কূটনৈতিক সাফল্যের পঞ্চাশ বছর
ড. দেলোয়ার হোসেন
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সঙ্গে দাতা দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক পর্যায়ে সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান।
তিনি লন্ডনের সংবাদ সম্মেলনেই দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের যুদ্ধ-পরবর্তীকালে পুনর্গঠনের বিষয়টিকে এক ধরনের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার বিষয় হিসাবে তিনি উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক নির্যাতনের ফলে যে ক্ষতি বাংলাদেশের হয়েছে, সেটির এক ধরনের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা আছে।
আমাদের স্বাধীনতা, স্বকীয়তা এবং আত্মমর্যাদার বিষয়টিকে তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফোকাস করে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য বিশ্বকে আহ্বান জানান।
যার ফলে দাতা দেশ এবং দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটা ভিত্তি তৈরি হয়। পরবর্তীকালে আমরা লক্ষ করেছি, সেনা শাসকরা ক্ষমতায় এসে দেশের আত্মমর্যাদার জায়গাটাকে জলাঞ্জলি দিয়ে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে এক ধরনের নির্ভরশীলতার সম্পর্ক তৈরি করে।
ফলে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর বাংলাদেশের ভেতরে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এক ধরনের ভূমিকা দেখা যায়। বিশেষ করে, বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর কল্যাণ অর্থনীতি বা মিশ্র অর্থনীতির যে বিষয়টি ছিল, সেটি আস্তে আস্তে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়।
১৯৯১-৯২ সালে যেহেতু একটা মুক্তবাজার অর্থনীতির বিকাশ ঘটে, এর পরিপ্রেক্ষিতে দাতা দেশগুলো বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুনভাবে মূল্যায়ন করে। তখনকার সাহায্যের যে ধারাবাহিকতা, সেটি অনেকটা বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে ছিটকে পড়ে।
এটি পূর্ব ইউরোপের নতুনভাবে যে রাষ্ট্রগুলো সমাজতন্ত্র থেকে রেরিয়ে এসেছিল, সেই দিকে চলে যায়। অনেকটা পূর্ব ইউরোপমুখী হয়ে পড়ে। ফলে বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্যের ধারাবাহিকতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। আর এ কারণে বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের ওপর অনেক বেশি জোর দিতে হয়েছিল। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের জিডিপির বিষয়টিতে নিজস্ব অর্থায়নের জায়গাটিতেই জোর দিতে হয়।
নব্বইয়ের দশকে এবং ২০০০-এর শুরুর দিকটাতে আমরা লক্ষ করেছি, তখনকার গণতান্ত্রিক সরকার হিসাবে বিএনপি সেই ঐতিহাসিক দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। অর্থাৎ তারা অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ করে দেশের উন্নয়নের বিষয়টি পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি।
তার পাশাপাশি দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে দরকষাকষির জায়গা থেকেও দেশ অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকার ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে দাতা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কিছুটা দরকষাকষির জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে।
পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করে বাংলাদেশের উন্নয়নে, দাতা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কটাকে একটা শক্তিশালী পর্যায়ে নেওয়ার পুনঃচেষ্টা করে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অন্যান্য খাতে গুরুত্ব দেওয়া, অভ্যন্তরীণ সম্পদকে উন্নয়নের কাজে পুরোপুরি ব্যবহার করা, দাতা দেশগুলোকে অবকাঠামো উন্নয়নে যুক্ত করার জন্য একটা বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাংক একটি অন্যতম দাতাগোষ্ঠী হিসাবে বাংলাদেশকে শুরু থেকেই সহায়তা করে আসছে।
তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়নে যখন পিছিয়ে যায়, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সিদ্ধান্তে সেতুর কাজটিকে নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হয়। চ্যালেঞ্জিং হলেও অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পদ্মা সেতুর কাজটি আজ প্রায় ৯৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়টি দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের আত্মমর্যাদার বিষয়টিকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশে বহুপাক্ষিক দাতাগোষ্ঠী হিসাবে বিশ্বব্যাংক এগিয়ে আছে, আর দ্বিপাক্ষিক দাতা দেশ হিসাবে জাপান বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিচ্ছে। এখনো আমরা দাতা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
তবে সে নির্ভরশীলতার পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমেছে। কারণ সেনা শাসকদের সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটের ৯০ শতাংশ নির্ভর করতে হতো দাতা দেশগুলোর ওপরে। এখন সে নির্ভরশীলতা ৯০ শতাংশ থেকে কমে ১০-১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক। তবে নির্ভরশীলতার পরিবর্তনের পাশাপাশি দাতা দেশগুলোর সাহায্যের ধরনও পালটেছে।
আগে যেমন সাহায্যের ভেতরে অনেক বেশি অনুদান ছিল, অনেক বেশি দেশের কল্যাণের বিষয় ছিল; কিন্তু এখনকার সাহায্যের মধ্যে অনেক বেশি ঋণ যুক্ত হয়েছে। তবে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এক ধরনের সহায়তা করছে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশ দাতা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিকভাবেই বজায় রাখছে এবং সেটি বিশ্বের কাছেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। মজার ব্যাপার হলো, কখনই বাংলাদেশের সঙ্গে দাতা দেশগুলোর সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো ঘাটতি হয়নি; কিন্তু সম্পর্কের ধরনের মধ্যে আত্মমর্যাদা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এ বিষয়গুলো এখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে উঠে এসেছে। অবশ্য দাতা দেশগুলোর মধ্যে এক ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার আগেই সম্পন্ন হয়েছে।
ফলে এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনো তাদের এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে এবং এক ধরনের হস্তক্ষেপ করার মনোবৃত্তিও আছে। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির জন্য বা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দাতা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থবহ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এবং দরকষাকষিমূলক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দাতা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের একটা বড় জায়গা হচ্ছে আর্থিক সহায়তা। সে সহায়তার টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দাতাগোষ্ঠেী যে ধরনের শর্তে সহায়তা করে থাকে, সে শর্তগুলো হ্রাস করা এবং এ শর্তগুলো যেন বাংলাদেশের পক্ষে থাকে সেই চেষ্টা করে যেতে হবে। কেননা যত শর্ত, দেশের জন্য তা তত চ্যালেঞ্জের।
