী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৪১ শতাংশ বিদেশি ছাত্র অধ্যয়নরত রয়েছে। বিদ্যমান ছাত্রছাত্রীর অনুপাত প্রায় ৫৪:৪৬।
র্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ১০০-এর মধ্যে ৯৫ দশমিক ৬ নম্বর পেয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ৯৪ দশমিক ৯, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ৯৪ দশমিক ৮, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি ৯৪ দশমিক ৫, ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি (এমআইটি) ৯৪ দশমিক ৪ ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ ৯৪ নম্বর পেয়ে র্যাংকিংয়ে বিশ্বে যথাক্রমে ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে।
ওই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়-বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০ দশমিক ৩ থেকে ২৫ নম্বর পেয়ে যুগ্মভাবে ১০০১তম অবস্থানে রয়েছে। উল্লেখ্য, এ র্যাংকিংয়ে ১ম থেকে ১০তম পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৯০-এর বেশি নম্বর পেয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে।
২০২১ সালের কিউএস র্যাংকিংয়ে এমআইটি ১০০ নম্বর পেয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এই র্যাংকিংয়ে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ৯৮ দশমিক ৪, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ৯৭ দশমিক ৯, ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ৯৭ এবং ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড ৯৬ দশমিক ৭ নম্বর পেয়ে যথাক্রমে ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম অবস্থানে রয়েছে।
কিউএস র্যাংকিংয়েও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যুগ্মভাবে ৮০১ থেকে ১০০০তম অবস্থান অর্জন করেছে। অপরদিকে স্পেনভিত্তিক র্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সিমাগো র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষস্থানে রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে বলা যেতে পারে, কিউএস ও টাইম্স হাইয়ার এডুকেশনে ব্যবহৃত র্যাংকিং ইনডিকেটরগুলো একে অপরের সঙ্গে অনেকটা মিল থাকায় উভয় র্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় সমান নম্বর পেয়ে কাছাকাছি শীর্ষস্থানে রয়েছে। বর্তমান সরকার দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানোন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে পৌঁছানোই সরকারের লক্ষ্য। বাস্তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে কোথায় অবস্থান করছে, তা আলোচনা করা জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিংয়ে প্রথম ইনডিকেটর হলো রেপুটেশন, যা বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে যাচাই করা হয়ে থাকে। যদিও বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেপুটেশনে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন অনেকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। আবার যদি পদোন্নতি, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও শিক্ষক নিয়োগে কোনো রকম গুণাগুণের অসংগতি পরিলক্ষিত হয়, তাহলেও একাডেমিক রেপুটেশন অর্জনে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে।
আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতে যদি শিক্ষকের সংখ্যা কম হয়, তাহলে শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে বহু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে একাডেমিক শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পাঠদান ও শিক্ষণের গুণগত মানের পরিবর্তন সাধিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার বহিঃপ্রকাশ সাধারণত ইনডেক্সড জার্নালে (স্কেপাস/পাবমেড) প্রকাশিত পুস্তক/বই/আর্টিকেলের মাধ্যমে হয়। ওই প্রকাশনা কর্তৃক অর্জিত সাইটেশনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে র্যাংকিংয়ে পৌঁছতে সাহায্যে করে। সে লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের অর্জিত সাইটেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
যদি শিক্ষকদের পিএইচডি অর্জন ও পরবর্তী পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা ও কোলাবোরেশন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনায় না নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিংয়ে পৌঁছা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক ছাত্র ও শিক্ষকের অনুপাত বৃদ্ধি জরুরি। কিউএস ও টাইমস হাইয়ার এডুকেশন উভয় র্যাংকিংয়ে ওই অনুপাতের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক ছাত্র থাকলেও শিক্ষক নেই বললেই চলে। যদি আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও ছাত্রের অনুপাত বাড়ানো না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালগুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রতিনিয়ত দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন গ্রাম্য রাজনীতি বিদ্যমান না থাকে। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিউএস ও টাইমস হাইয়ার এডুকেশন র্যাংকিয়ে জায়গা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা যেতে পারে-
প্রথমত, প্রভাষক পদটি বাতিল করে সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত নিয়োগ চালুকরণ। দ্বিতীয়ত, বিদ্যমান ফ্যাকাল্টি পদে নিয়োগ পেতে হলে প্রার্থীর অবশ্যই পিএইচডি ডিগ্রিসহ কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক প্রকাশনা প্রথম অথবা করেসপন্ডিং অথার হিসাবে স্কোপাস ইনডেক্সড জার্নালে বিদ্যমান থাকতে হবে। তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোনো পদে আবেদনকৃত প্রার্থীকে অবশ্যই পিএইচডি ডিগ্রিসহ আন্তর্জাতিক মানের গবেষক হতে হবে।
চতুর্থত, বাংলাদেশি হাইকমিশনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অধ্যাপকদের প্রেষণে নিয়োগের মাধ্যমে বিদেশি ছাত্র ও শিক্ষকদের বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করা যেতে পারে। পঞ্চমত, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের পোস্ট ডক্টরাল ও কোলাবোরেটিভ গবেষণায় উৎসাহ বাড়ানো যেতে পারে। ষষ্ঠত, পৃথক উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিতকরণের বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে।
সপ্তমত, আউটকাম বেসড গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে, তাহলে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও স্থানান্তরে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। অষ্টমত, ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের প্রত্যেক টায়ারে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক প্রকাশনা স্কোপাস ইনডেক্সডে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। নবমত, এমএস ও পিএইচডি ছাত্রদের ডিগ্রি অর্জনের আগে যথাক্রমে ১টি ও ৩টি প্রকাশনা স্কোপাস ইনডেক্সড জার্নালে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা করা যেতে পারে। দশমত, দেশি ও বিদেশি বাজেট বৃদ্ধিকরণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
এগারোতম, গ্রাজুয়েটদের দেশে ও বিদেশে বিষয়ভিত্তিক চাকরির সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বারোতম, প্রকাশিত গবেষণা আর্টিকেলে অথার সংখ্যা যাই হোক, কেবল প্রথম ও করেসপন্ডিং অথররাই পদোন্নয়নের টায়ারেই ওই প্রকাশিত আর্টিকেলটি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রাখা যেতে পারে। পরিশেষে বলা যেতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা পাওয়া যদিও কঠিন, তবুও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সে সক্ষমতা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে কিউএস ও টাইমস হাইয়ার এডুকেশনে র্যাংকিং ইনডিকেটরগুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ জরুরি।
ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম : সহযোগী অধ্যাপক, এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর
mohammad.alam@wsu.edu