অগ্রাধিকারভিত্তিক বরাদ্দ দিতে হবে

ড. মোস্তাফিজুর রহমান
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এ বছর যেহেতু কোভিড-১৯-এর কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়, সেহেতু বাজেটে করোনার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের যে গতি তাতে পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা হবে, সেই দিকনির্দেশনা ও বরাদ্দ বাজেটে থাকতে হবে।
এরই মধ্যে আমাদের অর্থনীতির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এসব ক্ষতি পূরণের উদ্যোগ থাকতে হবে। কোভিডের কারণে আমাদের ত্রিমাত্রিক দিক- স্বাস্থ্য, মানবিক ও অর্থনীতি এগুলো বিশেষ বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।
বাজেটে তিনটি খাতে নজর দিতে হয়। সম্পদ আহরণ, বিতরণ ও ব্যবহার- এ তিনটি বিষয়ে বিশেষ জোর দিতে হবে এবার। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কর ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনায় আসবে। ব্যক্তি করের ক্ষেত্রে আড়াই লাখের জায়গায় আমরা সাড়ে তিন লাখ পর্যন্ত করমুক্ত আয় নির্ধারণের কথা বলেছি। ৫ শতাংশ পর্যন্ত কর ছাড় দেয়ার কথা বলছি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ১০ শতাংশের জায়গায় ৫ শতাংশ, ২০ শতাংশের জায়গায় ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলছি। এসব প্রস্তাবের কারণে রাজস্ব আয় কম হবে। কিন্তু সেগুলো কাটিয়ে বেজ বাড়াতে পারলে শক্তিশালী হবে রাজস্বব্যবস্থা।
এছাড়া যেসব সংস্কারের কথা রয়েছে সেগুলো সংস্কার করে ফেলতে হবে। যেমন- প্রত্যক্ষ কর আইনে সংস্কারের আলোচনা পুরনো। এছাড়া এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো- রাজস্ব আহরণের প্রধান প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে ফেলতে হবে। সম্পদ পাচার রোধ করেও সম্পদ আহরণ বাড়ানো যায়। সেদিকে নজর দিতে হবে। শক্তিশালী এনবিআর এক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। এর বাইরে বৈদেশিক সাহায্য দিয়ে সম্পদ আহরণ শক্তিশালী করা যায়। আইএমএফসহ বিভিন্ন খাত থেকে শূন্য বা স্বল্প সুদে ঋণ, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে দান-অনুদান নিয়ে সম্পদ আহরণ শক্তিশালী করার দিকে নজর দিতে হবে। যেমন, সরকার ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ঋণের একটি আলোচনা করছে।
সম্পদ বিতরণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাত, কৃষি খাত ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের দিকে বিশেষ জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। এখানে কেবল বরাদ্দ বড়ালেই হবে না, ১০ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় সক্ষমতাও বাড়ানো দরকার। কারণ অতীতে আমরা অনেক দেখেছি যে, বরাদ্দ দেয়া হয় কিন্তু বরাদ্দের অর্থ খরচ করতে পারে না অনেক খাত। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো, দক্ষ মানবসম্পদ ইত্যাদি দিয়ে যাতে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করা যায়, সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃষি খাতে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে। ফিশারি, লাইভস্টকসহ শ্রমঘন খাতে জোর দিতে হবে। কারণ আমাদের শ্রমবাজারে চাপ আসবে বলে ধারণা করছি। এক্ষেত্রে গ্রামে বরাদ্দ বেশি দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বেশি দরকার সেটি বাছাই করে বরাদ্দ নির্ধারণ করতে হবে। সরকার ৩০০ প্রকল্প বাছাই করেছে, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো বিলম্বে বাস্তবায়ন করা যায় সেগুলো পরে বাস্তবায়নের জন্য রেখে প্রাইভেট সেক্টর ও শ্রমঘন শিল্পে নজর দিতে পারে। যেমন, এবার এনার্জি খাতের কিছু প্রকল্পে বরাদ্দ না দিয়ে প্রয়োজনীয় ও কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে।
শ্রমবাজারে প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ যুক্ত হয়, যার এক-তৃতীয়াংশ বা ৬ লাখের মতো দেশের বাইরে যায়। আগামী অর্থবছরে তারা যেতে পারবে না। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় যাওয়া উচিত।
এটি হতে যাচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রথম বাজেট। এতে ইউনিভার্সাল স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। সামাজিক সুরক্ষায় ক্ষেত্রে এবার বাড়তি নজর দিতে হবে। ক্যাশ ট্রান্সফারের ব্যবস্থা সরকার করেছে। আড়াই হাজার করে টাকা দেয়া হবে ৫০ লাখ মানুষকে।
এতে আড়াই হাজার কোটি টাকা লাগবে। এছাড়া সামাজিক সুরক্ষার কৌশলপত্র অনুযায়ী ব্যয় জিডিপির ৩ শতংশে নিয়ে যেতে হবে, বর্তমানে যেটি ১ দশমিক ৭ শতাংশে আছে। সর্বোপরি, কোভিডের কারণে ক্ষতিকে বিবেচনায় নিয়ে বাজেটের বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সময়মতো সুশাসনের সঙ্গে, বিশেষত আইএমইডি’র শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পর্যবেক্ষণসহ বাজেটের বাস্তবায়ন করতে হবে।
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান : সম্মানীয় ফেলো, সিপিডি