দাতা দেশগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা জানি, বাংলাদেশে অতীতে দাতা দেশগুলোর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য দারিদ্র্যবিমোচন একটা বড় বিষয় ছিল। এখন অবশ্যই দাতা দেশগুলোর কাছে দারিদ্র্যবিমোচন একটা ইস্যু হিসাবে আছে। তবে মূল মনোযোগ আমাদের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার বিষয়টিতে।
বাংলাদেশ যেহেতু একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে, সে কারণে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পলিসি রিফর্মের ক্ষেত্রে দাতা দেশগুলোকে যুক্ত করা উচিত। মাথায় রাখতে হবে, দাতা দেশগুলো তাদের সোর্সগুলো পালটাচ্ছে।
এখন যেমন চীনকে একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে দেখতে হচ্ছে। ভারত বা চীন কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাতা দেশ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। এ দিক থেকে বাংলাদেশের মনোযোগটি থাকবে, তাদের কাছ থেকে সহায়তার যে ধরনটি, সেখানে যেন অনেক কম সুদ যুক্ত থাকে এবং বিভিন্ন শর্ত যেগুলো বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতিকূলে রয়েছে, সেগুলো যেন না থাকে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অবকাঠামোর জায়গা থেকে এসব ফ্যাক্টরগুলোয় যে ধরনের অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে, সেটাকে আরও মজবুত করা।
স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের যে কূটনৈতিক সাফল্য, সেটা অবশ্যই একটি বড় অর্জন। এ সাফল্যের মূল কারিগর হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বিখ্যাত উক্তি সেটা হলো, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’।
১৯৭২ সালে এই যে নীতির কথা তিনি বলেছিলেন এবং একই সঙ্গে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশকে তিনি প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসাবে তৈরি করবেন।’ তার সেই কূটনৈতিক ভিশন বা দূরদৃষ্টি, তার হাত ধরেই বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে ব্যাপকভাবে কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে।
আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পুরো বিষয়টিই ছিল একটা বড় কূটনৈতিক সাফল্য। কারণ তখনকার মুজিবনগর সরকারের যে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা এবং বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ফিরে আসার পরে তিনি যেভাবে কমনওয়েলথ এবং নন এলাইন মুভমেন্ট, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, ওআইসি এবং জাতিসংঘে তিনি ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তা নজিরবিহীন। ১৯৭৩ সালে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে বঙ্গবন্ধু বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে সেখানে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছিল।
শুধু বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে যে সংকট ছিল, সে সংকট সমাধানে বঙ্গবন্ধুর একটা বড় রকমের ভূমিকা ছিল। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করা, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটাকে শুরু করা কূটনৈতিক সাফল্যেরই নামান্তর।
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে ১৩৬তম সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ তার যাত্রা শুরু করে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ লাভ এবং ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সভাপতিত্ব করে অনন্য নজির স্থাপন করে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে সফল।
গত ১০ বছরে আমরা যদি ফিরে আসি, তাহলে কূটনৈতিক সাফল্যের ধারাটি ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হয়েছে। বাংলাদেশের বড় সাফল্য হলো মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে যে সমস্যা ছিল, সেটা আমরা সমাধান করতে পেরেছি। ভারতের সঙ্গে ১৯৭৪ সালের যে সীমান্তচুক্তি সেটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে পেরেছি।
একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে শক্তিশালী করা হয়েছে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। বাংলাদেশের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট অর্থাৎ জ্বালানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রাশিয়া বাংলাদেশকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাহায্য-সহযোগিতা করছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী।
এ মুহূর্তে একটা ভারসাম্যমূলক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশের একদিকে যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, এর পাশাপাশি গ্লোবালি বাংলাদেশ কয়েকটি সেক্টরে লিড দিচ্ছে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত যে কূটনীতি সেখানে বাংলাদেশ এলডিসির ৫৪টি দেশের গ্রুপটিকে বহুবার নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ এককভাবেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে বড় ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রশংসার দাবিদার।
গত ১০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। কারণ বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক যে গুরুত্ব, সে গুরুত্বটি আমরা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পেরেছি। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে নতুন ধরনের ভূ-রাজনৈতিক লড়াই বা প্রতিযোগিতা চলছে। সে প্রতিযোগিতার ফলে এবং বাংলাদেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ফলে বাংলাদেশ এ অঞ্চলে একটি নতুন পরিচিতি লাভ করতে পেরেছে।
করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের অনেক দেশ এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে। সেখানে বাংলাদেশের যে স্লোগান, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়,’ সেই কূটনৈতিক দর্শন বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে। অর্থাৎ সবার সঙ্গে একটা ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা, সেটা বাংলাদেশ করতে পেরেছে। কূটনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে উন্নয়ন ও সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
বাংলাদেশের কূটনীতির মূল সুরটি হচ্ছে উন্নয়নের কাজে এবং শান্তির জন্য কূটনীতিকে ব্যবহার করা। সেই দিক থেকে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ খুবই কম। এ ধারাবাহিকতা বজার রাখতে পারলে আগামী দিনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে-এতে কোনো সন্দেহ নেই।
অনুলিখন : জাকির হোসেন সরকার
ড. দেলোয়ার হোসেন : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়