এত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে কী হবে?
ড. মাহবুবুর রহমান লিটু ও আরিফুর রহমান
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২০, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা যেন অনেকটা গহিন অরণ্যে অন্ধকারাচ্ছন্ন অপার্থিব আহ্বানে পথ হারানো পথিকের মতো কোনোরূপে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে।
কিন্তু এ এগিয়ে চলার বন্ধুর পথে রয়েছে ভ্রান্তনীতির ছোঁয়ায় অনিশ্চিত দোদুল্যমানতা। একদিকে চলছে উচ্চশিক্ষার অপরিকল্পিত প্রসার, অন্যদিকে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে স্থান নিয়ে তুমুল সমালোচনা।
শিক্ষাবিজ্ঞানের মৌলিক তাত্ত্বিক লেন্সের সাহায্যে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতিকে অবলোকন করলে নানাবিধ অপচর্চা সহজেই পরিদৃষ্ট হয়, তা যেন নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টির বাইরেই থেকে যায়। উচ্চশিক্ষার অপরিকল্পিত প্রসার, বিশেষ করে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিয়ন পর্যায়ের কলেজেও সম্মান বা মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্স প্রবর্তন, স্বায়ত্তশাসনে বাধা, শিক্ষার্থী নির্বাচন এবং কোর্স কারিকুলাম নির্ধারণের মতো মৌলিক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, বিভিন্ন বিষয়ে বাহ্যিক প্রেসক্রিপশনের কারণে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা যেন আজ লক্ষ্য হারিয়ে ফেলেছে। উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যটা নির্দিষ্ট না হলে সফলতার মুখ দেখা কঠিন। বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন লোক তৈরির একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচিত। তার মতে, রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে দুটি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমত, কতগুলো বৃত্তি বা পেশার জন্য পুরুষ ও নারীদের শিক্ষা দিয়ে তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, আশু কোনো কিছু লাভের সম্মুখে না রেখেও উচ্চ স্তরের জ্ঞান অর্জনের ও গবেষণার সুযোগদান করা। সার্বিকভাবেই রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সেই ধরনের শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়ন করবে, যারা অধ্যয়ন শেষে কতিপয় পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের মাধ্যমে জাতিকে সেবা দেবে। অপরদিকে যাদের এমন বিশেষ যোগ্যতা আছে, যার দ্বারা তারা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে সমাজকে মূল্যবান কিছু দান করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় কী হচ্ছে? অধিক হারে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষকে সম্মান বা মাস্টার ডিগ্রি প্রদান করে শিক্ষিত বেকারে পরিণত করা হচ্ছে। সম্মান ডিগ্রিপ্রাপ্তির মাধ্যমে যে ব্যক্তি সম্মানিত, সে প্যান্ট উঠিয়ে ক্ষেতে নেমে কৃষিকাজ বা হালচাষ করতে সংকোচ বোধ করে। এখানে হুমায়ূন আহমেদের বহুব্রীহি নাটকের বিখ্যাত উক্তিটি প্রযোজ্য, ‘মামা! সৈয়দ বংশের পোলা না, চুরি করতে পারি; কিন্তু রিকশা চালাতে পারি না। সাবাই দেখবে এটা লজ্জার।’ এ রকম অনেক উচ্চমানসিকতার মাস্টার ডিগ্রিধারী বেকার তৈরি করে জাতিকে পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে।
একদিকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার ক্রমবৃদ্ধি আর অন্যদিকে শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। অথচ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চশিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন অধ্যাদেশ যেমন জারি করেছিলেন, তেমনি সার্বিক তদারকির জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। সেই সময়টায় এ দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। উচ্চশিক্ষার মানের উন্নয়ন ঘটেছিল; কিন্তু আজ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তার আপন গতি হারিয়ে ফেলেছে। উচ্চশিক্ষার মান ক্রমাগত নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে। বঙ্গবন্ধুর আমলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ছয়টি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। আর আজ আমরা দেখি, উনপঞ্চাশটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যার মধ্যে আঠারোটি বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিগত দশ বছরে। এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় দশ বছর আগে যেখানে একান্নটি ছিল, তা বর্তমানে একশ’ তিনটিতে দাঁড়িয়েছে; যেগুলোতে সাড়ে তিন লাখেরও বেশ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে কলেজের সংখ্যা দুই হাজার দুইশ উনপঞ্চাশটি, যেখানে আটাশ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। তাছাড়া বিশেষায়িত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বেশকিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রয়েছে হাজারের ওপর ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা। চল্লিশ লাখের মতো শিক্ষার্থী আমাদের দেশে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে লেখাপড়া করছে, যা ইউরোপের অনেক উন্নত দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। সরকার জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছে। যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো ভীষণ এক কৃতিত্বের ব্যাপার। এটিকে তখনই কৃতিত্বের ব্যাপার বলা যেত যদি বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নত হতো এবং এগুলো যদি বিশ্ব র্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিতে পারত। আমরা এর ধারেকাছেও যেতে পারছি না। এগুলোর উন্নয়ন না ঘটিয়ে নতুন নতুন আরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না। এটা বোঝার পরও ইউজিসি যখন উচ্চশিক্ষায় তাদের অর্জন সংক্রান্ত রিপোর্টে প্রধান অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধিকে দেখায়, তখন অবাক না হয়ে পারি না। বিশ্বে যেখানে উচ্চশিক্ষা সীমিত, সেখানে আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষাকে সহজলভ্য করে তোলা হয়েছে। আমেরিকার মতো বিশাল দেশে যেখানে সর্বসাকুল্যে পাঁচশ’র মতো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে আছে আড়াই হাজারের বেশি। আমেরিকার উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো র্যাংকিংয়ে সামনের দিকে থাকলেও আমাদের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো র্যাংকিংয়ের একেবারে শেষের দিকে মুখ লুকিয়ে অবস্থান করছে। বরং এত বিশ্ববিদ্যালয় না প্রতিষ্ঠা করে যদি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা হতো, তাহলে ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছার স্বপ্নপূরণ হওয়ার পথে আরও বেশি করে এগিয়ে যেতাম। তাই এত বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে বলে খুশিতে ঠগমগ হওয়ার কিছু নেই। বরং উচ্চশিক্ষার উচ্চফলন দীর্ঘমেয়াদে আমাদের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠবে, সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
শিক্ষাবিজ্ঞানীরা সব সময় শিক্ষায় বিনিয়োগ তথা রেট অব রিটার্নের কথা বলেন। উচ্চশিক্ষার সংখ্যাগত প্রবৃদ্ধি হলেও গুণগত মানের যদি উন্নয়ন ঘটানো না যায় তবে আমরা যে শিক্ষায় রেট অব রিটার্নের কথা সর্বদা বলে থাকি, তার সব হিসাব উল্টে যাবে। বেনজামিন গিনসবার্গের মতো কয়েকজন তাত্ত্বিক যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার বুদ্বুদ নামের একটি তত্ত্ব দিয়েছিলেন, যেখানে তারা দেখিয়েছিলেন যে উচ্চশিক্ষায় যদি কোনো দেশ গুণগতমানের নিশ্চয়তা বিধান ছাড়া বেশি ব্যয় করে কিংবা তথাকথিত উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তবে তা দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের জন্য ভয়ের কারণ হতে বাধ্য। আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যার প্রবৃদ্ধি সেই আশঙ্কারই প্রতিধ্বনি। যখন একজন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীকে অফিস সহায়ক তথা পিয়নের পদে আবেদন করতে দেখি, তখন খুবই ব্যথিত হই। বিভিন্ন অফিস পরিচালনার জন্য এ পদে লোক দরকার হয় এবং এর জন্য অষ্টম শ্রেণি পাসই যথেষ্ট; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ থেকে পাস করা ছাত্ররা যখন সেই পদে আবেদন করে, তখন উচ্চশিক্ষার গলদটা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। যেভাবে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ছে, এভাবে যদি আমরা উচ্চশিক্ষিতের বাম্পার ফলন ঘটাই; কিন্তু তাদের কর্মের নিশ্চয়তা দিতে না পারি তবে এ উচ্চশিক্ষিতরাই সমাজের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে। সামাজিক নৈরাজ্য থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে দেশের উন্নয়নের গতিকে থমকে দিতে শিক্ষিত বেকার শ্রেণিই যথেষ্ট।
রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা দিতে গিয়ে বলেছিলেন- যেখানে বিদ্যা উৎপন্ন হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হল জ্ঞানচর্চার জায়গা। এখানে যুক্তি, তর্ক ও গবেষণার মধ্য দিয়ে নতুন তত্ত্ব-তথ্য, নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হয়। প্রচলিত জ্ঞানকে ভিত্তি করে নতুন নতুন জ্ঞান কিংবা উদ্ভাবনই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ। অথচ আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণার অবস্থা শোচনীয়। এর জন্য অর্থাভাবকেই সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়। শুধু গবেষণায়ই নয়, একাডেমিক কাজেও লেজেগোবরে অবস্থা। আমরা যদি আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা দেখি, তাহলেই বুঝতে পারি সেগুলো চলছে অনেকটাই জোড়াতালি দিয়ে। পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। লাইব্রেরিতে বই নেই। পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই। বরং আছে আবাসনের তীব্র সংকট। আছে অতিমাত্রায় রাজনীতিকীকরণ। হাজারও সমস্যায় জর্জরিত আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব র্যাকিংয়ে হাজারের তালিকায়ও আসতে পারছে না। মূল কারণ- অর্থাভাব ও সদিচ্ছা। জেলায় জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর অবস্থা তো সবদিক থেকেই নাজুক। অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষা প্রশাসকদের অনিয়ম-দুর্নীতির মহোৎসবে বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটির মানমর্যাদাই ধুলোয় লুটোচ্ছে। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না প্রতিষ্ঠা করে যদি বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া হতো তবে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানের উন্নয়ন ঘটত। আমরাও বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে এগিয়ে যেতাম।
আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে আছে তীব্র সমালোচনা। ইউরোপের অক্সফোর্ড, কেমব্রিজের মতো, আমেরিকার হার্ভার্ড, প্রিন্সটনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারি হলেও এগুলোর মূল লক্ষ্য কখনোই বাণিজ্য নয়। অথচ আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল লক্ষ্যই বাণিজ্য। হাতেগোনা দু-একটি ছাড়া বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অযৌক্তিকভাবে ইচ্ছামতো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এগুলোয় টিউশন ফি, সেশন চার্জ, ডোনেশনসহ অন্যান্য চার্জ ধরা হয় স্বাভাবিকতার কয়েকগুণ বেশি। অথচ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণ, গবেষণাগার, লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, যোগ্য শিক্ষক প্রভৃতির বড়ই অভাব বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে কোনো ধরনের নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই ভাড়া করা ছোট্ট বাসায় কবুতরের খোপের মতো কক্ষে, ঘিঞ্জি পরিবেশে যত্রতত্র গড়ে উঠছে নিজস্ব ক্যাম্পাসহীন মুনাফাকেন্দ্রিক বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার পরিবর্তে সার্টিফিকেট বাণিজ্যই এখানে প্রধান। ফলে গড়ে উঠছে একধরনের ফ্যাশনসচেতন ফাঁপা প্রজন্ম, যারা পিতার কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যয় করে নাক-মুখ ভেংচিয়ে বাংলিশধর্মী দু-একটি কথা বলতে পেরে গর্বে বুক ফুলিয়ে চলে আর টাকায় পাওয়া সার্টিফিকেট নিয়ে শিক্ষিত বেকার অভিধায় হয়ে উঠছে দেশের বোঝা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার, যা ইউজিসি করতে পারছে না। এজন্য ইউজিসি তাদের লোকবলের ঘাটতির দোহাই দিয়ে আসছে। তাহলে কেন ক্রমাগত নতুন নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি-বেসরকারি কলেজের অবস্থা তো ভীষণ নাজুক। এদের মূল কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘরে ঘরে স্নাতক তৈরি করা। অবকাঠামোর দুর্বলতা তো ভয়াবহ। নিয়মিত ক্লাস হয় না। বেশির ভাগ কলেজেই নেই যোগ্য শিক্ষক। দায়সারা গোছের ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কলেজের কাজ। দুর্নীতি আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার এক মহাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেশনজট কমাতে গিয়ে সিলেবাসের অর্ধেক শেষ না করেই নিয়ে নিচ্ছে পরীক্ষা। না পড়ে কিংবা নকলের মাধ্যমে অতি সহজেই শিক্ষার্থীরা অর্জন করছে সার্টিফিকেট। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইনকোর্স পরীক্ষা ও ক্লাসের উপস্থিতির নম্বর সিস্টেম উঠিয়ে দেয়ার সংবাদ দেখলাম। এমনিতেই ছেলেমেয়েরা মাঝে মাঝে নামকাওয়াস্তে কলেজে যেত পরীক্ষা ও নম্বরের কথা চিন্তা করে। এখন তো তাদের পোয়াবারো। এর চেয়ে চার বছরের ভর্তি ফি একবারে নিয়ে সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেই তো হয়! যেভাবে নতুন নতুন কলেজ গড়ে উঠছে এবং যেভাবে ভূরি ভূরি স্নাতক বের হচ্ছে, তাতে এ দেশে একজনও সার্টিফিকেটহীন থাকবে না- এমনটাই অনুমেয়। এ উচ্চশিক্ষিত জাতির কোনো দরকার আছে কি? আদৌ এতে লাভ হচ্ছে কি?
ড. মাহবুবুর রহমান লিটু : চেয়ারম্যান, বিশেষ শিক্ষা বিভাগ, আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরিফুর রহমান : প্রভাষক, আইইআর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়